উচ্ছেদ হবে অবৈধ স্ট্যান্ড : ঐক্যবদ্ধ সিলেটের নাগরিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১২:১৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৩ বছর আগে

সিলেট নগরীতে অবৈধ সকল স্ট্যান্ড উচ্ছেদে ঐক্যবদ্ধ নগরবাসী। যে কোন মূল্যে অবৈধ স্ট্যান্ডগুলো উচ্ছেদ করার পক্ষে মত দিয়ে হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। একই সাথে প্রাইভেটভাবে পারমিট নিয়ে ভাড়ায় চালানো এসব গাড়ির মালিকদের ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পক্ষে মত দেন তারা।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সাথে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সকলে এমন মত দেন।

সন্ধ্যা ৭ টায় নগরভবনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ‘নগরীর চৌহাট্টায় সড়ক প্রশস্তকরণ, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ কাজে পরিবহণ শ্রমিকদের বাধাদানসহ সিসিক মেয়র ও সিসিকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর শ্রমিকদের হামলার ঘটনায়’ নগরীর সকল অবৈধ স্ট্যান্ড যে কোন মূল্যে উচ্ছেদ করার পক্ষে মত দিয়ে সবরকম সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সাথে নগরপিতার উপর এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।’

এসময় শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের ব্যাবারে এক প্রশ্নের জবাবে সকলে ধর্মঘটকে প্রত্যাখ্যানসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন উপস্থিত সকলে। একই সাথে চৌহাট্টায় হামলার ঘটনায় মামলা করা ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের জন্য দাবি জানান।

মতবিনিময় সভায় নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রাইভেট গাড়ি কীভাবে ভাড়ায় চলতে পারে সে ব্যাপারেও উপস্থিত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়।

মতবিনিময় সভার শুরুতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বলেন, ‘সকাল থেকে প্রথমে শ্রমিকরা সিসিকের কাজে সহযোগিতা করলেও বিপত্তি ঘটান আবুল নামের এক শ্রমিক নেতা। তিনি নিজেকে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দাবি করেছেন। তিনি এসে প্রথমে শ্রমিকদের গাড়ি পার্ক করে রাখার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের সাথে আমি যোগাযোগ করলে সংশ্লিষ্ট সকলে এসে শ্রমিকদের জায়গাটি আপাতত ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা কোন কথায় রাজি না হয়ে দুনিয়ার মজদুর এক হও শ্লোগান দিয়ে হামলা শুরু করেন।’

মতবিনিময় সভায় মেয়র দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘শ্রমিকরা হামলা করে পুলিশ সদস্যসহ সিসিকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আহত করেছে।’

মতবিনিময়কালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী নেতা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

মতবিনিময় সভা থেকে উপস্থিত সকলে নগরপিতার উপর এমন হামলার ঘটনায় নিন্দা প্রস্তাব করেন। এসময় সিসিকের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের প্রশংসার পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে সমালোচনাও করা হয়।

এর আগে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা এলাকায় অবৈধ মাইক্রোবাস স্ট্যান্ড উচ্ছেদকালে পরিবহন শ্রমিক ও সিটি কর্পোরেশন কর্মিদের মধ্যে ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় অন্তত অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে।

নগর কর্তৃপক্ষ জানায় সিলেট সার্কিট হাউজ-বিমানবন্দর সড়ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন থেকে চৌহাট্টা এলাকা থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে পরিবহন শ্রমিকদের অনুরোধ জানানো হয়। এতে কর্নপাত না করে উল্টো তাদেরকে স্ট্যান্ডের জায়গা দিতে প্রশাসন ও নগর কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানায় পরিবহন নেতারা।

সকালে সিটির শ্রমিকরা রাস্তা সম্প্রসারণ কাজে আসলে পরিবহন শ্রমিক নেতারা এতে বাধা দেন। সেই সাথে অবরোধ করে রাখে চৌহাট্টা আম্বরখানা সড়ক। পরে পুলিশ ও সিটি মেয়র এসেও পরিবহন শ্রমিকদেরকে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তারা সাড়া দেয়নি।

এ অবস্থায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পরিবহন শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে মেয়রের দিকে তেড়ে আসলে সংঘর্ষ বাধে। বেশ কিছু সময় ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের পর পিছু হটে পরিবহন শ্রমিকরা।

এদিকে চৌহাট্টা মাইক্রোবাস শ্রমিকনেতা আলী আকবর রাজন দাবি করেন, ‘আমরা সরে যেতে রাজি। কিন্তু অন্য কোথাও আমাদের গাড়িগুলো রাখার জন্য কিছু জায়গা দেয়া হলে আমরা সরে যাবো’।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা বিকেল আড়াইটার দিকে সিলেটের বিভিন্ন সড়কে বাস-মাইক্রোবাস রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেন। এরমধ্যে সিলেটের চণ্ডিপুল, হুমায়ূন রশীদ চত্বর, ইসলামপুর, মদিনা মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ করেন শ্রমিকরা।

পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দক্ষিণ সুরমা থানায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পরিবহণ মালিক শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে নানা আলোচনা শেষে বিকেল ৪ টায় অবরোধ তুলে নেয়ার কথা জানান।

 

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি