সুনামগঞ্জে সার্কাসের নামে চলছে অশ্লীল নাচ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি;
  • প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২, ৯:৫৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১ বছর আগে

সুনামগঞ্জের পৌর শহরের ষোলঘরে জেলা ক্রীড়া সংস্হার মাঠে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)’র উদ্যৌগে শিল্প পণ্য মেলাতে সার্কাসের নামে রাতভর চলছে অশ্লীল নাচ-গান। আর এসব প্রদর্শনীতে দর্শক সারিতে ভিড় করছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও এলাকার যুবসমাজ।

তবে পরিবার পরিজন নিয়ে যারা সার্কেসের ভিতরে প্রদর্শনী দেখার জন্য ঢুকেছেন তারা পড়ছেন বিপাকে।

সার্কাসের নামে অশ্লীল নাচ দেখে তারা বেড়িয়ে এসে মেলা কতৃপক্ষের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেকে বলেছেন, পুলিশের দাপটে সুনামগঞ্জে মেলার নামে চলছে অশ্লীল নাচ-গান।

এই মেলাটি পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)’র হলে পরিচালনা করছে অন্য একটি পক্ষ। তাদেরকে নাকি, মেলা পুরোটি লিজ দেয়া হয়েছে।
সরজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, পুনাক শিল্প পণ্য মেলা উপলক্ষে মাঠের পিছনে তৃপ্তি সার্কাস নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেখানে টিকেটের মূল্য ১০০ থেকে ৮০ টাকা। সেখানে হিরো আলম, রিয়া মনি, দয়াল বাবা এমনকি সিনেমার অভিনেত্রী নাসরিন, রত্না সহ অনেকেই অশ্লীল নাচ পরিবেশন করেন। আর সেই নাচ দেখতে তৃপ্তি সার্কাসের সামনে দীর্ঘলম্বা লাইন ধরেছেন যুবক ও স্কুল পড়ুয়া ছেলেরা। শুধু তাই নয়, সুনামগঞ্জের দূর দুরান্ত থেকে পরিবার নিয়ে আসা যারা সার্কাসের ভিতরে ডুকেছেন তারাই পড়েছেন সব চেয়ে বড় বিপাকে। অনেকেই সার্কাসের ভিতরে এমন অশ্লীল নাচ দেখে পরিবার নিয়ে মুখ লুকিয়ে বেরিয়ে আসতেও দেখা যায়।

জানা যায়, গত (২৩ নভেম্বর) বুধবার সুনামগঞ্জ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাকের) উদ্যোগে পুনাক শিল্প-পণ্য মেলার উদ্বোধন করেন পুনাকের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ কোষাধ্যক্ষ উম্মে কুলসুম রুপা আহম্মেদ। পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশের সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।

তবে মেলার উদ্বোধনের পর থেকে সার্কাসের ভিতরে প্রদর্শনীর বদলে দেখানো হচ্ছে অশ্লীল নৃত্য এমন অভিযোগ এনে স্থানীয়রা বলেন, ২৫ দিন ধরে পুনাক মেলার নামে সন্ধ্যার পর চলছে অশ্লীল নৃত্য । দিনে মেলা প্রাঙ্গণে সাধারণ দর্শণার্থীর উপস্থিতি কম থাকলেও রাতে সে চিত্র পুরো ভিন্ন। অশ্লীল নাচগান দেখতে এক শ্রেণির দর্শকের উপস্থিতি ব্যাপক বেড়ে যায়। এসব কিছুর পরও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।
এদিকে এলাকার স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জানায়, সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই মাইকে উচ্চস্বরে অশ্লীল গান-বাজনা শুরু হয়। এ কারণে পড়ালেখার ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।

পৌর শহরের তেঘরিয়ার বাসিন্দা লিটু মিয়া বলেন, পুনাক মেলায় সার্কাসের নামে যে অশ্লীল নাচ-গান চলছে, তাতে উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকেরা নষ্ট হতে বাধ্য। আমরা কিছু বললেই মেলা আয়োজকের লোকজন হুমকি-ধামকি দেয়। পুলিশের ভয় দেখায়। পুনাক মেলা নাম হওয়ায় যেন তারা অশ্লীল কাজের লাইসেন্স পেয়ে গেছে। যুব সমাজ রক্ষায় আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করি অথচ আজ পুলিশের দাপটে মেলা কতৃপক্ষ যা শুরু করেছে তাতে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা মামুন আহমেদ জানান, মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেলার পিছনে তৃপ্তি সার্কাসে নানা রকমের প্রদর্শনী দেখবে বলে পরিবারের ছোট বোনেরা বাইনা ধরে। কিন্তু সার্কাসের ভিতরে ডুকে আমি অবাক সার্কাসের নামে যে অশ্লীল নৃত্য হয় সেটা মুখে বলতে পারব না। পরে মুখ লুকিয়ে পরিবার নিয়ে সার্কাসের ভিতর থেকে আমাদের বেড়িয়ে আসতে হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাসিন্দা জাবেদ মিয়া জানান, পুলিশের নামে মেলা অশ্লীল নৃত্য চলছে এটা সত্যি দুখ জনক। এই দিকে পুলিশের নজর দেওয়া উচিৎ।

পুনাক শিল্প পণ্য মেলার দায়িত্বে থাকা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আপনারা শুধু অভিযোগ গুলো দেখলেন, এখানে ত বিনোদনেরও অনেক বিষয় আছে। আর অশ্লীল বলতে কিছু নাই। টিভিতেও ত আমরা গানের সাথে নাচ দেখি। এখানেও সেই রকম। এটা তো অন্যায় কিছু না। আমরা কোনও প্রকার অশ্লীলতা করছি না।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) রিপন কুমার মোদক বলেন, পুনাক মেলায় অশ্লীল নাচ গানের বিষয়ে আমাদের কাছে কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেলা কতৃপক্ষ পুলিশের দাপট দেখিয়ে মেলায় অশ্লীল নাচ গান করছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এমন ত হওয়ার কথা না। তারপরও বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, মেলা কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে পৌরবাসী আমাকে নানা অভিযোগ দিচ্ছেন। তবে আমি শুধু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম আর যাওয়া হয়নি। যদি সার্কাসের ভিতরে অশ্লীল নাচ গান হয়ে থাকে তাহলে আপনারা সাংবাদিকরা এটা লিখুন আর আমরা চাই এইসব অশ্লীল গান বাজনা বন্ধ হোক।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি