সব
দিন কয়েকের মাঝেই বেশ কয়েকটি জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে অনেককেই গ্রেপ্তার করেছে। ‘ঘরছাড়া তরুণদের খুঁজতে গিয়ে নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের খোঁজও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সম্প্রতি যারা র্যাব-পুলিশের খাঁচায় ধরা পড়েছেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনই সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দা।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ভাষ্য, সিলেট থেকেই নতুন করে জঙ্গিবাদের ঢেউ উঠেছে। এরই মাঝে রোববার ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। দেশজুড়ে তোলপাড় তোলা এ ঘটনায় যে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয় তাদের একজনের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। এর আগেও অনেকবার জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততায় সিলেটের নাম আলোচনায় উঠে এসেছে। এমনকি দেশের প্রথম জঙ্গিবিরোধী অভিযানও পরিচালিত হয়েছিলো সিলেটেই। ২০০৬ সালের সে অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান। এ অভিযানের সূত্র ধরে পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে আরো অভিযান পরিচালিত হয়।
এরপর নানা অভিযানে উঠে আসে সিলেটের নাম, “সিলেটিদের নাম। রোববার আদালতপাড়া থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের যে ঘটনা ঘটেছে এর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পুলিশ যাকে চিহ্নিত করেছে সেই জিয়াউল হকের বাড়িও সিলেট বিভাগেই। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি সিলেট হয়ে উঠছে জঙ্গিবাদের ‘হটস্পট’? এই প্রশ্ন ও প্রাসঙ্গিক আরও নানা বিষয় নিয়ে সোমবার একাত্তরের কথা মুখোমুখি হয় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফের। সিলেট কি জঙ্গিবাদের নতুন নিশানা? নিশারুল আরিফের কাছে মূল প্রশ্নই ছিলো এটি। নিজের মতো করে তিনি জবাব দেন এ জিজ্ঞাসার। দুই বছর ধরে নগর সিলেটের দায়িত্বে থাকা নিশারুল আরিফের বিশ্লেষণ বলছে, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেটের মানুষজন একটু ধর্মপরায়ণ। ধর্মীয় আচারআচরণ ও পোশাকের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা রয়েছে। এ সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিরা সিলেটে নিজেদেরকে অনেকটাই আড়াল করে রাখতে সক্ষম হয় ৷ এছাড়া তিন দিকে সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সহজে পালিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ রয়েছে সিলেটে। এজন্যই হয়তো সিলেটকে আলাদাভাবে টার্গেট করে জঙ্গিরা। তবে তিনি মনে করেন না সিলেট জঙ্গিদের জন্য কোনো ‘উর্বর ক্ষেত্র’। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষজন এখন অনেক সচেতন হয়েছেন, পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতাও আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। জঙ্গিরা সিলেটের সামনে কোনো হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারবে না বলেই মনে করেন তিনি।
রোববারের জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে। সতকর্তা জারি হয়েছে চারদিকে। সিলেটেও বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন পুলিশের প্রধান নিশারুল আরিফ। একসময় সিলেটের আদালতপাড়ার কাছাকাছিই ছিলো সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার। এখন কারাগারটি অনেকটাই দূরে, নগরের সীমা পেরিয়ে শহরতলিতে। এমন পরিস্থিতিতে আদালতে আসামি আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকি রয়েছে কি? ‘না’- সাফ জানিয়ে দেন এসএমপি কমিশনার। তিনি জানালেন যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করে কড়া পাহারাতেই আসামিদের আদালতে আনা নেওয়া করা হয়। তিনি তথ্য দেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে আসামিদের হ্যান্ডকাফিংসহ প্রয়োজনীয় বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিতে তিনি নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছেন। জর্দান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা ক্রাইসিস রেসপন্স টিমকে (সিআরটি) এক্ষেত্রে কাজে লাগাতে চান তিনি।
কাছাকাছি সময়ে সিলেটে দুটো বড় জমায়েত হয়ে গেলো। এর মধ্যে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম নামক সংগঠনের ব্যানারে পারাইরচকে ট্রাক ট্রার্মিনালে দুদিনব্যাপী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। এর পরদিন আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশ। দুই আয়োজনেই ব্যাপক লোক সমাগম হয়। এ ধরনের বড় সমাবেশে অঘটনের একটা শঙ্কা থেকেই যায়। পুলিশের ভাবনায়ও ছিলো সেটি-জানালেন এসএমপি কমিশনার। সে জন্য তারা আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন । নাশকতার শঙ্কায় ৮ নভেম্বর থেকেই তারা নগরীর হোটেল-রিসোর্টে নজরদারি বাড়ান । সে নজরদারি অব্যাহত থাকবে বলেই জানালেন এসএমপি কমিশনার। হোটেল- রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে অভ্যাগতদের পরিচয় সংক্রান্ত তথ্যের পাশাপাশি ছবি রাখার জন্যও।
জাতীয় নির্বাচনের খুব বেশি দেরি নেই। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। ইতোমধ্যেই রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিকে সুযোগ হিসেবেই দেখে বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠন। শুধু জঙ্গি সংগঠনই নয়, বিভিন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠন পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে তুলতে চায়। এমন বিষয় ভাবনায় রেখে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সিলেট নগর পুলিশ-এমনটিই বললেন নগর পুলিশের কর্তা নিশারুল আরিফ । থানাগুলোকে ভাড়াটেদের তথ্য সংগ্রহে তৎপর হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেট মেট্রোপুলিশের শীর্ষ কর্তা মনে করেন, জনগণের সহযোগিতা না থাকলে শুধু পুলিশ বা প্রশাসন একা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে না। তার ভাষ্য, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনসাধারণেরও দায়িত্ব রয়েছে। বিশেষ করে যারা বাড়িওয়ালা তারা যেনো কাউকে বাসা ভাড়া দেওয়ার আগে ভালো করে খোঁজখবর নেন। ভাড়াটেদের পরিচয়পত্রসহ সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহে রাখেন এবং পুলিশের কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেন।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি