শাবি: ভিসি’র বাসভবন এখনও ঘেরাও

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ৮:৫১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে

টানা চতুর্থদিনের মতো সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্দেশ দিলেও হল ত্যাগ করছেন না ছাত্র-ছাত্রীরা। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাদের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বিকাল সোয়া ৪টার উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করতে যান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এসময় গেটের সামনে তাদের বাঁধা দেয় পুলিশ। এসময় শিক্ষার্থীরা পুলিশ সদস্যদের ফুল দিতে দেখা যায়। আন্দোলনরতরা জানান, পুলিশ কোনো ধরনের লাঠিচার্জ- এমনকি গুলি করলেও করতে পারে, তাদের পক্ষ থেকে আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে। এরই স্মারক হিসেবে তারা পুলিশকে ফুল দিচ্ছেন।

শেষ খবর পাওয়া (বিকাল ৫টা) পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে শত শত ছাত্র-ছাত্রী অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন এবং অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন।

জানা যায়, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টরিয়াল কমিটি ও ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে আবারও উত্তাল হয়ে ওঠে শাবি। তারা ক্যাম্পাস না ছাড়ার ঘোষণা দেন। তবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার পর আজ সকালে কিছু কিছু শিক্ষার্থীকে হল ছাড়তে দেখা গেছে। তারা মূলত আতঙ্ক থেকে হল ছেড়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রাধ্যক্ষদের পদত্যাগ, হলের যাবতীয় অব্যবস্থাপনা দূর করে সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত এবং ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রাধ্যক্ষ কমিটি নিয়োগের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত গভীর রাত থেকে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। গত শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রীদের কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠে। এরপর পরিস্থিতি হয়ে ওঠে পুরোপুরি ঘোলাটে।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) দিনভর আন্দোলনে উত্তাল ছিল শাবি। এর মধ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। তাকে উদ্ধারে অ্যাকশনে যায় পুলিশ। এসময় তাদের রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্চে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। তখন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মচারী, পুলিশ সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীও আহত হন।

এদিকে, গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশের সহায়তায় মুক্ত হয়ে শাবি উপাচার্য বসেন জরুরি সিন্ডিকেট সভায়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়- বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। সোমবার (আজ) দুপুর ১২টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করেন। তারা রবিবার প্রায় সারা রাতই বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

এরপর সোমবার সকাল থেকে ফের আন্দোলন শুরু হয় শাবিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই আন্দোলনে শাবি এখন উত্তাল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে কয়েক দফায় বিক্ষোভ করেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা একযোগে শাবির বঙ্গবন্ধু হল, সৈয়দ মুজতবা আলী হল, প্রথম ছাত্রী হল ও বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী (দ্বিতীয় ছাত্রী হল) হলে তালা লাগিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাহপরান হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এসময় শাবিপ্রবি প্রশাসনের কাউকেই হলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন হল থেকে কিছু শিক্ষার্থী বেরিয়ে গেছেন। নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে তারা বেরিয়ে যান।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, পরিস্থিতি যেভাবে ঘোলা হয়ে ওঠেছে, পুলিশ ও ছাত্রলীগ যেভাবে মারমুখী অবস্থান নিয়েছে, তাতে ভয় ও আতঙ্ক থেকে তারা হল ছাড়ছেন।

এদিকে, শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. রাশেদ তালুকদারকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি