সিলেটে ডুবেছে ৪৪২ কিলোমিটার সড়ক

মিঠু দাস জয়;
  • প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২২, ৯:৩৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে

সিলেট জেলায় এখনো ৪৪২ কিলোমিটার সড়ক ডুবেছে বন্যার পানিতে। এই সড়কগুলোতে পানি উঠে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সোমবার সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এতথ্য জানা গেছে।

গত রোববার সিলেট নগরীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় জানানো হয়, সিলেটে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, পুর্ননির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাসাবাড়ির তালিকা প্রণয়ন এবং নগরকে বন্যামুক্ত রাখতে করণীয় নির্ধারণে একটি উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও জেলার ৪৪২ কিলোমিটার সড়ক তলিয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক), সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি বন্যায় নগরের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ, তালিকা প্রণয়ন ও করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবে। এ কমিটির যৌথ প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। নগরীর বন্যা পরিস্থিতিতে রোববার সিসিকের আয়োজনে নগর ভবনের সম্মেলনকক্ষে সব দপ্তর-সংস্থা ও অংশীজনকে নিয়ে নগরীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নির্দেশনা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

সভায় নগরীর উপদ্রুত এলাকার নাগরিকদের ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সভায় আগামী বর্ষাকালে যাতে বন্যার পানি নগরীতে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও নগরীর মধ্যে যেসব এলাকায় নদীর পাড় নিচু, সেসব পাড় উঁচু করার সিদ্ধান্ত হয়। বন্যা থেকে নগরীকে রক্ষায় সুরমা নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে নদী খননের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের গবেষণাপূর্বক সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।

সিলেটের এবারের বন্যায় সড়ক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দু’দিন ধরে পানি কমে এলেও এখনও অনেক সড়ক পানির নিচে রয়েছে। ফলে পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করত পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিকভাবে সিসিক, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) ৪৪২ কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে রয়েছে বলে জানা গেছে। বন্যার পানি নামলেও এসব সড়ক সংস্কারে লাগবে প্রচুর সময় ও অর্থ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ডুবে যাওয়া সড়কের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৪০ কিলোমিটার, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ২৩০ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) আওতাধীন আটটি সড়কের ৭২ কিলোমিটার বন্যাপ্লাবিত। এর মধ্যে অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, সিসিক এলাকার ৫০০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডের প্রায় ১৪০ কিলোমিটার সড়কে বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে। এসব সড়কের অনেক স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় এসব সড়ক অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, পানি নামলেই দ্রুততম সময়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে কাজ শুরু করা হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জেলার ১০টি সড়কের প্রায় ৭২ কিলোমিটার এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাড়ি চলাচলের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে ৫ কোটি ও স্থায়ীভাবে সড়কগুলো সংস্কারের জন্য ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা লাগবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল কবির জানান, তাদের আওতাধীন সিলেট জেলার ১০টি উপজেলার ৬৬টি সড়কের ২৩০ কিলোমিটার পানির নিচে। এসব সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা ও উপজেলা সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও উপদ্রুত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। নগরীর উপদ্রুত বেশিরভাগ বাসাবাড়ির পানি নেমে গেলেও ময়লা-আবর্জনার পচা দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস অবস্থা। এক সপ্তাহ ধরে পানিতে নিমজ্জিত বাসাবাড়ির অনেক আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে অনেক এলাকা এখনও প্লাবিত রয়েছে। সুরমা নদীর পানি কমার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।

সিলেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলছেন, বন্যা পরিস্থিতির আর খুব একটা অবনতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। দু এক দিনের মধ্যে সিলেটের বন্যার পানি নেমে যাবে।

সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষি ও মৎস্য চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষ। আকস্মিক বন্যায় বোরো ফসল, আউশের বীজতলা ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বন্যায় পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. এসএম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শতাধিক লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। চর্মরোগও বাড়ছে। পানি কমলে রোগবালাই আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য এরই মধ্যে ১১৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের সেবায় কাজ করছে।

 

 

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি