সিলেট-ঢাকা রেলসেবা, যাত্রীদের অসন্তোষ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি;
  • প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ৬:৩৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে

পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে প্রতিদিন শত শত যাত্রী ঘুরতে আসেন। আনন্দ ভ্রমণে আসার জন্য তারা ট্রেনই বেছে নেন। তবে রেলওয়ের যাত্রীসেবা নিয়ে তারা বারবার অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। যদিও রেল বিভাগের নির্লিপ্ততায় সমাধান হচ্ছে না এসব সমস্যার। ১৯১২ সালের শুরুর দিকে ব্রিটিশরা রেলগাড়ি দিয়ে চাসহ বিভিন্ন পণ্য চট্টগ্রামে পরিবহনের উদ্দেশে শ্রীমঙ্গলে রেল স্টেশন স্থাপন করে। পরে আস্তে আস্তে এখানে ট্রেনে ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এই স্টেশন রেলপথ বিভাগের আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের অন্তর্ভুক্ত।

রেলের হিসাব মতে- এ পথের ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন শ্রীমঙ্গল স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা সিলেট রেলপথের উপবন এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও পারাবত এক্সপ্রেস। চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথে উদয়ন এক্সপ্রেস ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস। সেই সাথে দুটি লোকাল ও মেইল ট্রেন এই স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার শত বছর অতিক্রম হলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত ঐতিহ্যবাহী এই রেল স্টেশনের যাত্রীসেবার মান দিন দিন কমছে। ঢাকা-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে প্রতিদিন ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল করে। তবে বর্তমানে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের জালালাবাদ এক্সপ্রেস মেল ট্রেন বন্ধ রয়েছে। ভ্রমণকারীরা টিকেট সঙ্কট, অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার, পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থার অভাব, অপরিচ্ছন্ন প্ল্যাটফর্ম, দুর্বল রেল লাইন, এবং প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ত সেবার মান নিয়ে অসন্তুষ্ট।

এসব ঝুট ঝামেলা পেরিয়ে একজন যাত্রী ট্রেনে সওয়ার হওয়ার পর থেকে গন্তব্য পৌঁছাতে যে অভিজ্ঞতার মুখে পড়েন তা আরো ভয়াবহ। অতিরিক্ত স্ট্যান্ডিং যাত্রী বহন, হিজড়াদের চাঁদাবাজি, কলা বিক্রেতা, লেবু, আনারস, বাদাম, ঝালমুড়ি, পানীয়, তাবিজ বিক্রেতা, ফকির, সঙ্গীতজ্ঞ থেকে পাগল-কী নেই ট্রেন যাত্রায়! রীতিমতো গুলিস্তানের আবহ। এসব হকার আর ফেরিওয়ালার উৎপাত চরমে পৌঁছে। সংঘবদ্ধ হিজড়াদের চাঁদাবাজি নিয়ে যাত্রীদের হাতাহাতি প্রতিদিনের ঘটনা। এসব দেখার যেন কেউ নেই। যাদের দেখার কথা তাদের ব্যতিব্যস্ত থাকতে দেখা যায় বিনা টিকিটের যাত্রী ও তাদের বস্তা-পুটলি নিয়ে।

রেলস্টেশনের কাউন্টার ও মোবাইল অ্যাপে আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটগুলো ভাগ করে দেওয়া হলেও এর থেকে সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা। কালোবাজারিরা বাজারে ছাড়ার সাথে সাথে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে দ্রæত টিকিট কেটে বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছে।

কম দাম, স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদ ভ্রমণ ও পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় এই স্টেশনের টিকিটের চাহিদা বেশি। বেশি চাহিদার বিপরীতে শ্রীমঙ্গলের বরাদ্দ কম। এই অল্প বরাদ্দের টিকিটের উপর আবার অলিখিত কোটা রয়েছে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও ভিআইপিদের। ফলে সাধারণের টিকিটের চাপ সবসময় থেকেই যায়।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, শ্রীমঙ্গল-ঢাকাগামী চারটি এবং শ্রীমঙ্গল-চট্টগ্রামগামী দুইটিসহ মোট ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন যাতাযাত করে। ট্রেনগুলো হলো- ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, পারাবত এক্সপ্রেস ও উপবন এক্সপ্রেস। এছাড়া চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন হলো পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনী এক্সপ্রেসে শ্রীমঙ্গলের আসন মাত্র ৯৬টি। ঢাকাগামী আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসে শ্রীমঙ্গলের জন্য আসন মাত্র ৬৫টি। ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেসের শ্রীমঙ্গলে আসন ১০৫টি। শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের শ্রীমঙ্গলের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৬৫টি আসন। চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে শ্রীমঙ্গলের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২৭টি আসন। সবচেয়ে করুণ অবস্থা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেসের। শ্রীমঙ্গলের জন্য বরাদ্দ আসন মাত্র ১৫টি।

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এবং উদয়ন লাকসাম, কসবা ও লাঙ্গলকোট স্টেশনের জন্য শ্রীমঙ্গল থেকে কোনো টিকিট বরাদ্দ নেই। ঢাকাগামী কালনীতে শায়েস্তাগঞ্জ, আজমপুর, ভৈরব এবং নরসিংদী স্টেশনের কোনো টিকিট নেই।

চট্টগ্রাম থেকে শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে আসা পর্যটক আব্দুল আলীম অভিযোগ করে বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল স্টেশনে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট মেলে না। যেহেতু শ্রীমঙ্গল পর্যটন নগরী, তাই এখানে পর্যাপ্ত টিকিটের ব্যবস্থা রাখা দরকার।’

অপর পর্যটক ইয়াসমিন নাহার ভারতে ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘ব্রিটিশরা একইসাথে ভারতবর্ষে ট্রেন যোগাযোগ চালু করলেও ভারত থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। অথচ সরকার রেলের পেছনে প্রচুর অর্থ খরচ করছে।’

শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল-ঢাকা এবং শ্রীমঙ্গল-চট্টগ্রাম রুটে ৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বরাদ্দ ৩৪৬টির মতো। বিভিন্ন পার্বন ও দীর্ঘ সরকারি ছুটির সময়গুলোতে টিকিটের চাহিদা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেলেও আমরা চাহিদামতো টিকিট তাদের দিতে পারি না।’

 

 

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি