সব
গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টি ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক বন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে । পানি বন্দি হয়ে পড়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ জন মানুষ। তবে সবচেয়ে বিপদে আছে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ।
বৃহস্পতিবার (৩০মে)দুপুরে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গোয়াইন,পিয়াইন সারী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। গোয়াইনের পানি ১০.৮২ মিটার সারী নদীর পানি ১২.৩৫ মিটার পিয়াইন নদীর পানি ১৩.০০ মিটার বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট, সারী, পিয়াইন নদীর পানি বৃদ্ধি ও বৈরীআবহাওয়া অব্যাহত থাকায় উপজেলা সদর হতে জেলা সদরে যাতায়াতের ৩টি রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থান তলিয়ে য়াওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ।
বন্যায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় ৩৪৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে ৪২ হাজার ৯০০ টি পরিবার পানি বন্দি আছে। ১৬৬০ হেক্টর ফসিল জমি ডুবে গেছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচাপাকা রাস্তা ব্রিজ ও কালভার্ট।পানি বন্দি হয়ে ৫৬ টি আশ্রয় কেন্দ্রর মধ্যে ২৬ টি কেন্দ্রে ২৩৫৬ জন নারী পুরুষ শিশু সহ ৬৪৫ টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে এছাড়াও বন্যা দু্র্গত বিপুল সংখ্যক মানুষ নিকটস্থ আত্মীয়- স্বজনের নিরাপদ উঁচু স্থাপনাতেও আশ্রয় নিয়েছে।
গোয়াইনঘাটে বন্যায় দুর্গত মানুষের চিকিৎসার জন্য ১০টি মেডিকেল টিম ও পানিবন্দিদের উদ্ধারের জন্য দেড় শতাধিক নৌকা ও প্রতিটি ইউনিয়নের স্থানীয় নৌকা সুমহু ব্যবহার হচ্ছে।
দুর্গত এলাকার মানুষ জানায়,অনেকের ঘরেই যা খাবার ছিল তা শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের অর্ধাহারে -অনাহারে দিন কাটছে। প্রশাসনের পক্ষ হতে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।তাই ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
এত বেশি বিপাকে পড়ছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। কিছু গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।উপজেলার ঝারিখাল গ্রামের পানিবন্দি আজাদ মিয়া বলেন,দুই দিন ধরে বউ সন্তানদের নিয়ে পানি বন্দি হয়ে আছি। অসুস্থ হয়ে কাজ কাম করতে পারি না,ঘরে যা খাবার ছিল শেষ হয়ে গেছে।আর একটু পানি বাড়লে ঘরে থাকাও সম্ভব না নৌকাও না যাব কোথায়।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তৌহিদুল ইসলাম জানান,বন্যা কবলিত এলাকা, উঁচু জায়গা ও সরকারিভাবে খোলা আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে ৩৯ মেঃটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বন্যা দুর্গত মানুষদের তালিকা তৈরি করে ত্রাণ সহায়তার জন্য আরও ১০০ মেঃ টন জি. আর চাল ও ১০ লক্ষ টাকা ক্যাশ, শিশু খাদ্য ক্রয়ের জন্য ৫ লক্ষ টাকা, গো -খাদ্য ক্রয়ের জন্য ৫ লক্ষ টাকা এবং ৫০০০ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেটের চাহিদা সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া বন্যা দুর্গত এলাকায় সার্বিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা -কর্মচারী ও জন প্রতিনিধিরা বন্যা দুর্গত এলাকায় অবস্থান সহ পানিবন্দিদের উদ্ধারে কাজ করছেন।
তিনি আরো জানান, বৃহস্পতিবার বন্যা দুর্গত এলাকা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান এবং প্রধানমন্ত্রী’র পক্ষ হতে তিনি বন্যা দুর্গত ও পানি বন্দি পরিবারের মাঝে মানবিক সহায়তা হিসেবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বন্যার পানি বাড়ছে এমন খবর পাওয়া গেছে অতিবৃষ্টি ও বৈরীআবহাওয়া অব্যাহত রয়েছে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি