মৌলভীবাজারে বেলি রাস উৎসব

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি;
  • প্রকাশিত: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:২৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ সপ্তাহ আগে

পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি হল একটি নতুন ফসল ঘরে তোলার উৎসব। এই দিনটি হিন্দু পঞ্জিকায় ‘উত্তরায়ণ সংক্রান্তি’ নামেও পরিচিত। এই দিনটি সূর্যের ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশের দিন। এই দিনটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্ব বহন করে। এই দিনটি ঘিরে বাঙালি সংস্কৃতিতে নানা ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এই দিনে নানা রকম পিঠে, পায়েস, মিষ্টান্ন খাওয়ার মধ্যে দিয়ে পৌষ পার্বণ পালন করা হয়। এই সংস্কৃতি ধরে রাখতে মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের সদর ইউনিয়নের বালিগাও গ্রামে পৌষ সংক্রান্তির দিনে রাস উৎসব করে থাকেন।

মূলত রাসযাত্রা বা রাস পূর্ণিমা, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রেমের উৎসব। হিন্দু ধর্মে এই পূর্ণিমা তিথির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাস মূলত বৈষ্ণব ধর্মের উৎসব। বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় শ্রীকৃষ্ণের প্রেম প্রকৃতির উৎসব। এই দিন গোপিনীদের সহযোগে রাধা-কৃষ্ণের পুজো করা হয়। কিন্তু তা ব্যতিক্রম ভাবে মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের সদর ইউনিয়নের বালিগাও গ্রামে পৌষ সংক্রান্তির দিনে রাস উৎসব করে থাকেন। এই দিন রাখাল নৃত্য, নৌকা বিলাস, কলঙ্ক ভঞ্জন, নিমাই সন্যাস, বেলী রাস করে থাকেন মনিপুরী সম্প্রদায়ের লোকেরা।
তার ধারাবাহিকতায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর বালিগাঁও গ্রামে পৌষ সংক্রান্তি উৎসব উপলক্ষে ১১৫তম ঐতিহ্যবাহী বেলিরাস অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাসনৃত্য মণিপুরী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধ্রুপদী ধারার এক অপূর্ব শৈল্পিক সৃষ্টি। রাসলীলায় যে নিত্য পরিবেশিত হয় সেটাই রাসনৃত্য নামে পরিচিত। এই রাস উৎসব বাংলাদেশের মণিপুরী সবচাইতে বড় ধর্মীয় এবং ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উৎসব। প্রতিবছর কার্তিকের পূর্ণিমা তিথিতে মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে রাস উৎসব পালিত হয় । মণিপুরী রাস ৫ ভাগে বিভক্ত। যথা- মহারাস, বসন্ত রাস, কুঞ্জ রাস, দিবা রাস, ‌নৃত্য রাস। এর মধ্যে সবচাইতে জাঁকজমকপূর্ণ ঐতিহ্যের শ্রেষ্ঠ ও প্রধান হলো মণিপুরী মহারাসলীলা। দিবারাস হলো মণিপুরী রাসনৃত্যের একটি ধারা। দিনের বেলায় শুরু হয়ে সুর্যাস্তের আগেই শেষ হয়ে যায় বলে এই রাসলীলাকে দিবারাস বলা হয় – মণিপুরী ভাষায় বেলিরাস। (বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষায় সূর্যকে বলা হয় বেলি) বলা হয়। সাধারন রাসলীলার সাথে এর আরেকটি পার্থক্য হলো এর পোষাক-পরিচ্ছদ, গান ও মুদ্রার ধরন রাসলীলা থেকে কিছুটা ভিন্ন। মণিপুরী মেয়েরা মণিপুরী পোশাক চাকচাবী পরণের বস্ত্র ও ইনাফী – ওড়না এবং অঙ্গে বিভিন্ন সাজসজ্জা – অলংকার – অলংকরণ ধারা সজ্জিত হয়ে। শ্রাস্ত্রীয় বিধি – নিয়ম অনুসরণ পূর্বক গোপী – যারা অংশগ্রহণ করেন ও রাধা – কৃষ্ণের অংশগ্রহণে নৃত্য ওস্তাদের নির্দেশনা অনুসারে অনুষ্টিত হয়ে থাকে। যে কোন ধর্মীয় উৎসব বা বিশেষ দিবসে নিজের মাবতকল্পে দিবারাস অনুষ্টিত হয়।
মঙ্গলবার (১৪জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বালিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেলি রাস অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি
সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এসময় গ্রামের হাজার হাজার মানুষের মিলনতীর্থে পরিণত হয় অনুষ্ঠানস্থল। মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরাও এ আনন্দে মেতে ওঠেন। হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা পেশার মানুষের পদচারণায় সকাল থেকে উত্তর বালিগাঁও মণিপুরীপাড়া মুখরিত হয়ে ওঠে। পাশেই এ উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা বসেছে।

উত্তর বালিগাঁও যুব ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি শিপলু সিংহ জানান, উত্তর বালিগাঁও গ্রামের প্রাক্তন শিক্ষক ভুবনেশ্বর সিংহের পিতা স্বর্গীয় ধন সিংহ শতবছর পূর্বে এই উৎসবের সর্ব প্রথম উদ্যোগ নেন। আমরা ধন সিংহ আয়োজন কে ধরে রাখতে এখনো এই উৎসব পালন করে আসছি।

আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মৃনাল সিংহা জানান, ‌‘প্রতিবছরের মতো এ বছরও পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে ১১৫ তম বেলিরাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেই হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘঠে। প্রশাসনের সহযোগিতা পেলে আমরা আরো বড় ভাবে অনুষ্ঠান করতে পারবো।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি