সব
ভাসান জলে ডুবে আছে কষ্ট-সুখের ঘর। চোখের জলে ভাসছে অনিশ্চিত আগামীকাল । ঘর কিংবা সংসার- কিছুই যেন অবশিষ্ট নেই আর। চার দিকে শুধুই অথৈ জল। সেই জলেই নাওয়ে (নৌকা) ভাসিয়েছেন জীবন-সংসার । যেন – স্বপ্ন ডুবে গেছে , ভেসে আছে দিশেহারা জীবন!
এ জীবন হাওর পাড়ের মানুষের। ‘বানের জলের সাথে চোখের জলের’ সে এক নিদারুণ যুদ্ধ।
হাওরের বুক ভর্তি এখন পানি। কান পাতলেই শুনা যায় আফাল ঢেউয়ের গর্জন। এর চেয়ে বেশী শুনা যায় বানভাসি মানুষের নিরব কান্নার শব্দ। ঢেউয়ে বুক ভাঙা আর্তনাদ। বর্ষা আসলেই সর্বনাশা দিন ফিরে হাওরে। পানি বন্দী জীবন থমকে দাঁড়ায়। বন্যা আসলেই যেন নিঃস্ব, অসহায় হয়ে ওঠেন হাওরের মানুষ। দিন যত যায়, সংকট তত গভীর হয়। ঘরে ঘরে ভাতের অভাব আসে। চারদিকে ঢেউয়ের তালে বাড়ে নিরন্ন মানুষের হাহাকার।
এবার বন্যায় ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছে সুনামগঞ্জে । তিন দফায় ভাসান জলে ডুবেছে সুনামগঞ্জ শহর, হাওর- জনপদ। শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্লাবিত হয়ে এলাকায় চলাচল ব্যাহত হয়েছে। সবচেয়ে বেশী বিপর্যস্ত হয়েছে হাওর। বন্যা স্থায়ী হয়েছে হাওরে। স্থায়ী হয়েছে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগও। হাওর পাড়ের অনেকের বসত ভিটা এখনো পানির নীচে। অনেকে আবার ঠাই নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। যারা যেতে পারেননি তারা খোলা আকাশের নীচে, পানিতেই নৌকায় কিংবা মাচায় জীবন ভাসিয়েছেন। আগামীদিন কী খাবেন এমন দুশ্চিন্তাই খেলা করছে যে জীবনে। এতে জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর দাবী আসছে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ আসছে।
সুনামগঞ্জের সাংসদ শামীমা শাহরিয়ার অবশ্য প্রথম থেকেই বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দল নিয়ে হাওরে ঘুরছেন তিনি। ‘হাওর কন্যা’ খ্যাতি পাওয়া এই নারী সাংসদ দেশকে জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জে বন্যা অনেকটা উন্নতির পথে। কিন্তু পানি কমছে ধীর গতিতে। যে কারণে হাওর পাড়ের মানুষ এখনো কষ্টে আছেন। আছে নানা দুর্ভোগও। পানি বাহিত রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি হাওরবাসীর পাশে আছেন বলে জানান। ত্রাণের পাশাপাশি বন্যার্তদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এবং বিভিন্ন পানি বাহিত রোগের ঔষধ পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তবে হাওরবাসীর এই ভয়াল দুর্দিনে আরো বেশী মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। ভাসান জলে ভেসে থাকা দিশেহারা মানুষগুলো অপেক্ষায় আছে। বাড়িয়ে আছে অসহায় হাত।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি