ইউপি সদস্য হয়েও নরসুন্দরের কাজ করছেন সুদীপ

দিরাই প্রতিনিধি;
  • প্রকাশিত: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭:২০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১ বছর আগে

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় সংসার চালাতে ইউপি সদস্য হয়েও নরসুন্দরের কাজ করছেন ৩৩ বছর বয়সী সুদীপ চন্দ। উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য তিনি। নরসুন্দরের পেশায় থেকেই ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন সুদীপ।

স্থানীয়দের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় এই ইউপি সদস্য ইউনিয়নের রনারচর গ্রামের বাসিন্দা রসময় চন্দের ছেলে। তারা ৬ ভাই ও এক বোন। সুদীপ অষ্টম শ্রেণি পাস। ইউপি সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সংসার চালানোর তাড়নায় ছাড়তে পারেননি এই পেশা। তিনি দিনের বেশির ভাগ সময় দোকানে কাজ করেন। আর সুযোগ পেলেই ইউনিয়ন পরিষদ আর জনগণের জন্য কাজ করেন সুদীপ। তা ছাড়া দোকানে কাজের ফাঁকেও জনগণের সেবার নিয়োজিত থাকেন তিনি। দোকানে নরসুন্দরের কাজ করে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করেন, যা দিয়ে পরিবারের খরচ জোগান সুদীপ চন্দ।

সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসভার থানা পয়েন্টে স্টাইল অন জেন্টস পার্লারে নরসুন্দরের কাজ করছেন ইউপি সদস্য সুদীপ চন্দ। তিনি দোকানে চুল কেটে ব্যস্ত সময় পার করছেন। দোকানে অনেকে চুল, দাড়ি ও গোঁফ কাটার জন্য বসে আছেন। সেই সঙ্গে নাগরিক সেবা সংক্রান্ত কাজে তার ওয়ার্ডের লোকজনও আসছেন তার কাছে।

ইউপি সদস্য সুদীপ চন্দ বলেন, স্ত্রী ও এক ছেলেসন্তান নিয়ে তার পরিবার। পেটের দায়ে প্রায় ২০ বছর আগে তিনি শুরু করেছিলেন নরসুন্দরের কাজ। জনগণ তাকে ভালোবাসেন। তাই জনগণই তাকে ইউপি সদস্য বানিয়েছেন। কিন্তু ইউপি সদস্য হয়ে তিনি ৩ হাজার ৬০০ টাকা ভাতা পান। এ টাকা দিয়ে বর্তমান সময়ে একটা পরিবার চালানো কোনোমতেই সম্ভব না। তা ছাড়া পরিষদে যাওয়া-আসা আর জনগণের পেছনেই এর চেয়ে বেশি টাকা খরচ হয়ে যায়। তাই সংসারের চাল, ডাল, তরকারি ইত্যাদি কেনার জন্য তার কাছে কোনো টাকা থাকে না। তাই তিনি ইউপি সদস্য হয়েও নরসুন্দরের কাজ করে পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী সিলেটে অনার্স পড়ছেন। তার পাড়ালেখার খরচ, সন্তানের খরচ, তা ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি, সেটা সেলুনে কাজ করেও সামাল দিতে পারছি না।

দোকানে বসে থাকা খোকন মিয়া, জীবন সূত্রধর, অপু চৌধরী বলেন, সাধারণত চেয়ারম্যান-মেম্বাররা হঠাৎ করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যান, নয়তো অন্যরকম ভাব নিয়ে চলাফেরা করেন কিন্তু সুদীপ অন্যরকম। মেম্বার নির্বাচিত হলেও সততার কারণে তার সাদামাটা জীবনে আসেনি তেমন পরিবর্তন।

রনারচর গোপাল জিউর মন্দিরের সভাপতি প্রফুল্ল তালুকদার বলেন, তার আচার-ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে এলাকার লোকজন তাকে ইউপি সদস্য বানিয়েছে। তার কাছে লোকজন সুবিধা-অসুবিধার কথা বলতে পারে। মেম্বারও সাধ্যমতো মানুষের সাহায্য করেন। একজন ইউপি সদস্য হিসেবে সুদীপ যে সম্মানী ভাতা পান, তা দিয়ে কোনো পরিবারের খরচ চালানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া তার তেমন কোনো জমিজমা নেই। তাই নরসুন্দরের কাজ করেই সুদীপ পরিবার চালান।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী বলেন, ইউপি সদস্য সুদীপ চন্দের নরসুন্দরের কাজ করা একইসঙ্গে কষ্টের ও আনন্দের । এর মাধ্যমে বোঝা যায় সুদীপ চন্দ ইউপি সদস্য হওয়ার পরেও সহজ-সরল জীবনযাপন করেন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের পথ বেছে নেননি। সুদীপ চন্দের মতো জনপ্রতিনিধি পাওয়া তার এলাকার লোকজনের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আব্দুজ জাহির বলেন, সুদীপ চন্দ হলেন রাজানগর ইউনিয়ন পরিষদের একজন জনপ্রিয় মেম্বার। আজকাল মানুষের সন্দেহ মেম্বার, চেয়ারম্যান হওয়া মানেই জনগণের হক আত্মসাৎ করা, অবৈধ টাকার পাহাড় গড়া, গ্রাম্য বিচার-সালিশে ঘুষ খাওয়া, বিভিন্ন সার্টিফিকেট প্রদানে টাকা আদায় করা ইত্যাদি। কিন্তু মেম্বার সুদীপ চন্দ একজন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী মানুষ। কারও কাছ থেকে কোনো প্রকার টাকা দাবি করেন না। নরসুন্দরের কাজ করে পরিবারের খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন জনপ্রতিনিধি দেশে বিরল।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি