কানাইঘাটে ভাই-ভাতিজাদের হামলায় নিহত ৩ ভাই, শোকে স্তব্ধ পরিবার

কানাইঘাট প্রতিনিধি;
  • প্রকাশিত: ৬ মে ২০২৪, ১২:০৭ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২ সপ্তাহ আগে

সিলেটের কানাইঘাটের বড়চতুল ইউনিয়নের হারাতৈল মাঝবড়াই গ্রামের মসজিদের বিরোধের জের ধরে আপন ভাই-ভাতিজাদের হামলায় এক এক করে ৩ ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় শোকে স্তব্ধ পরিবার। নিহতদের ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনদের কান্না যেন থামছে না। ৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় শোকে পাথর হয়ে গেছেন পরিবারের সদস্যরা।

আপন ভাই-ভাতিজাদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পর্যায়ক্রমে ৩ ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকার মানুষ স্তব্ধ হয়ে গেছেন।

কানাইঘাট থানা পুলিশ ত্রিপল হত্যাকান্ডের ৪ আসামীকে গ্রেফতার করলেও হত্যাকান্ডের মুলহুতা আনসার সদস্য আলমাছ উদ্দিনসহ অপর আসামীরা এখন পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়ায় নিহতদের পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা এমন পৈশাচিক নির্মম ত্রিপল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সকল আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছেন এলাকার সর্বস্তরের লোকজন।

তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার ওসি (তদন্ত) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেছেন, এ পর্যন্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শীগ্রই মামলার অপর আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে, কেউ ছাড় পাবে না।

স্থানীয়রা জানান, হারাতৈল মাঝবড়াই গ্রামের মৃত আছদ আলীর ৭ ছেলে। তার মধ্যে সমছুল হক পিতার বসত বাড়ি ছেড়ে হারাতৈল মাঝবড়াই জামে মসজিদের পাশে আলাদা বাড়ি করে সেখানে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। গ্রামের জামে মসজিদের সীমানার জায়গার মাপযোগ নিয়ে সমছুল হকের সাথে গ্রামের অনেকের ও তার আপন ছোট ভাই সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীনের বিরোধ দেখা দেয়। উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি দরখাস্ত দায়ের করে। এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে এজন্য থানা পুলিশ দু’পক্ষের বিরুদ্ধে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আদালতে প্রসিকিউশন দেন। কিন্তু তারপরও মসজিদের সীমানার জায়গা সনাক্ত নিয়ে বিরোধ থামেনি।

এর জের ধরে গত ২২ এপ্রিল সকাল ১১টায় মসজিদের ইমাম থাকার পাকা ঘর নির্মাণের জন্য মসজিদে সীমানা চিহ্নিত করতে গ্রামবাসী অনেকের সাথে সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন একমত পোষন করেন। এতে মসজিদের পাশে বসবাসরত তার আপন বড় ভাই সমছুল হক ও ভাতিজা আলমাছ উদ্দিন, কামাল আহমদ, সুহেল আহমদ, রুহুল আহমদ গংরা জয়নাল আবেদীনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তারা বাড়িতে এসে ভাই ও ভাতিজারা জয়নাল আবেদীনকে ডাকাডাকি শুরু করে হামলা করার জন্য। জয়নাল আবেদীন ঐ দিন বিকেল ২টায় ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদের পূর্ব পাশের রাস্তায় যাওয়া মাত্র পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভাই সমছুল হক ও ভাতিজা আলমাছ উদ্দিন গংরা জয়নাল আবেদীনের উপর অকর্তিক হামলা চারিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে জয়নাল আবেদীনকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। জয়নাল আবেদীনকে প্রাণে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে অপর বড় ভাই দুবাই প্রবাসী ছয়ফুল্লাহ ও ওমান প্রবাসী আব্দুল্লাহ সহ আরো ২ জনকে গুরুতর আহত করে। ঘটনার দিন সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে পথিমধ্যে মারা যান সাবেক ইউপ সদস্য জয়নাল আবেদীন। পরবর্তীতে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ এপ্রিল মারা যান বড় ভাই ছয়ফুল্লাহ এবং সিলেট ইবনেসিনা হাসপাতালের আইসিউতে থাকা ভাই আব্দুল্লাহ গত ২ মে মারা যান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিন ভাইয়ের হত্যাকারী বড় ভাই সমছুল হক ও তার দুই ছেলে সুহেল আহমদ, কামাল আহমদ হত্যাকান্ডের পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে থাকায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পলাতক রয়েছেন। অপরদিকে হত্যাকান্ডের মূল মদদদাতা আনসার সদস্য আলমাছ উদ্দিন এখন পর্যন্ত পুলিশের হাতে গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকার লোকজনদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিহতদের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, এক এক করে তিন ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনার সাথে গ্রেফতারকৃত বড় সমছুল হকের পরিবারের মহিলাদেরও মদদ ছিল, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসারও দাবী জানান।

কানাইঘাট থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, মসজিদের সীমানার জায়গা নিয়ে সংঘর্ষে আপন ভাই-ভাতিজাদের হাতে পর পর মারা যাওয়া ৩ ভাইয়ের হত্যাকারী ৪ আসামীকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত প্রত্যেককে চিহ্নিত করা হয়েছে, কেউ ছাড় পাবে না। মামলার অপরাপর আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের ষাড়াসি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্ত পূর্বক যারাই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল এবং মদদ দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি