সব
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ভোট শেষে নির্বাচিত হয়েছেন ২২ জন পরিচালক। বিজয়ীরা নিজেদের মাঝ থেকেই একজন সভাপতি ও দুইজন সহসভাপতি বেছে নেবেন। এ লক্ষ্যেই সোমবার বৈঠকে বসেছিলেন বিজয়ীরা। তবে সমাপ্তি মধুর হয়নি। দিনভর উত্তেজনা ও নাটকীয়তা শেষে নির্বাচন কমিশন সোমবার রাত ১০টার দিকে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে মর্মে যে ঘোষণা দেয় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত পরিচালকরা।
এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে রাতে নগরীর জেলরোডে চেম্বারের কার্যালয় ঘিরে অবস্থান নেয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। নেতৃত্বে ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশ নিলেও কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। দুই প্যানেল থেকেই ১১ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হওয়ায় সভাপতি ও দুই সহ-সভাপতি নির্বাচন নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। সোমবার বিকেল থেকে দু প্যানেলকে নিয়েই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের সদস্যরা। দুই প্যানেল থেকেই সভাপতি ও সহ-সভাপতি নিজেদের প্রার্থী তালিকা সোমবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হয়। সভাপতি পদে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে আবু তাহের মো. শোয়েব, তাহমিন আহমদ ও ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদের নাম দেয়া হয়। অপরদিকে, সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে সভাপতি পদে একক প্রার্থী হিসেবে আব্দুর রহমান জামিলের নাম জমা দেওয়া হয়। সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচনে আপোষে আসার চেষ্টা করে দুই প্যানেল। এ নিয়ে দুই প্যানেলের মধ্যে নানামুখী সমঝোতার চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। এক পর্যায়ে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের আপত্তির প্রেক্ষিতে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের সভাপতি প্রার্থী আবদুর রহমান জামিল ও সহ সভাপতি প্রার্থী হুমায়ূন আহমদের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ চেম্বার কার্যালয় ত্যাগ করে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আব্দুল জব্বার জলিল বলেন- প্রেসিডিয়াম নির্বাচন সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে এবং এতে চেম্বারের সভাপতি হিসেবে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদকে নির্বাচিত করা হয়েছে। আর সিনিয়র সভাপতি হিসেবে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ ও সহসভাপতি হিসেবে একই প্যানেলের মো. আতিক হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন।
সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে নির্বাচিত জিয়াউল হক বলেন, দুই পক্ষের ব্যালট গ্রহণ করার পর যখন নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদ আমাদের প্রার্থিতা নিয়ে আপত্তি জানান। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। যেহেতু আপিল বোর্ড রয়েছে আপত্তি থাকলে তারা তা নিষ্পত্তি করবে তাই আমরা বিষয়টি আপিল বোর্ডের জন্য ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্নের দাবি জানাই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা আমলে নেয়নি।
সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে নির্বাচিত পরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রথমে প্রার্থীদের বৈধ ঘোষণা করা হলেও হঠাৎ আমাদের প্রার্থীদের অবৈধ ঘোষণা করা হয়। চেম্বারের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। এ রকম ঘটনা কখনও শুনিনি, দেখিনি। তিনি প্রশ্ন রাখেন এর পেছনে কারণ কী? কারা এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে, এরা কি আসলেই চেম্বারের ভালো চাচ্ছে? নজরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের চর্চা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে চেম্বার কখনওই সক্রিয় হবে না।
চেম্বারের সভাপতি-সহসভাপতি নির্বাচিত করার বিষয়টি সোমবার রাতে নির্বাচন কমিশন গণমাধ্যমকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। লিখিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানায়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুতেই সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে নির্বাচিত ১১ জন পরিচালক লিখিত আপত্তি উত্থাপন করেন যে, চেম্বারের সংঘবিধি না মেনে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ অর্ডিনারী শ্রেণী হতে ২ জন প্রার্থীর মনােনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তাদের আপত্তির প্রেক্ষিতে সংঘবিধি অনুসারে দুই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করবে বলে জানা গেছে।
শনিবার অনুষ্ঠিত ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুই প্যানেল- সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ ও সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ থেকে ১১ জন করে পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে অর্ডিনারি শ্রেণি থেকে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্যানেলের ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, ফখর উছ সালেহীন নাহিয়ান, মুশফিক জায়গীরদার এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের হুমায়ূন আহমদ, জহিরুল কবির চৌধুরী, ফাহিম আহমদ চৌধুরী, খন্দকার ইসরার আহমদ রকী, আলীমুল এহছান চৌধুরী, মো. আব্দুস সামাদ, দেবাংশু দাস মিঠু, মো. নজরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান জামিল বিজয়ী হয়েছেন। অ্যাসোসিয়েট শ্রেণি থেকে সিলেট সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তাহমিন আহমদ, মুজিবুর রহমান মন্টু, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাজিব ও কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান এবং সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদের জিয়াউল হক ও সরোয়ার হোসেন ছেদু। অপরদিকে, ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের চারজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- ট্রেড গ্রুপ শ্রেণিতে আবু তাহের মো. শোয়েব (চেম্বারের বিদায়ী সভাপতি), মো. হিজকিল গুলজার ও মো. আতিক হোসেন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন শ্রেণিতে আমিনুর রহমান। এ দুই ক্যাটাগরিতে চারটি পরিচালক পদে সিলেট ব্যবসায়ী পরিষদ কোনো প্রার্থী দেয়নি।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি