সিলেটে কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে বন্যার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক;
  • প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২৩, ৭:১৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১১ মাস আগে

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে টানা ভারী বৃষ্টিপাতে কয়কেটি ভোট কেন্দ্র পানিতে তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা । কয়কে দিনের টানা বৃষ্টির কারণে নগরের অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। প্রতিনিয়ত সুরমার পানি বাড়তেথোকায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

পূণ্যভূমি সিলেটের ভোটের আমেজ বৃষ্টিতে ভাটা পড়েছে। এ অবস্থায় ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু ইতোমধ্যে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় এসব কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা অবস্থান করছেন সিলেটে। তাঁরাও শঙ্কিত টানা এই বৃষ্টি নিয়ে। বন্যায় ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র পরির্বতনের ইঙ্গিত।

মোট ১৯০ টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এরমধ্যে ৫/৬টি কেন্দ্রে সোমবার পানি ঢুকে পড়ে। কয়েকটি ভোটকেন্দ্রের মাঠে জলবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় আরো কয়েকটি কেন্দ্র তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

সোমবার দুপুরে সিলেট নগরের ভার্তখলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার নছিবা খাতুন উচ্চবালিকা বিদ্যালয় ও পাশ্ববর্তী আরেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়গুলো শ্রেণিকক্ষের ভেতরেও পানি ঢুকে পড়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে কুমারগাও এলাকার মইয়াচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও। এই তিনটি বিদ্যালয়কেই সিটি নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী। কাউন্সিলর পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাসও আছে।

সিলেটে ১৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সিটি নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি নগরের ৩৫ নং ওয়ার্ডের সৈয়দ জাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র। গত ১৪ জুনের টানা বৃষ্টিতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যায়। যদিও কয়েক ঘন্টার পরই এই পানি নেমে গেছে।
ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভারি বৃষ্টিতে পানি উঠে যেতে পারে। কিছু বাড়িঘর প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক।

নগরের ৩৮ নং ওয়ার্ডের নয়া খুরুমখলা, পীরপুর, তালুকদারপাড়া, মইয়ারচর, টুকেরগাঁও ও গৌরীপুর এলাকার সাতজন ভোটার বলেন, আমরা উন্নয়ন বঞ্চিত। সিটি করপোরেশনের সবধরণের কর আমরা পরিশোধ করছি। বিনমিয়ে কোন উন্নয়ন পাইনি। এবার আমাদের সুযোগ এসেছে পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করার। স্বপ্ন দেখছি অবহেলিত এই অঞ্চল আলোকিত করার। কিন্তু কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে চরম জলাবন্ধতা দেখা দিয়েছে। এবার ভোট দেওয়া নিয়েও মনে শঙ্কা কাজ করছে।

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, সিলেটের প্রধান দুই নদী সরমা ও কুশিয়ারা। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরম নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয় ১৩.২৬ সেন্টিমিটার।
সুরমা নদীর সিলেট সদর পয়েন্টেও পানি বেড়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পানি রেকর্ড কার হয়েছে ১০.৩৫ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টের বিপদসীমা হচ্ছে ১০.৮০ সি.মি।

বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে জানিয়ে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, আগামী কয়েক দিনে ১ হাজার ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে সিলেট জেলায়। ফলে সিলেটে বন্যা হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা হলে এর ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় আমরা আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছি।

পানি উঠে যাওয়ায় এসব কেন্দ্রে কীভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে জানতে চাইলে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, সিলেটে টানা ৫/৬ দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে কয়েকটি কেন্দ্রের মাঠে পানি উঠেছে। তবে কোনো কেন্দ্রের ভেতরে পানি প্রবেশের খবর পাওয়া যায়নি। আজকেও আমাদের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তাগণ সবগুলো কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, যেসব কেন্দ্রের মাঠে পানি প্রবেশ করেছে সেগুলোর পানি নিষ্কাষণ করে বালি ফেলে ভোটারদের দাঁড়ানোর উপযোগী করতে সিটি করপোরেশনকে বলেছি। তারা এব্যাপারে কাজ করবেন।

ফয়সল কাদের বলেন, আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। মঙ্গলবার (২০ জুন) সকাল ১১ টা থেকে আবুল মাল আবদুল মুহিত কমপ্লেক্স হতে কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হবে। আর সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ আজকেই শেষ হবে। মোট ১৯০ টি কেন্দের ১৩৬৭ টি কক্ষ ও কক্ষের আশপাশে ১৬শ’র অধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১১২ মিলিমিটার বষ্টি হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে দপুর ১২ টা পর্যন্ত ১১১.২ মিলিমিটার বষ্টিপাত হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ, সহকারি আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন মঙ্গলবার ও বৃধবার দুদিনই সিলেটেন বৃষ্টি হওয়ার পূর্বভাস রয়েছে।

এদিকে নির্বাচনে মোট কেন্দ্র থাকছে ১৯০টি। যেখানে স্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ১ হাজার ৩৬৭টি এবং অস্থায়ী ভোটকক্ষ থাকবে ৯৫ টি। সবগুলো কেন্দ্রেই থাকছে সিসি ক্যামেরা। ঢাকা থেকে সবগুলো কেন্দ্র সিসিটিভির মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করবে নির্বাচন কমিশন।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি