সব
সিলেটের হজরত শাহজালাল (র.) মাজারের ওরসের ৩ সপ্তাহ আগে ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব ভক্তদের কাছে ৭ শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য। শাহজালাল (রহ.) জীবদ্দশা থেকে এ উৎসবের প্রচলন শুরু হলেও এখনো এটি চলমান। প্রতি বছর ওরসের ৩ সপ্তাহ আগে উৎসবের আমেজে ভক্তবৃন্দ লাকড়ি সংগ্রহ করে থাকেন। সে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারও লাকড়ি তোড়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তবে করোনাকালিন এ সময়ে মঙ্গলবার (৮ জুন) সামাজিক দূরত্বের কথা চিন্তা করে সংক্ষিপ্ত পরিসরে লাকড়ি তোড়া উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভক্ত-অনুরাগীরা শহরতলির লাক্কাতোরা ও মালনিছড়া চা বাগানের টিলায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল শেষে লাকড়ি সংগ্রহ করেন।
এর আগে হজরত শাহজালালের (রহ.) দরগাহ থেকে শুরু করে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট, চৌকিদেখি হয়ে সোজা লাক্কাতুরা চা-বাগান পর্যন্ত মিছিল করেন তারা। ফেরার পথে লাল গালিচার মিছিলে যুক্ত হয় গাছের সবুজ লতাপাতা। ওরসের শিরনিতে ব্যবহৃত কাঠ সংগ্রহের ওই উৎসবকে লাকড়ি তোড়ার উৎসব বলা হয়। দরগাহের বার্ষিক ওরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি সংগ্রহের এ আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিয়েছেন ভক্তরা। সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল সহকারে ভক্তরা অংশ নেন।
এ বিষয়ে ৩৬০ আউলিয়ার পরিষদের সভাপতি মখন মিয়া জানান, করোনার কারণে আমরা এবার লাকড়ি তোড়া উৎসব সংক্ষিপ্ত আকারে দোয়া ও মিলাদের মাধ্যমে পালন করেছি। সামাজিক দূরত্বের কথা বিবেচনায় আমরা ভক্তদের দাওয়াত দেইনি এবং শাহজালাল মাজার প্রাঙ্গণে কোন উৎসবের আয়োজন করা হয় নি।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর ২৬ শাওয়াল ‘লাকড়ি তোড়া’ উৎসব পালন করে আসছেন ভক্ত-অনুরাগীরা। শাহজালালের (রহ.) জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সে ঐতিহ্য রক্ষা করে ওরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি তোড়া সম্পন্ন হয়ে আসছে। সংগ্রহ করে লাকড়ি নির্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখা হয়। আর এসব লাকড়ি ওরসের শিরনির রান্নায় ব্যবহার করা হয়।
শাহজালাল (রহ.)-এর জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সেই ঐতিহ্য এখনও অব্যাহত রয়েছে। জনশ্রুতি আছে ৭০৩ হিজরির এই দিনে হজরত শাহজালাল (রহ.) তার সঙ্গীদের নিয়ে জোহরের নামাজ আদায় শেষে কুড়াল হাতে পাহাড়-টিলাবেষ্টিত (বর্তমান লাক্কাতুরা চা-বাগানের নির্ধারিত টিলা) উত্তর প্রান্তের গভীর জঙ্গলের দিকে যেতে থাকেন। সঙ্গীরা তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। তিনি নিজ হাতে লাকড়ি সংগ্রহ করেন। পরে সেই জায়গার নাম হয় লাকড়ি তোড়ার (ভাঙা) টিলা। যা বর্তমানে লাক্কাতুরা চা-বাগান নামেই প্রসিদ্ধ। প্রতি বছর দেশের প্রত্যন্ত জেলা-উপজেলা থেকে হাজার হাজার ভক্ত-আশেকান সিলেটে লাকড়ি তোড়া উৎসবে যোগ দেন।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি