পরিকল্পিত হত্যাকান্ড, স্বজনদের জানিয়েছিলেন হায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ৬:০৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৩ বছর আগে

সিলেট নগরীর লালবাজারে আবাসিক হোটেলের পেছন থেকে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার। নিহত রেজাউল করিম হায়াতের বোন মোছা. মীনা বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে সোমবার মধ্যরাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-৩) দায়ের করেছেন।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এমদাদিয়া হোটেলের দুই কর্মচারীকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মোহাম্মদিয়া হোটেলের চার কর্মচারীকে ছেড়ে দিয়েছে কোতোয়ালি পুলিশ।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ঢালারপার গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বাদি হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আসামি করা হয় পাশর্^বর্তী উত্তর রাজনগর গ্রামের মৃত চেরাগ আলীর ছেলে নিহত রেজাউল করিম হায়াত এবং তার ভাইদের।

পরবর্তীতে মামলাটি বাদিপক্ষের সাথে আপসে নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে জানান হায়াতের ভাই আব্দুর রহিম। স্থানীয়ভাবে মিমাংসা হলেও, বিষয়টি থানা পুলিশ কিংবা আদালতকে অবগত করা হয়নি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ওই মামলায় আদালত থেকে রেজাউল করিম হায়াতের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

বছরখানেক আগে রেজাউল করিম হায়াতের মেয়ে সুহেনাকে বিয়ে দেন একই উপজেলার চিকাডহর গ্রামের সুন্দর আলীর ছেলে সুমনের সাথে। বিয়ের পর হায়াত জানতে পারেন, সুমনের আগেও একটি বিয়ে করেছিলেন এবং তার সন্তানও রয়েছে। কিন্তু অতীত গোপন করে হায়াতের মেয়েকে বিয়ে করেন সুমন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে সুহেনাকে সুমনের ঘর থেকে নিয়ে আসেন হায়াত ও তার স্ত্রী মিনা বেগম। মাস তিনেক আগে সুমন ও সুহেনার মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।

এ নিয়ে রেজাউল করিম হায়াত ও তার স্ত্রীর মধ্যেও কলহ চলছিলো। এই কলহের জের ধরে অভিমান করে কিছুদিন আগে তিন সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি মাঝেরগাঁও গ্রামে চলে যান মিনা। গত বুধবার লোক মারফত হায়াত খবর পান, তাকে খুঁজছে পুলিশ। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো স্ত্রী মামলা দায়ের করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানায়।

চাচাতো ভাই আব্দুর রহিমকে বিষয়টি জানান হায়াত। গ্রেপ্তার এড়াতে বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিলেট নগরীতে চলে আসেন তিনি। প্রথমে তালতলাস্থ হোটেল বিলাসে কামরা নিলেও, পরবর্তীতে ওই দিন বন্দরবাজারের লালবাজার এলাকায় হোটেল এমদাদিয়া’র ২০১ নম্বর রুমে উঠেন হায়াত।

শনিবার সকাল ১১টায় হঠাৎ রেজাউল করিম হায়াতের নম্বর থেকে কল আসে আব্দুর রহিমের মোবাইলে। তিনি রহিমকে জানান, আমাকে মেরে ফেলবে, ‘হোটেল বিলাস থেকে কিছু লোকজন এসে আমাকে খুঁজছে। আমাকে ওরা মেরে ফেলবে। পুলিশকে বলো আমাকে যেন উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’ এরপর আত্মীয় স্বজনরা এলেও লালবাজারে হায়াতের সন্ধান পাননি। পরবর্তীতে সোমবার রেজাউল করিম হায়াতের রক্তাক্ত লাশ লালবাজারের হোটেল মোহাম্মদিয়া আবাসিকের পেছন থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

কোতোয়ালি থানার সহকারি কমিশনার সামসুদ্দিন ছালেহ আহমদ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদসহ এসএমপি, পিবিআই এবং সিআইডি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত হায়াতের বোন মীনা বেগম। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রাজনগর গ্রামে রেজাউল হায়াতের মরদেহ দাফন করা হয়।

নিহতের ভাই আব্দুর রহিম বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এতে হোটেল বিলাস এবং এমদাদিয়ার লোকজন জড়িত থাকতে পারে অথবা আমার ভাইয়ের মেয়ে সুহেনার শ^শুরবাড়ির লোকজনও জড়িত থাকতে পারে। এদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্য বেরিয়ে আসবে।

এদিকে এ ঘটনায় হোটেল এমদাদিয়ার ম্যানেজার প্রাণেশ সরকার (৪৭) ও কর্মচারী ফয়সাল আহমেদকে (২০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের। তিনি জানান, সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক হওয়া হোটেল মোহাম্মদীয়ার ম্যানেজার আব্দুর রউফ চৌধুরী, সহকারী ম্যানেজার শামীম, হোটেল কর্মচারী দেলোয়ার ও ফরিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ বলেন, ‘নিহতের পরিবারের দাবি, হোটেল বিলাস থেকে ঘটনার সূত্রপাত। আমরা সেই অ্যাঙ্গেল থেকেও তদন্ত করছি। লালবাজারের যে হোটেলে তিনি অবস্থান করছিলেন, সেই হোটেল এমদাদিয়ার দুই কর্মচারির আচেরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় এনেছি। আমাদের তদন্ত চলছে। শীঘ্রই প্রকৃত আসামিদের খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে পুলিশ।’

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি