সব
হিংসাপ্রবণ, ধর্মান্ধ, কুসংস্কারে ভরপুর ছোট এক গ্রামে আমার জন্ম৷ তাই স্বাভাবিক ভাবেই আমার ছেলেবেলা কেটেছে অসুন্দরতার ভেতর দিয়ে।
সুন্দর বলতে ওই সময়ে যা কিছু ছিল তা হল গ্রামের রাস্তাঘাট, পুকুর, রেল লাইন, গাছপালা, আর শুক্রবারে পুরো পাড়ার ছোটবড় সবাই মিলে সিনেমা দেখা।
আমার বাবার প্রতি আমার অনেক রাগ এবং ক্ষোভ আছে, কিন্তু আজকে বাবাকে আমি ছোট করে একটা ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাদের ঘরে একটা টেলিভিশন নিয়ে আসার জন্য।
আমি বোধ করি আমার ভেতরে নিজের মতো করে ভাবার রাস্তাটা তৈরি করে দিয়েছে ওই টেলিভিশনই। ২০০০ সালের কথা বলছি, ওই সময়ে আমাদের গ্রামে মাত্র একটাই টিভি ছিল।
সেই থেকে টিভিতে আলিফ লায়লা, ম্যাক গাইবার, হারকিউলিস, আর বাংলা সিনেমা দেখতে দেখতে কখন যে নিজের ভেতরেও সিনেমা নির্মাণের প্রবণতা দেখা দিল ঠিক মনে করতে পারিনা।
যতটুকু মনে পরে, রাস্তাঘাটে বের হলেই সুন্দর কোন দৃশ্য দেখলে চোখ আটকে যেত, মনে হতো যদি এই দৃশ্যগুলো ক্যামেরায় বন্দি করতে পারতাম, যদি মানুষকে আমার চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখাতে পারতাম।
ঠিক এইভাবে দৃশ্যের পর দৃশ্য গিলতে গিলতে গিলতে গিলতে এক সময় মাথা ছাড়া দিয়ে উঠলো সিনেমার ভূত। মনে হতে লাগলো সিনেমার চেয়ে ভালো অন্য কিছু আমি করতে পারবনা।
এসব বলছি দেখে খুব ভালো সিনেমা যে বানিয়ে ফেলেছি এমন নয়, কিন্তু আমার জীবনে এখন অবধি এর চেয়ে ভালো কিছু আমি করিনি। আমরা চার ভাই, আমি সবার ছোট। আমার বড় তিন ভাই বাবার পেশা বেচে নিয়েছেন।
এক সময় আমাকেও অনেক চাপ দেয়া হয়েছিল বাবার পেশা গ্রহণ করার জন্য। কিন্তু আমি নতুন কিছু করতে চাইতাম, বাবা যা করছেন, ভাই যা করছেন তা করতে মন বসতনা। সবাই বলতো এই ছেলের ফিউচার শেষ। কাজটাজ কিছু শিখলনা, সিনেমা বানাবে হা হা হা। অবশ্য একটা সময় আমিও নিজেকে নিয়ে এমন উপহাস করেছি।
আমি যে জায়গা থেকে উঠে এসে ফিল্ম নির্মাণ করলাম মাঝে মাঝে আমারই তো সেটা বিশ্বাস হয়না। আপাতত ফ্রিল্যান্সার সিনেমাটোগ্রাফি করে ভাত খাই, এবং নিয়মিত ফিল্ম বানানোর চেষ্টায় আছি।
শীগ্রই মেইনস্ট্রিমে কাজ করতে যাচ্ছি, এর পরপর প্রডিউসার পেলে আমার ড্রিম প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করবো। সিনেমার জন্য কতো কঠিন সময়, কত ত্যাগ, কত লাঞ্চনা-বঞ্চনা সইতে হল তা আমি ছাড়া কেউ জানেনা।
এসব আমি জানাতেও চাইনা, সবার জীবনেই, সব খেত্রেই এমন কঠিন সময় যায়। বিশেষ করে শিল্প সাহিত্য নিয়ে কিছু করতে গেলে তো বিপদের সাথেই বসবাস করা লাগে প্রতিটা মুহুর্ত। এই সাহসটুকু থাকলে সফলতা আসার সুযোগও তৈরি হয়। এবার আসি আমার সিনেমার কথায়।
‘একজন ঈশ্বরের গল্প’ গত তিনমাসে পঁচিশটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করে সসাতটি এ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছে। আমেরিকা, ইতালি,কানাডা, মেক্সিকো, সুইডেন, ইন্ডিয়া, লেবানন, ভেনিজুয়েলা, পানামা, তুর্কির মতো দেশগুলোতে প্রিমিয়ার হয়েছে।
সবচেয়ে বড় খুশীর খবর হচ্ছে গত দুই দিন আগে রাজশাহী ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা সিনেমা ও সেরা সিনেমাটোগ্রাফির পুরুষ্কার জিতে নিয়েছে “একজন ঈশ্বরের গল্প”।
শীঘ্রই বাংলাদেশের আরো ফেস্টিভ্যাল গুলোতে প্রিমিয়ার হবে। সিনেমার ট্রেইলার এবং একটি গান এরি মধ্যে দর্শকদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছে।
রোজ কেউ না কেউ মেসেঞ্জারে এসে অভিনন্দন জানান, মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেন, জানতে চান কবে রিলিজ। আমি আপাতত রিলিজের কথা ভাবছিনা, সামনে আরো অনেক বড় বড় ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আছে সেগুলো শেষ হবার পর রিলিজ ডেট জানাতে পারবো আশা করি।
লেখক :: লায়েক আহমেদ পবন ( ডিরেক্টর – একজন ঈশ্বরের গল্প)
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি