জৈন্তাপুরে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় চলছে চেরাকারবার

নাজমুল ইসলাম, জৈন্তাপুর;
  • প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২১, ৯:৪৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৩ বছর আগে

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার সীমান্ত পথ সহ সিলেট-তামাবিল হাইওয়ে সড়ক নিয়ন্ত্রন করছে চোরাকাবারী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সোর্সম্যান। অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ভারতীয় গরু-মহিষ, বিড়ি-সিগারেট, মদ-মাদকজাত দ্রব্য, ইয়াবা, ফেন্সিড্রিল, মোবাইল হ্যান্ডসেট, মটর সাইকেল, টাটা গাড়ীর পার্স, টায়ার, টিউব, ভারতীয় শাড়ী ও কসমেট্রিক্স ও বিস্কুট সামগ্রী। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সিলেট-তামাবিল মহা সড়কের জাফলং টু হরিপুর, কানাইঘাট টু হরিপুর, গোয়াইনঘাট টু হরিপুর, জৈন্তাপুর টু হরিপুর, লালাখাল টু হরিপুর সড়ক নিয়ন্ত্রন করেন চেরাকারবারী ও সংশ্লিষ্ট বাহিনীর নিয়োজিত সোর্সম্যানরা।

রাস্তায় রোগী সহ জরুরী চলাচলকারী জনসাধারণ ভয় আত্মংক নিয়ে চলাচল করছে। আইন থাকলেও টাকার বিনিময়ে আইনের সটিক প্রয়োগ নেই। চোরাকারবার সংশ্লিষ্ট কাছে ব্যবহার করা হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ডিআই ট্রাক, বড়-ছোট কাভার্ড ব্যান এবং টোকন পরিচালিত সিএনজি অটো রিক্সা। বেপরোয়া গতির গাড়ী চালনার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা।

মৃত্যু সহ পুঙ্গত্ববরণ করছে রোডে চলাচলকারী সাধারণ জনতা। শ্রমিকের বাঁচার দোহাই দিয়ে চোরাকারবারী ও প্রশাসনের কিছু সংখ্যাকসদস্যরা অঙ্গুল ফুলে কলাগাছ পরিনত হচ্ছে। কিন্তু শ্রমিক, শ্রমিকই থাকছে হচ্ছে না তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন।

সরেজমিনে সীমান্ত এলাকাঘুরে দেখা গেছে উপজেলার নলজুরী, খাসীহাওর, খাঁসি নদী, মোকামবাড়ী, আলুবাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, আর্দশগ্রাম, ছাগল খাউরী, মিনাটিলা, রাবার বাগান, সুপারীবাগান, কাটালবাড়ী, কেন্দ্রী, কেন্দ্রী হাওর, ডিবিরহাওর (আসামপাড়া), ফুলবাড়ী, ঘিলাতৈল, টিপরাখলা, কমলাবাড়ী, ভিতরগোল, গোয়াবাড়ী, হর্নি, বাইরাখেল, মাঝেরবিল, কালিঞ্জিবাড়ী, নয়াগ্রাম, সারীনদীর উৎসমূখ, লাল মিয়ার টিলা, বাঘছড়া, আফিফানগর, জঙ্গীবিল, ইয়াংরাজা, বালিদাঁড়া এবং সিঙ্গারিরপাড় এলাকা দিয়ে চোরাকারবারী সিন্ডিকেট দলের সদস্যরা দিন রাত সমান ভাবে ভারত হতে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে ভারতীয় গরু-মহিষ, বিড়ি-সিগারেট, মদ-মাদকজাত দ্রব্য, মোবাইল হ্যান্ড সেট, মটর সাইকেল, টাটা গাড়ীর পার্স, টায়ার টিউব, ভারতীয় শাড়ী ও কসমেট্রিক্স ও বিস্কুট সামগ্রী। এসব সীমান্ত দিয়ে মালামাল আদান প্রদান করতে হলে সোর্সম্যানদের মাধ্যমে মাটরশুটির বস্তা প্রতি তিনটি ধাপে ২শত ২০টাকা, গরু প্রতি ১হাজার ৫শত টাকা, মহিষ প্রতি ২হাজার টাকা, বিভিন্ন প্রকার সিগারেট ও বিড়ি প্রতি কাটুন (কিট) ৫শত টাকা, কসমেট্রিক্স কিট প্রতি ৫শত টাকা, মোবাইল হ্যান্ডসেট কিট প্রতি ৫হাজার টাকা, মটরসাইকেল প্রতি তিনটি ধাপে ১০হাজার টাকা, অন্যান্য সমাগ্রী আলোচনা স্বাপেক্ষে বাহিনীর নিয়োজিত সোর্সম্যানেরা আদায় করছেন।

প্রতিদিনের হিসাব সংশ্লিষ্ট বাহিনীর নিকট সন্ধ্যা হতে রাত ১১টার মধ্যে পরিশোধ করা হয়ে থাকে অন্যথায় পণ্য আদান প্রদানের অনুমতি পাওয়া যায় না। সংশ্লিষ্ট বাহিনীর মামলার (সিজার) দেখানোর জন্য কিছু সংখ্যাক মালামাল ও গরু-মহিষ দিতে হয়। সব মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর ছত্র-ছায়ায় জৈন্তাপুর সীমান্ত জুড়ে চলছে নির্বিচারে চোরাকারবার।

এসব মালামাল পরিবহনের সময় সীমান্তের বিভিন্ন রোড দিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা তার মধ্যে মৃত্যু সহ পুঙ্গত্ব বরণ করছে অনেকেই। বিগত ২৭ ফেব্রুয়ারী সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুর ষ্টেশন বাজার এলাকার ভিআইপি হোটেলের সম্মুখে মটরশুটি বোঝাই ডিআই ট্রাকের ধাক্কায় গুরত্বর আহত হয় জাকির নামে টগবগে যুবক। পরে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে।

গত ১লা মার্চ গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে র‌্যাব-৯ একটি আভিযানিক দল লালাখাল হতে ভারতীয় মাদক ও সিগারেট বোঝাই ডিআই ট্রাক ধাওয়া করলে সিলেট তামাবিল মহাসড়কের হেমু ব্রীজ এলাকায় সিলেট-তামাবিল মাহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সায় ধাক্কা দিয়ে হেমু রাস্তা ধরে পালিয়ে যায়। এঘটনায় সিএনজি চালক সহ ৩যাত্রী গুরুতর আহত হন, ক্ষতিগ্রস্ত হয় সিএনজি অটোরিক্সা।

৬মার্চ ভোর সাড়ে ৫টায় লালাখাল নাজিমগড় রির্সোটের সম্মুখ হতে ভারতীয় গরু বোঝাই ২টি ডিআই ট্রাক তীব্রগতিতে পৌছাতে গিয়ে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের হেমু তিনপাড়া নির্মাণাধীণ মার্কেটের সম্মুখে সংর্ঘষের ঘটে ফলে চালকরা আহত হয়। রাস্তার পাশে ডিআই ট্রাক গুলো উল্টে যায়। গত ১১মার্চ জাফলং বাজার হতে ১২০ বস্তা ভারতীয় চাইল বোঝাই একটি ট্রাক দরবস্ত বাজার এলাকায় পৌছালে জৈন্তাপুর মডেল থানা পুলিশ আটক করে এবং চালক সহ দুইজনকে আটক করে। এঘাটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে সারাদিন চাইল বোঝাই ট্রাক গেলেও পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। লাইনের টাকা পরিশোধ না করায় পুলিশ কৌশলে তাদের গাড়ী আটক করে।

এঘটনায় চালক শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুপুর ১টায় দরবস্ত বাজারে সিলেট তামাবিল মহাসড়ক অবরোধ করে। অবরোধ করার পর দীর্ঘ ১০ঘন্টা পর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সহ ইউপি চেয়ারম্যানগন আটককৃতদের আইনি সহায়তায় ফিরত আনার আশ্বাস দিলে রাত ১০টায় সড়কের অবরোধ তুলেন। ফলে সিলেট-জাফলং, সিলেট-কানাইঘাট ও সিলেট-গোয়াইনঘাট রোড়ের যাত্রী সাধারণ, পর্যটক, রোগী, মালবাহী ট্রাক আটকা পড়ে চরম ভোগান্তির স্বীকার হয়।

বিগত ৬মাস হতে জৈন্তাপুর উপজেলা হয়ে উঠেছে চোরাচালানের নিরাপদ রুট। রাত হলেই এই রুট গুলো চোরাকারবারীদের দাপটে আতঙ্কের রোড পরিনত হয়ে উঠে সাধারণ জনগন জরুরী প্রয়োজনে কিংবা রোগীবহন করতে আতংঙ্কে চলাচল করতে হয়।

সচেতন মহল জানান, অতিতে জৈন্তাপুর উপজেলা সহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী উপজেলা গুলোতে কমবেশি চোরাকারবার হয়েছে আর হচ্ছে। অতি সম্প্রতি জৈন্তাপুর উপজেলায় যে ভাবে খোলামেলা চোরাকারবার হচ্ছে তাতে জনগন আতংঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজেসে উপজেলা জুড়ে চোরাচালানের স্বর্গ রাজ্যে পরিনত হয়ে উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সদস্যদের ফোন করে তথ্য দিলেও কোন কাজ হচ্ছে না। তাদের দাবী সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, সিলেটের ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশার, বিজিবির উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গোপন ও প্রকাশ্যে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মহসিন আলীর নাম্বারে একাধিক বার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এবিষয়ে জানতে ১৯বিজিবির লালাখাল ক্যাম্পে (০১৭৬৯৬১৩১১৯) ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানান পর নেটওয়ার্ক কথা শুনা যাচ্ছে না বলে রেখে দেন। পরে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ হয়নি।

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কামাল আহমদ বলেন, মাদক মুক্ত ও চেরাচালান মুক্ত সুন্দর জৈন্তাপুর চাই।

 

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি