সিলেটে আবারও অনুমতি না পেয়ে পিছু হটলো জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক;
  • প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০২৩, ১০:৫৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১০ মাস আগে

সিলেটের ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে সমাবেশ করার দ্বিতীয়বারের মতো ঘোষণা দিয়েও সমাবেশ করতে পারেনি দলটি। মহানগর পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় দীর্ঘ ১০ বছর পর দুই দফায় সিলেটে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও তা করতে না পেরে পিছু হটে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।

শুক্রবার (২১ জুলাই) সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে দলের আমীর ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদন্ড পাওয়া মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও নেতাকর্মীদের মুক্তি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করার কথা ছিলো জামায়াত। কিন্তু পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় এবারও তারা সমাবেশে করতে পারেনি।

প্রথমবার গত ১৫ জুলাই একই কারণে সমাবেশ না করতে পেরে জামায়ত আজ শুক্রবার (২১ জুলাই) বাদ জুমআ ফের সমাবেশের ডাক দিয়েছিলো। তবে এবার ‘ব্যর্থ’ হয়ে আর কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি দলটি। শুক্রবার দুপুরে নগরের বন্দরবাজারস্থ কুদরত উল্লাহ মার্কেটে সিলেটে দলীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে ‘শীঘ্রই’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।

কিন্তু ‘নাশকতার আশঙ্কায়’ পুলিশের কাছ থেকে ১৫ জুলাইয়ের সমাবেশের অনুমতি পায়নি জামায়াত। একই ‘কারণে’ আজ শুক্রবারের সমাবেশের অনুমতিও পেলো না নিবন্ধন হারানো এ দলটি।

১০ দফা দাবিতে গত ১৫ জুলাই সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ করতে চেয়েছিলো গত এক যুগ ধরে অপ্রকাশ্যে থাকা রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। সাম্প্রতিক সময়ের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে পুঁজি করে গত ১০ জুন ঢাকায় বড় সমাবেশ করে হঠাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনায় আসার পরই সিলেটে সমাবেশ করে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা চালাচ্ছিলো জামায়াত।

সিলেট রেজিস্টারি মাঠে সমাবশের অনুমতি চেয়ে গত ৫ জুলাই মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করেন সংগঠনটি। তবে ‘নাশকতার আশঙ্কায়’ ওই সমাবেশের অনমুতি দেয়নি পুলিশ।

পুলিশের অনুমতির আগেই সিলেটে সমাবেশ করার তোড়জোড় শুরু করেছিলো জামায়াত-শিবির। ১৫ জুলাইয়ের আগে তারা প্রস্তুতিমূলক সভা করে বিভিন্ন শাখা-সংগঠনের সঙ্গে। এমনকি সমাবেশের তারিখের আগের দিন (১৪ জুলাই) সকালে মহানগর জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা সিলেট রেজিস্ট্রারি মাঠ পরিদর্শন করতে যান। এসময় পুলিশ তাদের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করে। পরদিন পুরনো একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।

১৫ জুলাই সমাবেশ করতে না পেরে জামায়াত ওই দিন দুপুর ১২টায় মহানগরের জিন্দাবাজারস্থ একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তবে ‘পুলিশের বাঁধায়’ সেখানে সংবাদ সম্মেলন করতে পারেনি দলটি। পরে নগরের কুদরত উল্লাহ মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আজ বাদ জুমআ একই স্থানে সমাবেশ করার দ্বিতীয় দফা ঘোষণা দেন মহানগর জামায়াতের নেতারা।

নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ, জামায়াতের ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম-ওলামার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে এ সমাবেশের ডাকা দিয়েছে দলটি। সমাবেশটির অনুমতির জন্য সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রবের নেতৃত্বে তাদের একটি প্রতিনিধি দল ১৬ জুলাই বিকেলে এসএমপি কমিশনার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে লিখিত আবেদন করে।

আবেদনের পর প্রথমবারের মতো এবারও দ্বিতীয় দফায় জামায়াত সিলেটে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতিমূলক সভা করে বিভিন্ন শাখা-সংগঠনের সঙ্গে। কিন্তু এবারও তারা পায়নি পুলিশের অনুমতি।

শুক্রবার সকাল থেকেই সিলেটের রেজিস্ট্রি মাঠের আশপাশ এলাকাসহ মহানগরের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন করে রাখা হয়।

এ পরিস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করে মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে সিলেটবাসী বিস্মিত, হতবাক এবং জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জামায়াত দেশ জাতির কঠিন সময়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শান্তিপূর্ণ
কর্মসূচী পালন করে আসছে। কিন্তু আদর্শিক কারণে সরকার ও প্রশাসন আমাদের উপর জুলুম নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। গত ১৫ জুলাইয়ের রেজিস্টারি মাঠের জনসভা উপলক্ষে আগের দিন শুক্রবার (১৪ জুলাই) কেন্দ্রীয় ও সিলেট জামায়াত নেতৃবৃন্দ মাঠ পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে আমাদের ৭জন নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়। শুধু তাই নয়, তাদেরকে পুরনো একটি মিথ্যা মামলায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এমনকি নিরীহ ও নিরপরাধ আমাদের নেতাকর্মীদের রিমান্ড আবেদনের মাধ্যমে তাদের মৌলিক মানবাধিকারকে ভুলুন্টিত করা হয়। আমরা মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্থানীয় প্রশাসনের এমন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আটককৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবী করছি।

তিনি বলেন, এই সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদ করলেই দমন পীড়ন চালানো যেন নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে একজন
সংসদ সদস্য প্রার্থীর উপর নগ্ন হামলা এবং বিগত একতরফা সিটি নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে প্রশাসনের ভুমিকা দেখে অনুমান করা
যায় এই সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হবে। একই সাথে সারাদেশে বিরোধী দলের চলমান আন্দোলন কর্মসূচীতে বাধা, হামলা-মামলা প্রমাণ করে সরকার তাদের ফ্যাসিবাদী আচরণ ত্যাগ করতে পারেনি। একটি দায়িত্বশীল সংগঠন হিসেবে
জামায়াত সরকারের এসব কর্মকান্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ না করে বসে থাকতে পারেনা।

মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম আরো বলেন, দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। মানুষ দিনে রাতে অর্ধেক সময়ও বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা। বিদ্যুতের অভাবে কলকারখানার উৎপাদন কমে এসেছে। এতে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি থমকে আছে।অপরদিকে দফায় দফায় তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করে জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে নিম্ন আয়ের মানুষের মধে ত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে জনগণের নিকট জবাবদিহীমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি