সব
প্রচলিত আছে যে, জেলা প্রশাসক হলেন একটি জেলার মানুষের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল। কারণ দুঃখে, শোকে, সংকটে ও দুর্যোগে জেলা প্রশাসক মানুষের পাশে দাঁড়ান আস্থার প্রতীক হয়ে।
ঠিক সেরকম উদাহরণ তৈরি করলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক। আর্থিক সংকট লাঘবে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ চা বাগানের নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ালেন মানবিক সহায়তা নিয়ে। তার একান্ত উদ্যোগে ১ হজার ৪ শত জন চা-শ্রমিকদের মাঝে নগদ সাত লক্ষ টাকা আর্থিক অনুদান ও ১৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
(বৃহস্পতিবার ২৭ মার্চ ও শুক্রবার ২৮ মার্চ) দুই দিন ধরে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত সিলেটের বুরজান চা বাগান, কালাগুল চা বাগান, ছড়াগাং চা বাগান ও বুরজান এর ফেক্টরি এলাকা সহ স্থানে এসব বিতরণ করা হয়।
সিলেট সদর উপজেলার বুরজান, কালাগুল, ছেড়াগাং ও খাদিম ফ্যাক্টরি চা বাগানে ১৫ সপ্তাহ ধরে বেতন, ও রেশন বন্ধ থাকায় চা শ্রমিকরা অর্ধাহারে অনাহারে অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক দুরদর্শা গ্রস্ত বুরজান চা-বাগানের ৩৪৬ জন, কালাগুল চা-বাগানের ৫৪২ জন, ছেড়াগাং চা বাগানের ৩১২জন এবং বুরজান অর্ন্তগত ২০০ জনসহ মোট এক হাজার চার শত জন চা-শ্রমিকের মাঝে ৫০০ টাকা করে নগদ অর্থ ও ১০ কেজি করে চাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মানবিক সহায়তা খাত থেকে বরাদ্দ প্রদান করেন। দ্রুততার সাথে চারটি বাগানে একসাথে বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়।
জেলা প্রশাসকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজ্ খোশনূর রুবাইয়াৎ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাহবুবুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিলেট মহানগর মো. আলীম উল্লাহ খান; জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মেরিনা দেবনাথ,উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ, সিলেট সদর এবং খাদিমনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলোয়ার হোসেন ।
চা-শ্রমিকদের ও চা শিল্পের বিদ্যমান সংকট নিরসনে জেলা প্রশাসক অত্যন্ত আন্তরিকতা নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। এর আগে লাক্কাতুরা, দলদলি, ও কেওয়াছড়া চা বাগানে মজুরি ও রেশন বন্ধ থাকাকালীন সময়ে জেলা প্রশাসক এই তিনটি বাগানের ১ হাজার ২ শত শ্রমিকের প্রত্যেককে ৩০ কেজি করে মোট ৩৬ মেট্রিক টন চাল ও ৬ লক্ষ টাকার খাদ্যসামগ্রী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মানবিক সহায়তা কর্মসূচি খাত থেকে প্রদান করেন।
এ খাদ্য সহায়তা পাওয়ার পর বুরজান চা-বাগানের চা-শ্রমিকরা বলেন, মজুরী বন্ধ থাকার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। একবার খাইলে আরেকবার না খাইয়া থাকতে হয়। ডিসি স্যারের সহায়তা আমাদের খুব উপকার হয়েছে। আমাদের চা-বাগানের প্রায় সব বাড়িতেই এখন না খাইয়া থাকতে হচ্ছে।
একই ভাবে ত্রাণ হাতে পেয়ে কালাগুল বাগানের একজন চা-শ্রমিক বলেন, ডিসি স্যারের আজকের এই সহায়তার ফলে অনেকদিন পর পরিবারের সবাই মিলে পেট ভরে খেতে পারবো। এ খাদ্য সহায়তা পাওয়ার পর হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন বুরজান টি এস্টেট এর চা-শ্রমিকরা। সেসময় তারা বলেন , “হামাদের ডিসি স্যার চাউল ও টেকা দিয়েছে। আমরা বাগানের সবাই খুব খুশি হয়েছি।”
এসম চা শ্রমিকরা এ উদ্যোগের জন্য জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানান এবং তাদের ১১ দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তাদের দাবিগুলোর মধ্যে আছে বন্ধ থাকা মজুরি ও সাপ্তাহিক রেশন প্রদান, বকেয়া পাওনা পরিশোধ।এছাড়াও পেনশন, চিকিৎসা, আবাসন, খাবার পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ক চা নীতিমালা সমর্থিত দাবি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি