সব
বিশেষ প্রতিনিধি
করোনাকালেই জানা গেল, আইএসবধূ শামীমা বেগম আইএস পরিচালিত ড্রোন হামলার টার্গেট হতে পারেন। ইংল্যান্ডের কোর্ট অব আপিলে আইএস বধু শামীমা বেগমের পক্ষে একটি লিখিত আর্জি পেশ করা হলো। আর তাতেই শামীমার আইনজীবীরা ওই আশংকা ব্যক্ত করেন। ব্রিটিশ প্রেস বলেছে, লন্ডন থেকে সিরিয়ায় গিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগমকে হয়তো ইরাকে পাঠানো হতে পারে । শুক্রবার বৃটেনের ডেইলি মিরর বলছে, যদি সে ঘটনা ঘটে, তাহলে ইরাকে তার দ্রুত বিচারে মৃত্যুদ- হবে অবধারিত। এদিকে বৃটেনে তার আইনজীবীরা বলেছেন, ২০ বছর বয়স্ক আইসিসিকে তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার মামলায় ব্রিটিশ সরকারের এ পর্যন্ত ব্যয় হয়ে গেছে ৩০ হাজার পাউন্ড । এই ৩০ হাজার পাউন্ড ব্রিটিশ ট্যাকস পেয়ারসদের গুনতে হবে ।
মিরর লিখেছে, তার ব্রিটেনে ফিরে আসার লড়ই সফল হবে কি হবে না সেটা অত্যন্ত নিশ্চিত । কিন্তু এটা নিশ্চিত যে, তার জন্য বৃটেনের খরচ ইতিমধ্যেই ৩০ হাজার পাউন্ড অনুমান করা হচ্ছে।
শামীমা এই মুহূর্তে কোর্ট অফ আপিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। সান পত্রিকার মতে, শামিমার আইনজীবীরা হোম অফিসের কাছে তার পক্ষে মামলার খরচ দাবি করেছেন সাড়ে ১৪ হাজার পাউন্ড।
করোনার মধ্যে বিষয়টি ব্রিটিশ প্রেস আবার সামনে নিয়ে এসেছে । শামীমা বেগমের আইনজীবী ব্যারিস্টার টম হিকম্যান কিউসি বলেছেন, তার ক্লায়েন্টের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ঘটনায় মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ডে তার পুনরায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে ক্ষীণ করেছে ।
তবে হিকমেন মনে করেন, বর্তমানে তিনি যে অবস্থায় বন্দিত্ব গ্রহণ করে আছেন, সেটা শুধুমাত্র প্রত্যাবাসনের মধ্য দিয়েই শেষ হতে পারে । আর তার যাওয়ার দুটি গন্তব্য একটি বাংলাদেশ এবং অন্যটি ইরাক। বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের কথা উল্লেখ করে তার আইনজীবীরা বলেছেন, বাংলাদেশে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হলে যেভাবে জঙ্গিরা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের শিকার হয়, সেই একই ভাগ্য তাকে বরণ করতে হতে পারে। আর যদি তাকে ইরাকে ফিরিয়ে পাঠানো হয়, তাহলেও তার জন্য একটা দ্রুত বিচারে, যে বিচারের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই পূর্ব নির্ধারিত, বিচারকদের তরফ থেকে তিনি মৃত্যুদ-ই পেতে পারেন । কারণ এর আগে তার মত অবস্থানে থাকা নারীরাও মৃত্যুদ-ের রায় পেয়েছেন ইরাকি আদালতে।
মিরর আরো বলছে, আইএস বধূ শামীমার নাগরিকত্বের প্রশ্নের মীমাংসা ছাড়াই তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হতে পারেন।
তার আইনজীবীরা করোনাকালে চালু থাকা কোর্ট অফ আপিলের বেঞ্চকে বলেছেন, তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার যে সিদ্ধান্ত তার বিরুদ্ধে যদি তিনি কার্যকরভাবে একটি সুষ্ঠু আইনি চ্যালেঞ্জ নিষ্পত্তি করতে না পারেন, তাহলে তার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তটি অবৈধ হিসেবেই গণ্য হবে। ফেয়ার আপিল তার অধিকার।
তার আইনজীবীরা নতুন যুক্তি সমানে এনেছেন। বলেছেন, শামীমা যখন ইংল্যান্ড ত্যাগ করেন, তখন তিনি আইনের চোখে শিশু ছিলেন এবং তার সিদ্ধান্তকে একটি শিশুর নেয়া সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখতে হবে।
এদিকে হিউম্যান রাইটস গ্রুপগুলোও আবার নতুন করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে । সবশেষ রায়ে হারার পরে তারা কিছুদিন নীরব ছিল। এখন তারা বলছে তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ঘটনা শুধু তার ব্যক্তিগত বিষয় নয়। কারণ এর উপরে বৃটেনের সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত এবং অন্যান্য অনেক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে । সুতরাং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার প্রয়োগকে আইনগতভাবে চূড়ান্তভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতেই হবে।
কোর্ট অফ আপিল জমা দেয়া মানবাধিকার আইনজীবী রিচার্ড হার্মার, কিউ সি একটি লিখিত নিবেদনে বলেছেন, শামীমা এই মুহূর্তে যে অবস্থায় রয়েছেন, তাতে কোন রাষ্ট্রপক্ষ তাকে সুরক্ষা দিতে পারেনা এবং তিনি এখন যে ঝুঁকিতে রয়েছেন তা থেকে তাকে বাঁচাতে পারে না। কারণ তিনি কোন বৈধ কর্তৃপক্ষের আওতায় নেই । যেমন তিনি ড্রোন স্ট্রাইকের সম্মুখীন হতে পারেন। হার্মার বলেন, তার পরিণতি হতে পারে ভয়ঙ্কর । তাই তিনি কোর্ট অব আপিলকে বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাগরিকের অধিকার খর্ব করার মতো একতরফা সিদ্ধান্ত নেয়ার উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে হোম অফিস। কেবল ২০১৭ সালেই এধরণের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ১০৪ জনের নাগরিকত্ব হরণ করেছে তারা। আমরা বিনা চ্যালেঞ্চে শামীমার বিষয়টিে যতে দেব না।
পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী শামীমা বেগম ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আরও দুই বান্ধবীসহ সিরিয়ায় পাড়ি দেন। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। সেখানে আইএসে যোগ দিয়ে তিনি ডেনমার্কের বংশোদ্ভূত এক ধর্মান্তরিত ‘জিহাদি’কে বিয়ে করেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আল-হওর শরণার্থীশিবিরে শামীমার দেখা পান এক ব্রিটিশ সাংবাদিক। সাক্ষাৎকারে শামীমা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার আকুতি জানান। এর পরপরই যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে শামীমা বেগমের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল করেন। ওই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শামীমা বেগমের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব চাওয়ার সুযোগকে কাজে লাগান ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তখন এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘শামীমা বেগম বাংলাদেশের নাগরিক নন। তাকে বাংলাদেশে ফিরতে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।’
শামীমাও বিবিসির সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই এবং তিনি কখনো বাংলাদেশে ছিলেন না।
শামীমা বর্তমানে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের ‘রজ’ নামের একটি শরণার্থীশিবিরে আছেন।
সূত্রঃ দৈনিক একাত্তরের কথা
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি