সব
সিলেটের সীমান্ত উপজেলা জকিগঞ্জের কুশিয়ারা তীরের এক জনপদের নাম ছিল পাটি গ্রাম। এই গ্রাম ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কম বেশি শীতল পাটি বুনা হত। এ কুটির শিল্প ছিল জকিগঞ্জের ঐতিহ্য। বিশেষ করে উপজেলার শষ্য কুঁড়ি পাটি পল্লী নামে বেশ পরিচিত ছিল। এখানকার ঘরে ঘরে হরেক রকম পাটি বুনা হত।
এক সময় নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য জীবিকার টানে পরিবারের সবাই ব্যস্ত থাকত পাটি তৈরীর কাজে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুর্তা সংগ্রহ করে দৃষ্টি নন্দন পাটি তৈরী করত শিল্পীরা। স্থানীয়ও দূর দূরান্তের পাইকাররা এসে নিয়ে যেত পাটি শিল্পীর উৎপাদিত পাটি। দৈনন্দিন ব্যবহার ছাড়াও ধর্মীয় অনুষ্টানাদি বিয়ে শাদীর অনিবার্য অনুষঙ্গ ছিল এসব পাটি।
বর্তমানে এসব পাটির কদর কমে গেছে। যুগ যুগ ধরে পাটি গ্রামের লোকজন পাটি বুনে জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্তমানে প্রয়োজনীয় মুর্তা ও কালের পরিক্রমায় পাটি শিল্প বিলুপ্তির পথে। শষ্যকুঁড়ির বাসিন্দা বশর আলী বলেন এক সময় আমাদের গ্রামের কম বেশি সবাই এই শিল্পের সাথে জড়িত ছিলাম। বিভিন্ন জায়গা থেকে মুর্তা সংগ্রহ করে পাটি তৈরী করতাম। পাটি তৈরীর উপাদান মুর্তা বা বেত। ৮০ টি মুর্তায় এক পোন। এক পোনের দাম ১০০-২০০ টাকা ছিল। হাওর, ডোবা, বা পুকুর পারে প্রাকৃতিকভাবে মুর্তা বাগান সৃষ্টি হত।
বটি বা দা দিয়ে প্রতিটি মুর্তা ৩/৪ ফালি করে বেত তোলা হয়। মুর্তা শুকনা হলে তা পানিতে ভিজাতে হত। মোটা পাটি, বুকা পাটি ও শীতল পাটি এ তিন রকম পাটি তৈরী করত পাটিকররা। ৩ হাত ৫ হাতের একটি পাটি মান অনুযায়ী ৫০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হত। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা পাটি পল্লী ঘুরে দর দাম করে নিয়ে যেত তাদের পছন্দের পাটি।
এই পাটি পল্লীর বশর আলী, আব্দুল গফুর জানালেন, এই সব দিন আর নেই। সবকিছু হারিয়ে গেছে। বর্তমানে পাটির উপকরন মুর্তা পাওয়া কঠিন এবং প্লাষ্টিকের পাটির কারণে এইসব শীতল পাটির কদর আর তেমন নেই বললেই চলে। এখন ঘরে ঘরে পাটি তৈরী হয়না। দুই একজন শখ করে পাটি তৈরী করে।
জকিগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আশুতোশ বিশ্বাস জানান, আগে আমরা স্তানীয়ভাবে পাটি কিনে বিক্রি করতাম, বর্তমানে বাইরে থেকে এনে বিক্রি করি। প্লাষ্টিকের পাটির কারনে শীতল পাটির চাহিদা নেই। খুব কম বিক্রি হয়। স্থানীয়ভাবে শীতল পাটি না পাওয়াতে দাম ও বেশি। একটি পাটি বর্তমানে ১৫০০-২০০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। তবে ধীরে ধীরে এ শিল্প হারিয়ে যাবে।
জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম শিহাব জানান, আগে এই কুটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্য ছিল, শষ্য কুঁড়ি ছাড়াও উপজেলার প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে শখ করে লোকজন শীতল পাটি তৈরী করত। বর্তমানে শীতল পাটির কদর নেই, উপকরনের অভাবে পাটি তৈরী হয়না। এছাড়াও প্লাষ্টিকের পাটি বাজারজাত হওয়ায় এই শিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। কালের পরিক্রমায় শীতল পাটি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি