স্বাভাবিক ছন্দে কাতার: হাসি ফুটছে বাঙালিদের মুখে

আহমদ শুয়াইব;
  • প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২০, ২:০৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

প্রায় চার মাসের স্তব্ধ এক সময় পার করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে কাতার। অফিস-আদালত খুলছে, দীর্ঘ লক-ডাউন শেষে খুলে দেয়া হয়েছে শপিং মলও। যে কারনে ধীরে ধীরে ছন্দ ফিরছে জীবনযাত্রায়। ব্যস্ত হচ্ছে ধনকুবের এই দেশটির প্রাণকেন্দ্র দোহা। কাতার স্বাভাবিক ছন্দে ফেরায় সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন সে দেশে প্রবাসী বাঙালিরা। কাজ বন্ধ থাকায় দুঃসহ এক যন্ত্রণায় পড়েছিলেন তারা। অসহায় হয়ে পড়েছিলেন অনেকে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিলো কর্মহীন অনেকেই দেশ থেকে টাকা নিয়ে অন্ন যুগিয়েছিলেন। ৪ মাসের দুঃসহ সে স্মৃতি ভুলে কাজে ফিরছেন তারা।

উহানের এ দৈত্য সারা পৃথিবীর যাবতীয় স্বাভাবিকতাই তছনছ করে দিয়েছে। পেট্রো-ডলারের এই দেশটিতেও আঘাত হানে গত ফেব্রুয়ারিতে। কার্যত সে মাস থেকেই লকডাউনে চলে যায় কাতার। কর্মহীন হয়ে পড়েন কাতারে অবস্থান করা প্রায় দু লাখ বাঙালি। বৈশ্বিক মহামারি প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ইতিপূর্বে সারাবিশ্বে প্রায় ৫ লক্ষ ৭১ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৩০ লক্ষেরও উপরে। কাতারেও অনেক বাঙালি আক্রান্ত হন। মারাও যান অনেকে।

পারস্য উপ-সাগরের তীরে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে সর্বপ্রথম করোনার ট্রান্সমিশন ঘটে। সে মাসে মাত্র একজন সংক্রমিত রোগী সনাক্ত করা হয়। কিন্তু পরের মাস মার্চ থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পতে অদৃশ্য এ ঘাতক। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে দেশটিতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও। আক্রান্ত হয়ে পড়েন অনেক রেমিটেন্স যুদ্ধা।

কাতার সরকার করোনা সংক্রমণ রোধে সর্বপ্রথম দেশটির সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় এরপর থেকে ধীরে ধীরে মসজিদ, পার্ক,সমুদ্র সৈকত, পাবলিক বাস, মেট্রোরেল, সেলুন, বিউটি পার্লার,হোটেল, রেস্তোরাঁ, এবং জনসমাগম হয় এমন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুলোও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। অফিস আদালত সীমিত পরিসরে খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হলেও কাজের সময় ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ৬ ঘন্টা বেঁধে দেওয়া হয়।

শিল্প নগরী সানাইয়া সম্পূর্ণরূপে লকডাউন এর আওতাধীন রাখা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বিমান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেশটির সরকার। করোনা সংক্রমণ রোধে উন্মুক্ত স্হানে যেখানে সেখানে জনসমাগম না করতে এবং বাহিরে বেরোলো মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। আইন অমান্যকারীদের জন্য রাখা হয় জেল জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির বিধান।

কাতারে ফেব্রুয়ারী মাসে করোনা আক্রান্ত রোগী ১ জন হলেও মার্চ মাসে আক্রান্ত হন ৭৮০ জন। পরের মাদ এপ্রিলে যা দাঁড়ায় ১১ হাজার ৮৩২ জনে। লাফিয়ে বাড়ে সংক্রমণ। এর ধারাবাহিকতায় মে মাসে ৪৩ হাজার ৫১১ জন আক্রান্ত হন। জুন মাসে ৩৯ হাজার ২১৩ জন এবং সর্বশেষ জুলাই মাসে ৭ হাজার ৪৬৯ জন আক্রান্ত হন।

করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু থেকে আজ পর্যন্ত দেশটিতে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩ হাজার ৫৯৮ জন এবং সর্বমোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪ লক্ষ ১২ হাজার ৬৮২ জনের।
কাতারে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১ লক্ষ ৩ হাজার ৫৯৮ জন রোগীর মধ্যে থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৯৯ হাজার ৭৪৩ জন। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু বরণ করেছেন ১৪৭ জন।

তনে চলতি মাসে এসে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে কাতার। বর্তমানে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার। সংক্রমণের হার গতমাসে ঊর্ধ্বমুখী হলেও চলতি মাসে অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেশটির জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষে আন্তরিক প্রচেষ্টা, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও আক্রান্তদের সুচিকিৎসার মাধ্যমে অচিরেই কাতার করোনা মুক্ত হবে এমনটাই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে করোনাভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব কমতে শুরু হওয়ায় সংক্রমণ রোধে দেশটির বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা ক্রমান্বয়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু মসজিদ ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এর জন্য শর্তসাপেক্ষে খুলে দেওয়া হলেও এখনো দেওয়া হয়নি জুম্মার নামাজ আদায় এর অনুমতি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন, মেট্রোরেল এখনো রয়েছে বন্ধ। তবে বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, পার্ক, সমুদ্র সৈকত শর্তসাপেক্ষে খুলে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে সল্প পরিসরে বিমান চলাচল শুরু করেছে দেশটির সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।
আরো সুখবর আছে, করােনা দুর্যোগে কাতারে চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েন বাঙালি অনেকেই। বর্তমানে কর্মহীন এসব প্রবাসীদের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে কাতার চেম্বার। কাতারস্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায়ও অনেক কর্মহীন প্রবাসী নতুন কর্মস্থলে যোগদান করছেন।

কাতার শ্রম মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কাতার চেম্বার এর মাধ্যমে চালু করা হয়েছে অনলাইনে কর্মহীন প্রবাসীদের জন্য কাজের আবেদন এর সুযোগ। যার ফলে খুব সহজে এখন কর্মহীন প্রবাসীরা বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজে যোগদান করতে পারবেন।
এদিকে কাতারে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের যারা দেশে যেতে ইচ্ছুক তাদের সুবিধার্থে চলতি মাসের
২০ এবং ২৪ তারিখ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর আরও দুটি বিশেষ ফ্লাইট চালুর কথা রয়েছে।

তবে যারা কাতার থেকে দেশে যেতে আগ্রহী তাদের অবশ্যই প্রথমে কাতারস্ত বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করতে হবে।
সব মিলেয়ে স্তব্দ সময় শেষে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে বিশ্বেএ সেরা ধনী দেশ কাতার। চার মাসের অসহায় জীবন শেষে হাসি ফুটছে দেশটিতে থাকা প্রবাসী বাঙালিদের মুখেও।

লেখক:
 সাংবাদিক আহমদ শুয়াইব,
দোহা- কাতার

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি