সিলেটে ট্রিপল মার্ডার : তবে কি হিফজুরই খুনী!

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২১, ৯:১৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৩ বছর আগে

সিলেটের গোয়াইনঘাটে দিনমজুরের পরিবারে তিন সদস্যকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মা ও দুই সন্তানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সিলেটে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে একযোগে কাজ করছে পুলিশের ডিবি ও সিআইডিসহ একাধিক শাখা। এ ঘটনায় সন্দেহের তীর এখন আহত গৃহকর্তা হিফজুর রহমানের দিকে। সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন হিফজুর।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, হিফজুর রহমানই তার স্ত্রী-সন্তান হত্যার ঘটনার মূল সাসপেক্ট। পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হতে পারে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বিন্নাকান্দি দক্ষিণপাড়া গ্রামে ঘরের ভেতর তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন- দিনমজুর হিফজুরের স্ত্রী আলিমা বেগম (৩০) ও তাদের দুই সন্তান মিজান (১০) এবং তানিশা (৩)। নিহতদের লাশ ময়নাতদেন্তর জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

এছাড়া গুরুতর আহত হয়েছেন হিফজুর রহমান। তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শেষ খবর (বুধবার রাত) পর্যন্ত হিফজুরের জ্ঞান ফিরলেও স্বাভাবিকভাবে কথা বলার অবস্থায় তিনি নেই।

স্থানীয়রা জানান, বুধবার (১৬ জুন) সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত হিফজুরের ঘরের কেউ ঘুম থেকে উঠছিলেন না দেখে প্রতিবেশীরা হিফজুরের ঘরের সামনে যান। এসময় ভেতর থেকে কান্নার শব্দ শুনে দরজায় ধাক্কা দেন তারা। এসময় দরজার সিটকিনি খোলা দেখতে পান তারা। ভেতরে প্রবেশ করে তারা খাটের মধ্যে তিন জনের জবাই করা মরদেহ ও হিফজুরকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে গোয়াইনঘাট থানায় খবর দিলে একদল পুলিশ গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করে ও হিফজুরকে হাসপাতালে পাঠায়। হিফজুরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে দায়ের কোপ রয়েছে।

খবর পেয়েই সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, সিআইডিিসিলেট জোনের পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিয়া মোহাম্মদ আশীষ বিন হাসান, গোয়াইনঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ দুটি বিষয়কে সামনে রেখে বড় এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। হিফজুরের সঙ্গে তার মামার জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এর জের থেকে হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। আবার স্ত্রীর সঙ্গেও হিফজুরের বিরোধ রয়েছে। সেটা স্ত্রীর পাশের বাড়ি যাওয়াকে কেন্দ্র করে। তাই হিফজুরকেও সন্দেহের বাইরে রাখা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, হিফজুরের জ্ঞান ফিরার পর তার কথা বলার মতো অবস্থা হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন আসল বিষয় বেরিয়ে আসবে।

সিলেট জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান বলেন, হিফজুরের জ্ঞান ফিরলেও তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলার অবস্থায় নেই। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি পুলিশ হেফাজতে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় কাউকে এখনও আটক করা হয়নি বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান জানান।

উল্লেখ্য, হিফুজর তার মামার বাড়িতে ঘর বানিয়ে থাকেন। তার বাড়ি পাশ্ববর্তী গ্রামে। আহত হিফজুর যে ঘরে থাকতেন ওই ঘরটি তার মায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত। আর পাশের আরও দুটি ঘরে তার মামারা থাকেন।

হিফজুর দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার মামাসহ প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে আটক করেনি পুলিশ।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি