সিলেটে সমবায় কর্মকর্তার কাছে জিম্মি মৎস্যজীবীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১:৩৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৫ মাস আগে

সিলেটে এক সমবায় কর্মকর্তার অত্যাচারে অতীষ্ট নিম্ন আয়ের মানুষেরা। অফিসে ডেকে এনে লাখ টাকায় নিবন্ধন দেওয়ার প্রস্তাব দেন অফিসের কম্পিউটার অপারেটর সাইফুল। এ নিয়ে ফুঁসে উঠছেন এলাকাবাসী।

তবে, তাকে বাঁচাতে একাট্রা হয়েছেন সিলেট বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ন নিবন্ধক আশীষ কুমার বড়ুয়া, জেলার সমবায় কর্মকর্তা চন্দন দত্ত, দক্ষিণ সুরমার সমবায় কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানসহ অনেকে।

২০২২ সালে সিলেট জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে পদোন্নতি পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হিসেবে মোহাম্মদ আক্তার হোসেন যোগদান করেন। শুরু থেকে নিজেকে সাবেক বণ ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের লোক বলে পরিচয় দিতে থাকেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথেও গড়ে তুলেন সখ্যতা।

উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে মৎস্যজীবী ও অন্যান্য সমবায়ীদের সাথে যোগাযোগ করান। সহজে নিবন্ধন পাইয়ে দিতে সমবায় কর্মকর্তা আক্তার হোসেনের সাথে মিলিয়ে দেন সাইফুল। সমবায় নিবন্ধনের জন্য টাকার পরিমানও ধার্য করে দেন। কেউ কেউ টাকা দিয়ে নিবন্ধন করলেও সত্যিকারের মৎজীবীরা বাদ পড়েন।  কিন্তু হাল ছাড়েননি আক্তার হোসেন। এলাকায় লোক নিয়োগ করে সমিতি নিবন্ধনের লোভ দেখান।

১৫ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শিমুল তলায় নোঁয়াগাঁও চেতনা মৎজীবী সমবায় সমিতির লি. এর সম্পাদক ফারুক মিয়ার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অডিও প্রকাশ পায়। ফারুক মিয়ার কাছে প্রথমে লাখ টাকা দাবি করেন। পরে ৮০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করেন আক্তার হোসেন।

৯ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জে বৈষম্যের শিকার সমবায়ীয়েদর পক্ষে জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস) কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নুর আলম চৌধুরী সহ ২৫জন ভুক্তভোগী সমবায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসার মোহাম্মদ আক্তার হোসেন উপজেলার সমবায়ীদের নানাভাবে হয়রানী করছেন। নতুন সমবায় সমিতি নিবন্ধন করতে তিনি লাখ টাকা দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আদায় করেন। এ ছাড়া সিডিডিপি প্রকল্পের গ্রামকর্মীর মাসিক ভাতা ২ হাজার ৫শ  টাকা হলেও এখানে প্রতি কর্মীর কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে রাখেন। আবার পুরনো সমিতি অডিট করতে গেলে খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা আদায় করেন। সমবায় সমিতি টিকিয়ে রাখতে নিম্ন  আয়ের মানুষ দিনের পর দিন এসব অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, সমবায়ীদের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত আক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হলেও তিনি অভিযোগকারী কাউকে ডাকেন নি।

তবে, অভিযোগকারী তদন্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা কোনো সদুত্তর দেননি। প্রতিবেদন পেতে অভিযোগকারী নুর আলম চৌধুরী ২২ জানুয়ারি তথ্য আইনে জেলা সমবায় কর্মকর্তা চন্দন দত্ত বরাবর একটি দরখাস্ত দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোহাম্মদ আক্তার হোসেন  বলেন, আমার বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে কতৃপক্ষ দেখবে। কে কি বললো এসব আমি পরোয়া করিনা।

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ন নিবন্ধক আশীষ কুমার বড়ুয়া সিলেট ডায়রিকে বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি করে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন ঢাকায় পৌছে দিয়েছি। অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিবে বলে তিনি জানান।

সমবায় অধিদপ্তরের উপ নিবন্ধক (প্রশাসন) আতিকুল ইসলাম সিলেট ডায়রিকে বলেন, অভিযোগটি আমরা পাইনি। সিলেটে আমি জানিয়ে দিচ্ছি, অবশ্যই এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ কোনোভাবেই প্রতারণার শিকার হতে পারে না।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি