এমসির ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ: ডিএনএ রিপোর্টে চারজনের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২০, ৯:১৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৩ বছর আগে

সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গৃহবধূকে
দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় আসামিদের ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড) রিপোর্ট
পুলিশের হাতে এসেছে । রিপোর্টে গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের মধ্যে চারজনের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। তারা হলেন সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, তারেকুল ইসলাম তারেক ও শাহ মাহবুবুর রহমান রনি।

ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্যাহ তাহের। ডিএনএ রিপোর্ট আসার কারণে চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার্জশিট দিতে এখন আর কোন বাধা নেই।
রিপোর্টে আসামিদের সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে পুলিশ দ্রুত চার্জশিট প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান আশরাফ।

আশরাফ উল্ল্যাহ জানান, ডিএনএ রিপোর্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তার হাতে এসে পৌঁছেছে। এখন পরবর্তী প্রক্রিয়া চলছে। প্রক্রিয়া শেষ করেই দ্রুত সময়ে চার্জশিট দেয়া হবে।

ডিএনএ রিপোর্ট আসার কারণে চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার্জশিট দিতে এখন আর কোন বাধা নেই।

রিপোর্টে আসামিদের সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে পুলিশ দ্রুত চার্জশিট প্রদানের প্রস্তুতি নিচ্ছে

এরআগে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিলো ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে চাঞ্চল্যকর এই মামলার চার্জশিট দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এখন তা দ্রুত দেয়া হবে বলে জানান আশরাফ।
গত ১ অক্টোবর ও ৩ অক্টোবর ২ দিনে এ মামলায় গ্রেপ্তার ৮ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহের পর পাঠানো হয় ঢাকার ল্যাবে। সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রথমে আদালতে এসে পৌঁছায়। পরবর্তীতে এ রিপোর্ট তদন্ত কর্মকর্তার হাতে আসে।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের বালুচর এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন ওই তরুণী । করোনার কারণে বন্ধ থাকা ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে ওই রেখে তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়। এরপর তাদের মারধর করে টাকাপয়সাও ছিনিয়ে নেয় ধর্ষকরা। ওই রাতেই নির্যাতিতার স্বামী বাদী হয়ে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে ধর্ষণবিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। জনমতের চাপ মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে ধর্ষণবিরোধী আইনও সংশোধন করে সরকার।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে নববিবাহিত স্ত্রীকে প্রাইভেটকারে করে শাহপরান মাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন নগরের দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর এলাকার এক যুবক। ফেরার পথে সন্ধ্যার দিকে টিলাগড়ে এমসি কলেজের মূল ফটকের সামনে থামেন তারা। এসময় কয়েকজন তরুণ এসে ওই যুবকের স্ত্রীকে ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে প্রাইভেটকারসহ ওই যুবককে সস্ত্রীক বালুচরে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যান তরুণরা। এরপর যুবককে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে প্রাইভেটকারের মধ্যেই ধর্ষণ করেন ৫/৬ জন। পরে এই দম্পতিকে মারধর করে তাদের কাছে থাকা টাকাপয়সা, স্বর্ণালাকার ছিনিয়ে নেন ধর্ষকরা। আটকে রাখেন প্রাইভেটকারও। ছাত্রাবাস থেকে ছাড়া পেয়ে টিলাগড় পয়েন্টে এসে পুলিশকে ফোন করেন নির্যাতিতার স্বামী। পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রাবাস থেকে ওই দম্পতির প্রাইভেটকার উদ্ধার করে এবং নির্যাতিতা তরুণীকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করে। তবে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান অভিযুক্তরা। ওই রাতেই ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেন নির্যাতিতার স্বামী। আর সোয়াশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। দায়ীদের বিচার ও নারী নিপীড়ন বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ।

এ ঘটনায় ৬ জনকে আসামি করে এসএমপির শাহপরাণ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতিত ওই তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় আসামিরা হলেন- সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উমেদনগরের রফিকুল ইসলামের ছেলে তারেকুল ইসলাম তারেক (২৮), হবিগঞ্জ সদরের বাগুনীপাড়ার মো. জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর (২৫), দিরাই উপজেলার বড়নগদীপুর (জগদল) গ্রামের রবিউল ইসলাম (২৫) ও কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামের মাহফুজুর রহমান মাসুমকে (২৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনকে আসামি করা হয়। মামলা দায়েরের পর আসামিরা পালিয়ে গেলেও ঘটনার ৩ দিনের মধ্যে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে এজাহারভুক্ত আসামি সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম তারেক, মাহবুবুর রহমান রনি, অর্জুন লস্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম এবং সন্দেহভাজন আসামি মিসবাউর রহমান রাজন ও আইনুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কোনো পদে না থাকলেও গ্রেপ্তার হওয়া সকলেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন বলে স্থানীয় ও কলেজ সূত্রে জানা গেছে।
গ্রেপ্তারের পর তাদের প্রত্যেককে ৫ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে সকলেই ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এদিকে, ধর্ষণের রাতে এমসি কলেজে ছাত্রবাসে সাইফুর রহমানের দখলে থাকা কক্ষে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করে। সেই মামলার অভিযোগপত্রও এখনও দেওয়া হয়নি।
অপরদিকে গণধর্ষণের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ইতোমধ্যে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও মহি উদ্দিন শামিম গঠিত বেঞ্চে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে গণধর্ষণের এ ঘটনার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে ২৬ অক্টোবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও কলেজের অধ্যক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্তের দোহাই দিয়ে কলেজ কমিটির এ প্রতিবেদনটি সিলগালা করে রাখেন।
তাছাড়া গৃহবধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িত চার আসামির ছাত্রত্ব এবং সার্টিফিকেট বাতিল করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি তাদের স্থায়ীভাবে এমসি কলেজ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন, সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাসুম ও রবিউল হাসান।
এর আগে ঘটনার কয়েকদিন পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে গণধর্ষণের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি এমসি কলেজে তদন্ত করতে আসে। তদন্ত শেষে তারা তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন।
সর্বশেষ চাঞ্চল্যকর এ মামা ডিএনএ রিপোর্ট আসলো তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে। এখন চার্জশিটের জন্য অপেক্ষা। সব ঠিক থাকলে এ সপ্তাহেই চার্জশিট দেয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি