‘দিবস দিয়ে কি হবে যদি ন্যায্য মজুরি না পাই’

কামরুল ইসলাম মাহি;
  • প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২২, ৯:৩৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে

সিলেট সদর উপজেলার ছালিয়া গ্রামের বাসিন্দা রফনা বেগম। কাজ করেন নির্মাণ শ্রমিকের। সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করে মজুরি পান ৩০০ টাকা। কিন্তু একই কাজ করে পুরষ শ্রমিকরা পাচ্ছেন পাঁচশত টাকা।

রফনা জানান, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করি। আমরা হাজিরা পাই সবোর্চ্চ তিনশ’ টাকা। একই কাজ করে পুরুষ শ্রমিকরা হাজিরা পান ৫শ’ টাকা।

নগরের আখালিয়া এলাকার রেজিনা জানান, ‘করোনায় কাজ বন্ধ থাকায় এক বেলা খেয়েছি তো দু’বেলাই খেতে পারিনি। মেম্বার-চেয়ারম্যান কিছুই দেয়নি। আমরা কারো কাছে কোনও কিছু পাইনি। পাশেই বসে থানা মাটি কাটা শ্রমিক নুরবানু বিবি জানান, আমাদের প্রত্যেক দিন কাজ করতে হয়। কাজ না করলে আমরা খাবো কি? নারী দিবস কি আমরা জানি না। কেউ আমাদের কিছু জানায়নি। আর দিবস দিয়ে কি হবে যদি সারাদিন কাজ করে ন্যায্য মজুরি না পাই।’

রফনা কিংবা রোজিনা জীবন জীবিকার তাগিদে মাঠে-ঘাটে কাজ করেন। কিন্তু প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হলেও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তারা। নারী দিবসে কি হয় এটাও জানেন না তারা।

সচেতন মহলের নাগরিকরা বলছেন- দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ স্থর পর্যন্ত নারীর পদচারণ রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন ন্যায্য মজুরি থেকে। পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে কাজ করেও কম বেতন ও মজুরি বৈষম্যের কারণে এখানকার নারীরা সাফল্যের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না। শ্রম আইন মানার কোনও বালাই নেই।

সিলেট শহরতলীর বেশ কয়েকটির এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- এসব এলাকায় রাজমিস্ত্রি, মাটি কাটা, গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার, মিল-চাতাল, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন ছোট-বড় কারখানায় নারী শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না তারা।

নগরের শহরতলীর শাহপরান এলাকার নারী শ্রমিক ফরিদা ইয়াসমিন জানান, করোনাকালে খুব কষ্ট হইছে। অনেকে কাজে নিতে চায়নি জোর করে কাজ করতে হয়েছে। কাজ না করলে তো আমাদের চলবে না। সরকারি বেসরকারি ভাবে কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না। টাকা পয়সা খাদ্য কোনটাই আমরা পাইনি।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহিনা আক্তার বলেন, ‘টেকসই আগামীর জন্য জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। সরকার নারীর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে।

নারীদের অধিকার ও ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তির বিষয়টি সময়ের ব্যবধানে থাকবে না। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা, সচেতনতা বাড়লে একসময় এসব সমস্যা দূর হবে। নারী শ্রমিকদের মজুরি কম দিলে তারা যদি আমাদের অভিযোগ করেন, তবে আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবো।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি