ফোন করে তরুণীকে ডেকে আনে সাইফুর

মঈন উদ্দিন ;
  • প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১০:৫৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

টিলাগড়ে এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মূল ফটকের বিপরীত দিকেই ফাস্ট ফুডের দোকান-ফুড গ্যালারি। ছাত্র-ছাত্রীরা সেখানে বসে আড্ডা দেয়, চা-পান করে, নাস্তা সারে। শনিবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে স্বামীসহ ফুড গ্যালারিতে আসেন কলেজ ছাত্রাবাসের ভেতরে ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী। তারা সেখানে কিছু সময় বসে গল্পগুজব করেন, ফুচকাও খান। সেখান থেকে উঠে কলেজের গেইট ধরে ভেতরে প্রবেশ করেন তিনমাস আগে বিয়ের পিঁড়িতে বসা ওই দম্পতি। ক্যাম্পাসে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন। এরপর কলেজের পেছনের গেইট দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন। নিজেদের প্রাইভেট কারযোগে গেইটের সামনে আসামাত্র একজন গাড়ির গতিরোধ করে দাঁড়ায়। নিজেকে সে র‌্যাব সদস্য বলে পরিচয় দেয়। একপর্যায়ে চালকের আসনে বসা তরুণীর স্বামীকে ড্রাইভিং সিট থেকে নামিয়ে দেয় র‌্যাব সদস্য পরিচয় দেওয়া তারেক। পাশে বসা তরুণীকেও নামিয়ে দেওয়া হয় গাড়ি থেকে। তারেক দু’জনকে নির্দেশ দেয় পেছনের সিটে গিয়ে বসার জন্য।

স্বামী-স্ত্রী নির্দেশ পালন করেন। পেছনের সিটে বসেন। সাথে সাথে অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সাইফুর ও শাহ রনি গাড়ির পেছনের দুই দরজা দিয়ে ঢুকে সিটে বসে পড়ে। দরজা লাগিয়ে দেয়। এই অবস্থায় দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে তারেক। গাড়ির গতি থামে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গিয়ে। তারেক, সাইফুর আর রনি নেমে পড়ে গাড়ি থেকে। এরপর জোর করে নামানো হয় তরুণী আর তার স্বামীকেও। দু’জনকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে স্বামীকে ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে আটকে রেখে বাইরে থেকে দরজার কপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসময় স্বামী অনুনয়-বিনয় করেন দরজা খোলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেটা কেউ কানে তুলেনি।

রাতের অন্ধকারে তরুণী তখন বাইরে একা হয়ে যান। তরুণদের হাত-পায়ে ধরে নিজেকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। শেষ রক্ষা আর হয়নি। নিজের সম্ভ্রম হারান। নিজেদের প্রাইভেট কারই এই সম্ভ্রম হারানোর স্বাক্ষী হয়। রাত আটটা-সাড়ে আটটার মধেই সব শেষ হয়ে যায় তরুণীর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, একপর্যায়ে ঘটনাটি আর ছাত্রাবাসের চার দেয়ালের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। এক কান দু’কান হয়ে এটি অনেকেই জেনে ফেলেন। কিন্তু ভেতরে কেউ যেতে পারছিলেন না। তাদের আটকে দেওয়া হচ্ছিল। মানুষ আটকানোর দায়িত্ব ছিলো জেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুল বিষয়ক সম্পাদক হোসাইন আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য নাজমুল ইসলাম, এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আলতাফ হোসেন মুরাদের উপর। তাদেরকে সঙ্গ দিচ্ছিলো কয়েকজন জুনিয়র ছাত্র। কিন্তু শেষমেষ সেটি ব্যর্থ হয়। শাহপরাণ থানা পুলিশের কানে যায় ঘটনাটি। তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। আদ্যোপান্ত শোনেন। সময় ক্ষেপণ হয়। রাত গড়ায় গভীরতার দিকে। এই সুযোগে ধর্ষকরা সটকে পড়ে। তখনো ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। সেটি করতে ঘটনাস্থলে আসেন রঞ্জিত গ্রুপের সিনিয়র অনেকে। দেন-দরবার হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে ধর্ষণের ঘটনাটি পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা জেনে ফেলেন। গণমাধ্যমও জেনে ফেলে সেটি। সমঝোতার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয় তখন। তরুণী আর তার স্বামীকে উদ্ধার করে হাসপাতালেও পাঠানো হয়।

এই ধর্ষণ ঘটনায় পুরো সিলেট স্তব্ধ হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ হন অনেকে। রাজপথ থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-সবখানেই প্রতিবাদ, নিন্দা। অনেকেরই আবার জিজ্ঞাসা, স্বামীসহ তরুণী সেখানে কেনো গিয়েছিলেন? তাকে ডেকে নিয়েছিলো কেউ?
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজেছে সিলেট ডায়রি । একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ধর্ষক সাইফুরই মোবাইল ফোনে ডেকে আনে তরুণীকে। সূত্রগুলো বলছে, ধর্ষণ করতেই তাকে সেখানে ডেকে আনা। এবং এটা অনেকদিনের পরিকল্পনারই অংশ।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি