সব
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ‘আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি’ লিখিত পরীক্ষায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ ইতিমধ্যে পুলিশের খাঁচায় ধরা পড়েছেন। এবার সুনামগঞ্জের সাবেক এক এমপির ছেলেকে খুঁজছে পুলিশ। যিনি সদ্যই যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক ফজলে রাব্বি স্মরণ পরীক্ষায় বাধা দেওয়া বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি। পুলিশের চোখে তিনি এখন পলা
ফজলে রাব্বি স্মরণের বিরুদ্ধে পুলিশের কর্তব্যে বাধা প্রদান, মারধর, ভাঙচুর, পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বাধা প্রদান, পরীক্ষার খাতাপত্র ছিঁড়ে ফেলা এবং পরীক্ষার্থীদের জোর করে হল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু একটি সূত্রে জানা গেছে, স্মরণ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং কোনো প্রকার গণ্ডগোল ছাড়াই তিনি ৪ ঘন্টা লিখিত পরীক্ষা দিয়েছেন। মামলার আসামি হওয়ায় বর্তমানে তিনি আইনের চোখে পলাতক। স্মরণকে খুজঁছে পুলিশ। এখন পর্যন্ত তার ব্যক্তিগত অথবা তার সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষানবিশ আইনজীবী পরিষদ থেকে কোনো বিবৃতিও আসেনি।
জানা গেছে, করোনা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ‘আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি’র লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন সারা দেশের প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের দোহাই দিয়ে পরীক্ষাটি বাতিলের জন্য চলতি বছরের ৭ জুলাই আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের একাংশ। লিখিত পরীক্ষা বাদ দিয়ে শুধু মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার দাবীও জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারীরা। বার কাউন্সিল ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নিয়মিতভাবে তাদের কর্মসূচি চলছিল। আইনমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও, মশাল মিছিল, আমরণ অনশন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাররে স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্নভাবে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবীরা। শুরু থেকেই এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন ফজলে রাব্বী স্মরণ। স্মরণের নেতৃত্বে চলতি বছরের ৯ আগস্ট রাজধানীর পরীবাগে বার কাউন্সিলের অস্থায়ী কার্যালয়ে সচিবের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষানবীশ আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক সুমনা আক্তার লিলি, একে মাহমুদসহ অন্যরা। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। আন্দোলনের মুখে ২৬ সেপ্টেম্বরের নির্ধারিত লিখিত পরীক্ষা স্থগিতও করা হয়। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর বার কাউন্সিল থেকে ‘আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি’ লিখিত পরীক্ষার সময় ঘোষণা করা হয়। এতেও আপত্তি জানান আন্দোলনরত বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষানবীশ আইনজীবী পরিষদের নেতাকর্মীরা। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষানবীশ আইনজীবী পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ৮ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীর পক্ষ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের লিখিত পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন স্মরণ নিজে। কিন্তু গত শনিবার নির্ধারিত দিনে তিনি রাজধানীর টিকাটুলিস্থ সেন্ট্রাল ওমেনস কলেজে বার কাউন্সিলের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। তার রোল নম্বর ৪৪০০৬ বলে জানিয়েছেন এক পরীক্ষর্থী। স্মরণের হলের দুজন পরিক্ষার্থী কেন্দ্র থেকে বহিষ্কার হলেও, তিনি দিব্যি ৪ ঘন্টা বসে পরীক্ষা দিয়েছেন। সেই কেন্দ্রে কোনো ধরণের গণ্ডগোলও হয়নি।
এদিকে, ঘটনার পর থেকেই স্মরণ আত্মগোপনে রয়েছেন। তার সংগঠন বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষানবীশ আইনজীবী পরিষদ থেকেও কোনো ধরণের বিবৃতি আসেনি। বর্তমানে নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষানবীশ আইনজীবীরা। বক্তব্য নেওয়ার জন্য স্মরণের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অপরদিকে, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ‘আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি’ লিখিত পরীক্ষায় রাজধানীর ৯টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে ৫টি কেন্দ্রে গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা ঘটায় ওই কেন্দ্রগুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যাদের ইন্ধনে পরীক্ষায় গণ্ডগোল সৃষ্টি এবং যারা পরীক্ষা কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পরীক্ষা বানচালের চেষ্টা করেছেন, তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তও নেয়া হয় এ সভায়।
শিক্ষানবিশ আইনজীবী আনোয়ারুল ইসলাম জানান, কে বা কারা পরীক্ষায় গণ্ডগোল করেছে আমাদের জানা নেই। আমরা আন্দোলন করেছিলাম পরীক্ষা পেছানোর জন্য এটা সঠিক। কিন্তু আমরা কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত নই।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ একাত্তরের কথাকে জানান, আইনজীবী অর্ন্তভূক্তি পরীক্ষা চলাকালে বিশৃঙ্খলায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজাহারনামীয় অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বার কাউন্সিল পরীক্ষায় গণ্ডগোলের ঘটনায় ৩ থানায় ৫টি মামলা দয়ের হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ৪৯ জন। মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে প্রায় এক হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে। এদের মধ্যে রয়েছেন এবং সিলেটের কাউন্সিলর তারেক আহমদ তাজ। রাজধানীর নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর এবং সূত্রাপুর থানায় ৫টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোতে আসামি করা হয় প্রায় এক হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে। ১৯ ডিসেম্বর রাতে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মইনুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১৪ নম্বর আসামি করা হয় বাংলাদেশ সম্মিলিত শিক্ষানবীশ আইনজীবী পরিষদের আহবায়ক ও যুবলীগ নেতা ফজলে রাব্বি স্মরণকে। তার বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর থানায় ২০১০ সালে দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলাসহ আরো দুটি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র : দৈনিক একাত্তরের কথা
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি