তীব্র গরমেও প্রচারণায় প্রার্থীরা

মিঠু দাস জয়;
  • প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২৩, ৮:৫০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে

তীব্র গরমেও সিলেট নগরী প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণাম সরগরম। প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট ও দোয়া চাচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।

গত শনিবার থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা সুজিত রায় নন্দী ও বলদেব কৃষ্ন দাস সিলেটে অবস্থান করছিলেন । তারা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে লিফলেট বিতরণ ও মতবিনিময় সভাসহ বিভিন্ন প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে উন্নয়নের স্বার্থে নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে তারা সিলেটে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

রোববার সিলেটে এসেছেন জাতীয় পার্টির ১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। প্রেসিডিয়াম মেম্বার আতিকুর রহমান আতিকের নেতৃত্বে দলের সদস্যরা হলেন, দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সেলিম উদ্দিন, মনিরুল ইসলাম মিলন, আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, ভাইস চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ, এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, মো. বেলাল হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন খালেদ। নির্বাচন পরিচালনা সমন্বয় কমিটির নেতারা সরেজমিন জাতীয় পার্টির সিলেট সিটি মেয়র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুলের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসানের পক্ষে প্রচারণা চালাতে ঢাকা থেকে একাধিক নেতা সিলেটে এসেছেন। হাতপাখা প্রতীকের সমর্থনে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

১২ দিন পরই অনুষ্ঠিত হবে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীর মধ্যে মূল লড়াই হবে ধারণা করছেন ভোটাররা।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (নৌকা) মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলনের (হাতপাখা) প্রার্থী মাহমুদুল হাসান, জাকের পার্টির (গোলাপ ফুল) প্রার্থী জহিরুল আলম এবং ঘোড়া প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুল হানিফ, বাস গাড়ি প্রতীকে মো. শাহ জাহান মিয়া ও ক্রিকেট ব্যাট প্রতীক নিয়ে ছালাহ উদ্দিন রিমন।

এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা চালায়। মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ শীর্ষ কিছু নেতাদের দলটি কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে পারলেও ৪৩ জনকে আটকাতে পারেনি। সর্বশেষ সোমবার (৫ জুন) রাতে তাদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে তৃণমূল ও পেশাজীবী নারী নেত্রীদের সাথে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ‘নারীরা শুধু ঘরে বসে থাকবে না, তারা পুরুষদের মতো সমানতালে পরিবার-সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। এজন্য স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়নের সময় সেখানে নারী-পুরুষ সমান অধিকারের কথা উল্লেখ করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এমনকি সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা নারীদের সমাজের মূলস্রোতে আনতে বর্তমান সরকার তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। আমি নির্বাচিত হলে সিলেট সিটি করপোরেশনে পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কাজ করবো।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় নারীবান্ধব একটি রাজনৈতিক দল। আমি এ দলের একজন কর্মী হিসাবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নারীর সমস্যা সমাধান করতে না পারলে আমাদের কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবেনা। তাই দ্রুত ব্যবসা বাণিজ্য এবং চাকরি ক্ষেত্রে নারীর সমস্যা সমাধান করে তাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ আরও সুগম করতে হবে। সবাই যদি আমাকে যোগ্য মনে করে নির্বাচিত করেন তাহলে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকার মা বোনদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে আমি আন্তরিকভাবে কাজ করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলে নগরভবন আরও বেশি নারীবান্ধব হবে। সেখানে আমাদের মা বোনরা উপস্থিত হয়ে যাতে অসংকোচে তাদের সমস্যাগুলো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরতে পারেন তেমন একটা উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। যাতে দ্রুত তাদের সমস্যা সমাধান হয় সে ব্যাপারে আমি নিজে সদাসচেষ্ট থাকব।’

এদিখে, বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুর ২টায় নগরীর মীরাবাজারস্থ একটি হোটেলে সিলেট মহানগর সংবাদপত্র হকার সমবায় সমিতির সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ও সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল বলেছেন, এই নগরের প্রতিটি মানুষ আমার আত্মার আত্মীয়। আমি অনেক আশা নিয়ে আপনাদের পাশে এসেছি। আমাকে এই নগরীর একজন খাদেম হিসেবে আগামী ২১ জুনের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত করুন। আমি কথা দিচ্ছি আপনারা আমাকে যখনই ডাকবেন, কাছে পাবেন। তিনি আরো বলেন, সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ। সেই সংবাদপত্রকে আপনারা যারা মানুষের কাছে নিয়ে যান, আমি তাদেরই একজন। সেই দাবীতে আপনাদের কাছে আমার আকুল আবেদন আমাকে একটিবারের মতো এই নগরের একজন সেবক হিসেবে নির্বাচিত করুন।

তিনি সমিতির সদস্যদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, আপনাদের যত দাবী-দাওয়া আছে তা আমি নির্বাচিত হই বা না হই, পূরণ করতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আমি জানি আপনাদের অনেক কষ্ট, সেটা আমার মনের মধ্যে রেখে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।
সিলেট মহানগর সংবাদপত্র হকার সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলার শাখার সদস্য সচিব সাইফুদ্দিন খালেদ।

সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন এর পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম, দপ্তর সম্পাদক হারুনুর রশিদ, সদস্য শফিক আহমদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান সমিতির নেতবৃন্দ।

এদিকে দুপুর ১২টায় মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল নগরীর জিন্দাবাজার থেকে বন্দরবাজারের বিভিন্ন মার্কেট ও বিপনী বিতানে ব্যবসায়ীদের সাথে গণসংযোগ করেন। তিনি গণসংযোগকালে আগামী ২১ জুনের নির্বাচনে তাকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করার আহবান জানান। এসময় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ জন। নারী ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২ জন। মোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৩৬৪টি। এবারই প্রথম সিলেট সিটি নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি