নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক চালু

মোঃ জেদান আল মুসা;
  • প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২৩, ১১:৩২ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১ বছর আগে

প্রচলিত পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় বিশেষ করে গ্রামীন সমাজে এমন ধারণা রয়েছে যে, পুরুষরা হলো সমাজ, পরিবার ও শাসনের কর্তা। এ ভ্রান্ত ধারণার কারণেই বাংলাদেশের সর্বত্র বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা বিভিন্ন ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে।

বিশেষ করে স্বামী, শ্বশুর ও শ্বশুর বাড়ীর আত্মীয় স্বজন দ্বারা পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয় এদেশের অসহায় নারীরা। সম্মান ও লাজলজ্জার ভয়ে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে নির্যাতিতরা থানায় বা আদালতে অভিযোগ করতে আসেন না। এক্ষেত্রে নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনাই পুলিশের গোচরীভূত হয় না। অনেক ঘটনা অপ্রকাশিত থেকে যায়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী”। সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে। অর্থাৎ নারী পুরুষ, ধনী-গরীব ও শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে আইনানুগ সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য থাকবে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশ পুলিশ সমাজের প্রতিটি নাগরিকের আইনানুগ সেবা নিশ্চিতকরণের জন্য থানায় প্রচলিত সেবা প্রদান পদ্ধতি অধিকতর জনবান্ধব করার লক্ষে নানাবিধ সময়োপযোগি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীতে ২০২০ সালে বাংলাদশে পুলিশ প্রতিটি থানায় স্থাপন করেছে “নারী-শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক”।

১০ই এপ্রিল ২০২২খ্রি. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উক্ত সার্ভিস ডেস্কের কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন। সিলেট রেঞ্জাধীন ৩৯টি থানায় ডেস্কের কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সার্ভিস ডেস্কের মাধ্যমে সেবা প্রার্থীদের বক্তব্য ধৈর্য সহকারে শোনা হয় এবং ভিকটিম/সেবা গ্রহীতাদের সমস্যা পর্যালোচনা পূর্বক যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তাছাড়াও সার্ভিস ডেস্কে আগত সেবা প্রত্যাশীগণ বাংলাদেশে প্রচলিত আইনী সেবা যেমন-নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০, শিশু আইন-২০১৩, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৯, পিতা-মাতার ভরন পোষন আইন-২০১৩ এর আলোকে প্রয়োজনীয় আইনী সেবা গ্রহণ করে থাকেন। সরকার প্রদত্ত অন্যান্য সেবা যেমন-জাতীয় জরুরী সেবা-৯৯৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সেল-১০৯, লিগ্যাল এইড সার্ভিস ১৬৪৩০-এবং জেলা ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নম্বর ইত্যাদি বিষয়ে সেবা গ্রহীতাদের অবগত করা হয়। এই ডেস্কের মাধ্যমে একদিনে যেমন সহজেই সেবা প্রাপ্তী নিশ্চিত হচ্ছে তেমনভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সবাই যেন উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় থাকে সেই ব্যবস্থাও সরকার গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এমডিজি এর সকল সূচক অর্জনে সফলতা দেখিয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ এবং রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে নারী ক্ষমতায়নসহ শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুনিশ্চিতে এই ডেস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ডেস্কগুলোতে কর্মরত আছেন দক্ষ নারী পুলিশ কর্মকর্তা ও নারী পুলিশ সদস্যরা। তাদের ডেস্কে পদায়নের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি থানার পৃথক কক্ষে পরিচালিত সার্ভিস ডেস্কসমূহে নারী-শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। ডেস্কের কার্যক্রম মূল্যায়নে প্রতি মাসে ০১ বার সভার আয়োজন করা হয়। অফিসার ইনচার্জ ডেস্কের প্রাত্যাহিক কার্যক্রম দেখভাল করে থাকেন। এ ডেস্কের মাধ্যমে সিলেট রেঞ্জের চারটি জেলায় ২০২০ সালে ৮৭১ জন, ২০২১ সালে ৩৭৬৫জন এবং ২০২২ সালে ৫৩৪৮ জনকে সেবা প্রদান করা হয়েছে। ডেস্কে কর্মরত অধিকাংশ সদস্য নারী পুলিশ হওয়ার কারণে সেবা প্রত্যাশী নারী ও শিশুরা খুব সহজেই তাদের মনের কথাগুলো খুলে বলতে পারছেন।

একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনেক নারী গৃহ অভ্যন্তরে কিংবা শুশুর বাড়ির লোকজনের নিষ্ঠুর নির্যাতন মুখবুজে সয়ে যাচ্ছে। কার কাছে অভিযোগ করে এর থেকে প্রতিকার পাবে সেটাও জানেনা ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের বিট পুলিশিং সেবা কার্যক্রম এবং উঠান বৈঠকে অংশগ্রহণ করে ভুক্তভোগীরা তাদের অভিযোগে কথা বলতে পারে। এর পাশাপাশি ৯৯৯ সর্বক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে যা ইতোমধ্যে গণমানুষের প্রথম ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নারী-শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের প্রতি নির্যাতন/সহিংসতা বন্ধ করা যাবে না। দরকার সামাজিক সচেতনতা। নারী নির্যাতনের বিষয়ে শুধুমাত্র অভিযোগ পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে এমন ধারনা পরিত্যাগ করে স্ব-উদ্যোগী হয়ে অপ্রকাশিত পারিবারিক নির্যাতন রোধে পুলিশের ভূমিকা প্রশংসনীয়। পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ বা কমিয়ে আনতে পারলে একদিকে যেমন অসহায় নির্যাতিত নারীরা অব্যক্ত যন্ত্রনা থেকে রেহাই পাবে অপরদিকে তেমনি নারী পুরুষের সমধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে। নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্কের মাধ্যমে পারিবারিক নির্যাতন রোধে পুলিশী কার্যক্রমের ফলে পুলিশের সাথে জসসাধারণের সম্পর্ক বহুলাংশে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মোঃ জেদান আল মুসা
পুলিশ সুপার
রেঞ্জ ডিআইজি’র কার্যালয়, সিলেট

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি