আমরা কোভিডের মতো বন্যাও একসাথে মোকাবেলা করব : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২২, ৯:২৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২ বছর আগে

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন ভয়াবহ বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৯০ ভাগ এলাকা পানির নিচে ডুবে গেছে। দেশের মধ্যে এবারের ভয়াবহ বন্যা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সুনামগঞ্জ ও সিলেটের মানুষ। বন্যার শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি মনিটরিং করেছেন বলেই একটি মানুষও না খেয়ে ও বিনা চিকিৎসায় মারা যায়নি। সেনাবাহিনীসহ সরকারের সব বিভাগসমূহ প্রধানমন্ত্রীর তত্ত¡বধানে এক যুগে কাজ করায় শতবছরের মধ্যে ভয়াবহ এই আমরা ভালোভাবে সামাল দিতে পেরেছি।

সোমবার (২৭ জুন) দুপুর দেড়টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সম্মেলনকক্ষে সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থতি, ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সভায় বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, বিভিন্ন হাসপাতাল ও সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

জাহিদ মালেক আরও বলেন, আমরা সবাই এক টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করতে পেরেছিলাম বলে কোভিডকে ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছি। বিশে^র ২০০টি দেশের মধ্যে কোভিড মোকাবেলায় আমরা পঞ্চম সফল দেশ। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম। তেমনি আমরা সবাই একইভাবে এই ভয়াবহ বন্যাও মোকাবেলা করতে পারবো। কেউ বিনা চিকিৎসায় ও না খেয়ে মরবেনা ইনশাল্লাহ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যারা কোভিডের টিকা দেওয়ার যোগ্য আছেন এরকম ৯৮ ভাগ মানুষকে আমরা টিকা দিয়েছি। বিশে^র অনেক দেশ আছে কোভিডের ১০ ভাগ টিকাও এখনও তাদের নাগরিকদের দিতে পারেনি। আমরা এতে সফল হয়েছি আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গাইড লাইনের কারণে।

এই ভয়াবহ বন্যায় শুধু স্বাস্থ্য বিভাগ ১০ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চিকিৎসার পাশাপাশি বন্যাদুর্গত মানুষদের আশ্রয়ও দিয়েছি। বন্যার শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমিসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিন প্রতিটি কর্মী রাতদিন কাজ করেছে। সিলেটে ১৫০ থেকে ২০০টি মেডিকেল টিম কাজ করেছে। এখনও চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে সাধারণ তো ডায়রি ও কলেরার প্রার্দুভাব দেখা দেয়। তবে আশার বিষয় হলো এখনো এমন কোনো খবর আমরা পাইনি। আমরা বন্যা পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত আছি। আমাদেও স্বাস্থ্যেও সচিব ও ডিজিসহ সবাই এ নিয়ে এক যোগে মাঠে কাজ করছেন।

সারা দেশে বন্যা মোকাবেলায় আমাদের ৪ হাজারটি মেডিকেল টিম রেডি আছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বন্যায় সবচেয়ে বেশি সাপে কাটা, ডায়রিয়া, চর্মরোগি বেশি আসেন। বন্যা বাহিত কোনো রোগের ওষুধের যেন কোনো ঘাটতি না হয় সেদিকে আমরা খেয়াল রাখছি। ওষুধ ও চিকিৎসার কোনো অভাব হবেনা। সারা দেশে বন্যা মোকাবেলায় আমাদের ৪ হাজারটি মেডিকেল টিম রেডি রেখেছি। যেকোনো প্রয়োজনে তারা কাজ করবেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে কোনোদিন পানি উঠেনি। কিন্তু এবার দেখলাম হাসপাতালে তিন ফুটের মতো পানি উঠেছে। ভবিষ্যতে যাবে আরও বড় বন্যা হলেও হাসপাতালে পানি না ঢুকে সেব্যাপারে কাজ শুরু করতে আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ কারিগরি দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা এটি খতিয়ে দেখছেন।

জাহিদ মালেক আরও বলেন, যেসব হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বন্যায় ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করে তা দ্রæত সমাধান করা হবে। কোনো যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে, সেগুলো সারিয়ে তোলা হবে, প্রয়োজনে নতুন যন্ত্রপাতি দেবো।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কাজ করলে সমালোচনা হবে। একটু আধটু ভুল হতেই পারে। তবে যারা সমালোচনা করেন তারা কাজ করেন কম। তারা কাজ না কওে সমালোচনা করতে থাকেন এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। ইতিবাচক দিকগুলোও তুলে ধরতে হবে।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বেসরকারী মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের মহাসচিব সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান, সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ বেসরকারী মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. এমএ মুবিন খান ও সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান।

আরও বক্তব্য রাখেন, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ময়নুল হক, স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের পরিচালক ডা. ডহমাংশু লাল রায়, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমেদ, স্বাচিপ সিলেটের আহবায়ক অধ্যাপক ডা. রোকন উদ্দিন আহমদ, সুনমাগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. আহমদ হোসেন প্রমুখ।

এর আগে সোমবার সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে প্রথমে সুনামগঞ্জে, পরে সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরে সকাল ১১টার দিকে সেটি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে ওসমানী হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন মন্ত্রী।

এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রায় ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বন্যা উপদ্রæত বিভিন্ন উপজেলা বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে হস্তান্তর করেন মন্ত্রী।

 

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি