কোম্পানীগঞ্জে এক শিক্ষকে ৩ বছর, পাঠদান ব্যাহত

আলী হোসেন, কোম্পানীগঞ্জ;
  • প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে

বিদ্যালয়টির নাম মনুরপাড় আজির উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এটি সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মনুরপাড় গ্রামে অবস্থিত। এই স্কুলে ৩ বছর ধরে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে ১০২ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান। এতে শিক্ষার গুণগতমান অর্জন তো দূরের কথা, নামমাত্র শিক্ষাও পাচ্ছেন না এখানকার শিক্ষার্থীরা। ফলে শিক্ষা সংকটে পড়ছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদায় তিন বছর ধরে এক শিক্ষকের দ্ধারা পাঠদানও হচ্ছে ব্যহত।

পাঠদান ও দাপ্তরিক কাজের সঙ্গে মাসিক সভায় যোগ দিতে হচ্ছে সেই শিক্ষককে। এসব কারণে গুণগত শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এভাবেই এই স্কুলে পাঠদান চলছে দিনের পর দিন।

সরেজমিন বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভবনটি খুব সুন্দর। শ্রেণি কক্ষগুলো নানা রকম ছবি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো। দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে প্রতিটি কক্ষের নামকরণ করা হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে সবই আছে, শুধু নেই একের অধিক শিক্ষক।

জানাযায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়হীন গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই স্কুলটি নির্মাণ করে।

লেখাপড়া কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা বলে, ‘স্যার এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে গেলেই হৈচৈ শুরু হয়। লেখাপড়া ভালো হয় না।’

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী শিমুল আক্তার বলে, ‘একজন স্যারের দ্বারা সকল বই পড়া বুঝতে যেমন কষ্ট হয়, তেমনি লেখাপড়ায়ও আমরা পিছিয়ে পড়ছি।’

বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক আম্বিয়া বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে সানজিদা তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। স্কুলে শিক্ষক ঘাটতি থাকায় মেয়ের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।’

‘এই এলাকায় আর স্কুল না থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে বিপাকে পড়েছি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এক বছর ধরে শুনছি নতুন শিক্ষক আসবেন। কিন্তু, আসছেন না। ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’

এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির রাহুল, মুস্তাকিন ও মহাইমেনুলসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষক না থাকায় তাদের ক্লাস ঠিকমতো হয় না। নতুন শিক্ষক নেওয়া হলে তাঁদের লেখাপড়া আরও ভালো হতো।’

বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি আজির উদ্দিন বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট দীর্ঘদিনের। একজন মাত্র শিক্ষক দিয়েই চলে বিদ্যালয়টির পাঠদান। এর মধ্যে উপজেলা সদরে সভা হলেই বিদ্যালয় বন্ধ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষককেই ছুটে যেতে হয় উপজেলা সদরে। ফলে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থী সংখ্যা। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সংকট রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খসরুজ্জামান জানান, ২০২০ সালের শুরুর দিক থেকে তিনি একাই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন।
আরও বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকায় প্রায়ই তাঁকে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজে উপজেলা সদরে যেতে হয়। তখন স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। শিক্ষক না থাকায় অভিভাবকেরা সন্তানদের এ বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চান না। ফলে কমতে শুরু করেছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, ‘২০২০ সালে বিদ্যালয়টি পাঠদান শুরু হয়। কিন্তু তখন থেকেই করোনা চলে আসে। শিক্ষক নিয়োগ হলে এ বছর শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি