সব
সিলেটে প্রায় ৪ হাজার ফার্মেসি। পুরো বিভাগ মিলিয়ে সিলেটের জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি। সে হিসেবে আড়াই হাজার লোকের বিপরীতে একটি করে ফার্মেসি রয়েছে সিলেটে। হিসেবে খুব একটা কম নয়। তাই মোড়ে মোড়েই দেখা মেলে ফার্মেসির। মোড়ে মোড়ে থাকার কারণেই কি না ফার্মেসিগুলোর চরিত্র হয়ে গেছে মোড়ের মুদি দোকানগুলোর মতো। মুদি দোকানে যেমন নিজের ইচ্ছেমতো সদাই কিনতে পাওয়া যায় বেশিরভাগ ফার্মেসিতেও ওষুধ পাওয়া যায় মুড়ি-মুড়কির মতোই।
প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রয়ে হাইকোর্টের বারণ থাকলেও এসব ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দেদারসে বিক্রি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। মুদি দোকানি যেমন বেশি লাভের ক্রেতাকে বাহারি পণ্য ধরিয়ে দেন ঠিক তেমনটাই দেখা যায় এসব ফার্মেসিতেও। প্রেসক্রিপশনে লিখা ওষুধ না দিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ক্রেতাকে গছিয়ে দেওয়া মানহীন ওষুধ। মূল ওষুধের সমান দাম দিয়েই ক্রেতাকে কিনতে হয় তা, আর বিক্রেতার পকেটে ঢুকে বেশি লাভ। ভেজাল, মানহীন ওষুধ ও সামগ্রী বিক্রির তালিকায় রয়েছে নামিদামি মডেল ফার্মেসিগুলোও। ওষুধ বিক্রিতে জবাবদিহি না থাকায় ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধে সয়লাব হচ্ছে বাজার, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সিলেট বিভাগে ড্রাগ লাইসেন্সধারী ফার্মেসির পাশাপাশি লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসির সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। এ ফার্মেসিগুলো কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই নকল, মানহীন ওষুধ বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির পরিচিত ওষুধগুলোর হুবহু নকল ওষুধ পাওয়া যায় এসব ফার্মেসিতে। প্রথম দেখায় বুঝার উপায় থাকে না ওষুধগুলো আসল না নকল। মূলত শহরের বাইরের ফার্মেসিগুলোতেই বেশি বিক্রি হয় এ সকল নকল ও মানহীন ওষুধ। আর শহরে সুযোগ বুঝে এ সকল ওষুধ গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল ক্রেতাদের কাছে।
মানুষের জীবন রক্ষার অন্যতম উপাদান হচ্ছে ওষুধ। ফার্মেসিতেই তা বিক্রি হয়। তাই সুশৃঙ্খল নিয়মের মাধ্যমেই পরিচালনা করতে হয় একেকটি ফার্মেসি। নিয়ম আছে, আছে বিধি-বিধান। কিন্তু কোনো নিয়ম বা বিধির ধার ধারছে না সিলেটের বেশিরভাগ ফার্মেসি। একটি ফার্মেসির মূল শর্তই হচ্ছে সার্বক্ষণিক ফার্মাসিস্টের অবস্থান। তবে অভিযোগ রয়েছে, সিলেটের বেশিরভাগ ফার্মেসিতেই ফার্মাসিস্ট নেই। সরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’-এই তিন গ্রেডের ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। ‘এ গ্রেড’ ভুক্ত ফার্মাসিস্টরা মূলত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট। ‘বি’ গ্রেডভুক্ত ফার্মাসিস্টরা প্যারামেডিকেল বা আইএইচটি থেকে ডিপ্লোমা করে থাকেন। আর ‘সি’ গ্রেডভুক্ত ফার্মাসিস্টরা মূলত বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের ফার্মেসি কাউন্সিলের মাধ্যমে তিন মাস কিংবা স্বল্পমেয়াদি অন্য কোনো ধরনের কোর্স সম্পন্ন করেন। মূলত সি ক্যাটাগরির ফার্মাসিস্টরা সিলেটে ফার্মেসিগুলোতে কর্মরত রয়েছেন।
৪ হাজার ফার্মেসি। সূত্র বলছে, এর বিপরীতে সিলেট বিভাগজুড়ে ১০ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট। সিলেটের ফার্মেসিগুলোতে তাই ফার্মাসিস্টের সংকট থাকার কথা নয়। কিন্তু ফার্মাসিস্ট রাখতে গেলে খরচ বেশি তাই সাধারণ কর্মচারী দিয়েই চলছে ফার্মেসি ব্যবসা। যদিও ফার্মাসিস্ট ছাড়া ফার্মেসি চালানোর কোনো সুযোগই নেই। আবার ফার্মাসিস্ট রাখার শর্তও রয়েছে। মডেল ফার্মেসির জন্য ‘এ’ গ্রেডের ফার্মাসিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক, মডেল মেডিসিন শপের জন্য রাখতে হবে ‘বি’ বা ‘সি’ গ্রেডের ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে। তবে বাস্তবে এমনটি খুঁজে পাওয়া কঠিনই। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই সিলেটে চলছে এমনটাই। ফার্মাসিস্ট না থাকলে ড্রাগ লাইসেন্সই পাওয়ার কথা নয়। তবুও মিলছে ড্রাগ লাইসেন্স। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে গোপন দফারফার অভিযোগও রয়েছে।
শুধু ফার্মাসিস্টই নয় ড্রাগ লাইসেন্স পেতে হলে পূরণ করতে হয় আরো অনেক শর্ত। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুচরা ওষুধ বিক্রির জন্য দুই ক্যাটাগরির লাইসেন্স দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। একটি হলো মডেল ফার্মেসির, আরেকটি মেডিসিন শপের। মডেল ফার্মেসির জন্য প্রয়োজন হয় ৩০০ ফুটের একটি দোকান, পৌরসভার ভিতরে হলে ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং বাইরে হলে ১ হাজার ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়। সঙ্গে ব্যাংকের মাধ্যমে ১৫ শতাংশ ভ্যাট জমা দিতে হয়। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি, মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, মালিকের ব্যাংক সচ্ছলতার সনদ, ফার্মেসিতে নিয়োজিত গ্র্যাজুয়েট বা এ গ্রেড ফার্মাসিস্টের রেজিস্ট্রেশন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, ফার্মাসিস্টের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ফার্মাসিস্টের অঙ্গীকারনামা, দোকান ভাড়ার চুক্তিনামা। এ ছাড়া মেডিসিন শপের ক্ষেত্রে ১২০ ফুটের দোকান, ফার্মেসিতে নিয়োজিত বি বা সি গ্রেডের ফার্মাসিস্টের রেজিস্ট্রেশন সনদের সত্যায়িত কপি এবং মডেল ফার্মেসির মতোই অন্যসব সনদ দিয়ে শর্ত পূরণ করলে তবেই মেলে ড্রাগ লাইসেন্স। সিলেটের ফার্মেসিগুলোতে ঢুঁ মারলেই টের পাওয়া যাবে কয়টি ফার্মেসি শর্ত পূরণ করে লাইসেন্স পেয়েছে আর কয়টি পেয়েছে ‘বুঝাপড়া’র বিনিময়ে।
লাইসেন্সধারী ফার্মেসিগুলোতে ফার্মাসিস্ট না থাকার বিষয়টি জানা নেই উল্লেখ করে সিলেটের ড্রাগ সুপার শিকদার কামরুল ইসলাম বলেন, যথাযথ শর্ত পূরণের পরই ফার্মেসিগুলোকে লাইসেন্স প্রদান করা হচ্ছে। একাত্তরের কথাকে তিনি বলেন, ফার্মেসিতে অনিয়মের অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি