সব
২০০৬ সালে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন ফরিদ আহমেদ ইমন। তারা দুজনেই ছাত্রজীবন সমাপ্তি করেছেন বেশ কয়েক বছর আগে। আনোয়ার হোসেন এখন আইন পেশায় এবং ইমন আছেন ব্যবসায় । দুজনেই বিবাহিত। তাদের সন্তানরাও এখন স্কুল-কলেজের ছাত্র। তারা ছাত্রত্ব থেকে বিদায় নিয়েছেন।
কিন্তু দীর্ঘ একযুগর অধিক সময় ধরে এখনও পর্যন্ত ছাত্রলীগ তাদেরকে আগলে ধরে রেখেছে । শুধু সভাপতি আনোয়ার কিংবা সাধারণ সম্পাদক ইমন নয়, ছাত্রলীগের এই কমিটির অন্য সদস্যরাও জানেন না তারা কিভাবে এখনো ছাত্রলীগের কমিটিতে আছেন! কারণ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নতুন কমিটি করতে হলে প্রথমে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হয়। ২০০৬ সালের ছাত্রলীগের এই কমিটি এখন পর্যন্ত বিলুপ্ত ঘোষণা না হওয়ায় কমিটির সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতি ছেড়ে দিলেও ছাত্রলীগ তাদের দুজনকে ছাড়েনি।
এই কমিটির সবাই এখন সংসারী, অনেকে রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন পেশায় সম্পৃক্ত হয়েছে, কেউ বিয়ে করে সন্তানে বাবা হয়েছেন আবার কারোর সন্তানও পড়াশোনা করছে স্কুল-কলেজে। প্রায় দীর্ঘ পনেরো বছর ধরে দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কোনো কমিটি না হওয়ায় উপজেলা জুড়ে ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্রসংগঠনটির সাংগঠনিক অস্তিত্ব সংকটে পরেছে।
জানা যায়, ১৯৮৮ সালে দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথম কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমদ তারেক। এরপর ১৯৯২ সালে ফরিদ আহমদ তারেককে সভাপতি ও সায়াদ আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০০৩ সালে সুকেশ রায়কে আহবায়ক করে ২১ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
পরবর্তীতে ২০০৬ সালে আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি ও ফরিদ আহমেদ ইমনকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের ৫১ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করেন তৎকালীন সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তনুজ কান্তি দে ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী উজ্জ্বল।
এরপর থেকে কোনো কমিটি না হওয়ায় উপজেলা জুড়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক রাজনীতিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে। বর্তমানে নতুন কোনো কমিটি না থাকায় অনেকে নিজেদেরকে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক দাবি করছেন। পোস্ট ব্যানারে আহবায়ক দাবি করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে অনেককেই। এতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরেছেন সাধারণ কর্মীরা।
মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির সভাপতি এডভোকেট আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ ইমন প্রতিবেদককে জানান, আমরাতো ছাত্ররাজনীতি কবেই ছেড়ে দিয়েছি। এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। কিন্তু এরপরও আমাদের সেই কমিটি কেন এখনও বিলুপ্ত করা হয়নি তা আমাদের জানা নেই।
এতে করে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা সম্ভব হচ্ছেন না। নতুন নেতৃত্ব তৈরি না হলে রাজনীতি আর রাজনৈতিকদের দখলে থাকবেনা। ছাত্ররাও রাজনীতি বিমুখ হয়ে পরবে। রাজনীতি চলে যাবে ব্যবসায়ীদের দখলে। এর দায় আমরা এড়াতে পারিনা।
দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগ কর্মী সন্দীপ সরকার তুষার জানান, জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের উদাসীনতার কারণে আমাদের উপজেলা ছাত্রলীগ দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় ধরে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেনা। এই সময়ের মধ্যে যারাই জেলার দায়িত্বে ছিলেন কিংবা এখন দায়িত্বে আছেন তারা কেউই এই বিষয়টি গুরুত্ব দেননি।
আমরা জেলার নেতৃবৃন্দের কাছে বার বার ধরনা দিয়েছি, তারা হবে হচ্ছে বলে শুধু দায়সারা আশ্বাস দিয়েছে, এর বাইরে কিছুই করেনি। ১৬ বছর ধরে ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে ব্যক্তি উদ্যোগে ছাত্রলীগের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি।
নতুন কমিটি না হওয়ায় আজ পর্যন্ত কোনো কমিটিতে আমাদের ঠাঁই হয়নি। এখন আমাদের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দীপঙ্কর কান্তি দে-র মোবাইলে একাধিক বার কল দেওয়া হয়েছে। কল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি লিখন আহমেদ জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের কোন কমিটি দেওয়া হয়নি। যে বা যারা আহবায়ক দাবি করছেন তাদের কোনো বৈধতা নেই। কমিটি না থাকার কারণেই সিভি জমা দেওয়ার আহবান করা হয়েছিল। আমরা ইতোমধ্যে চারটা কমিটি দিয়েছি। বাকি অন্যান্য কমিটি অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়াধীন আছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান রিপন জানান, দোয়ারাবাজার উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি করার জন্য ২০১৮ সালে আমরা সিভির আহবান করে ছিলেন। অনেকের সিভি জমা পরেছে। এগুলো যাচাই বাছাই চলছে। নতুন কমিটি দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই আমরা কাজ করছি।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি