সব
সাকিব-হৃদয়ের দুর্দান্ত ইনিংসে বড় স্কোর গড়ার পর বোলারদের দাপটে সিলেটে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে আইরিশদের উড়িয়ে রেকর্ড গড়া ১৮৩ রানের বিশাল জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩৩৮ করে বাংলাদেশ। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করলেও মাত্র ১৫৫ রানে থামে আইরিশদের ইনিংস।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটা হয়েছিল সম্প্রতি সময়ের সিলেটের আবহাওয়ার মতোই। সিলেটে ২-৩দিন থেকে ভোরের আকাশে জমে থাকে মেঘ তারপর ধীরে ধীরে সূর্য হাসে।
বাংলাদেশের ইনিংসের শুরুটাও হয়েছিল তাই। শুরুতে দ্রুত উইকেট চলে যাওয়ায় বাংলাদেশের শিবিরে মেঘ ভর করে কিন্তু সাকিব-হৃদয়ের নব্বইয়োর্ধ দুটি ইনিংস সূর্যের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সাকিব-হৃদয় ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় স্কোরের ভিত গড়ে দেন। সেই ভীতের উপর দাঁড়িয়ে ব্যাটে ঝড় তুলেন মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিক।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২.৩ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ফেরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। আরেক ওপেনার লিটন কুমার দাস আউট হন ৯.৩ ওভারে দলীয় ৪৯ রানে । লিটন ৩১ বলে দুই চার আর এক ছক্কার সাহায্যে ২৬ রান করে সাজ ঘরে ফিরেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৩২ রানের জুটি গড়ে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি ৩৪ বলে ২৫ রানে ফেরেন।
এরপরই অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
সাকিব শুরু থেকেই দেখেশুনে ব্যাটিং করেন, সুযোগ পেলেই বাউন্ডারির সুযোগ নেনে। প্রথমে আউট ফিল্ড স্লো দেখা যায় কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আউটফিল্ড ফাস্ট হয় সেই সাথে সাকিবের আক্রমণাত্মক রুপ ধারণ করেন। নিজের স্বভাবজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দিয়ে চাপ সরানোর কাজটি করেন। হৃদয়ের ব্যাটিংও ছিলো সাবলীল।
মাত্র ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি গড়েন সাকিব ও হৃদয়। এর মাঝেই ২২৮তম ওয়ানডেতে সাত হাজার রানের মাইলফলক ছুঁলেন সাকিব। ৯টি সেঞ্চুরি ও ৫৩টি হাফ সেঞ্চুরি করা অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের ব্যাটিং গড় ৩৭.৯৭। দেশের পক্ষে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭ হাজার রান পূর্ণ করা সাকিব বিশ্বের ৪৪তম ক্রিকেটার হিসেবে এই মাইলফলকে পৌঁছালেন।
ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি যখনই হাতছানি দিচ্ছিল তখনই হিউমের বলে টাকারকে ক্যাচ দেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ৮৯ বলে ৯ চারে ৯৩ রান করেন সাকিব।
এরপর ক্রিজে আসেন মুশফিকুর রহিম। শুরু থেকেই ব্যাটে ঝড় তুলেন মি. ডিপেন্ডেবল। মুশফিকের সাথে যোগ দেন হৃদয়। আগের চেয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন। দুজনে বাংলাদেশের ইনিংসে যোগ করেন ৭৬ রান, বল খরচ হয় ৪৯টি। ২৬ বলে ৩ চার ও ৩ ছয়ে ৪৪ রান করে আউট হন মুশফিক।
সেঞ্চুরির খুব কাছে এসেও হতাশ করেন হৃদয়। সাকিবের পথ ধরে অভিষেকেই সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি হওয়া থেকে বঞ্চিত হন। হিউমের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। ৮৫ বলে ৮ চার ও ২ ছয়ে ৯২ রান করেন হৃদয়। এই ইনিংসটিই ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে কেবল দুটি অর্ধশতক ছিলো ফরহাদ রেজা এবং নাসির হোসেনের। কোনো ওয়ানডেতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের দুজন ব্যাটসম্যান নার্ভাস নাইন্টিজে আউট হলেন।
এরপর সাত বলে এক ছক্কায় ১১ রান করে আউট হন তাসকিন আহমেদ। ১০ বলে এক চার আর এক ছক্কায় ১৭ রান করে ফেরেন ইয়াসির আলী।
শেষ দিকে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ বলে দুই বাউন্ডারির সাহায্যে ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। বাংলাদেশ সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এটাই বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ স্কোর। এর আগে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৬ উইকেটে ৩২৯ রান করেছিল টাইগাররা।
বাংলাদেশর করা রেকর্ড রান তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে আয়ারল্যান্ড। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬০ রান করা আইরিশ দল মাত্র ১৬ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়। এবারও ত্রাতার ভুমিকায় সাকিব। ১২তম ওভারে ব্রেকথ্রু এনে দেন তিনি। তার শিকার হয়ে ফেরেন স্টিপেন ডোহেনি। এরপর জোড়া আঘাত হানেন পেসার এবাদত হোসেন। তার শিকার হয়ে ফেরেন পল স্টারলিং ও হ্যারি টাকার।
উইকেট শিকারের উৎসবে যোগদেন পেসার তাসকিন আহমেদও। তার জোড়া শিকারে পরিণত হন অ্যান্ড্রুবালর্বিনি ও লোকান টাকার। কার্টিস ক্যাম্পারকে এলবিডব্লি করে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ। ক্যাম্পারের মতো গ্যারেথ ডেনলিকেও একই ভাবে ফেরান নাসুম। অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে ফেরান নাসুম। শেষমেষ ব্যাটিংয়ে ধুকতে থাকা আইরিশ ইনিংস থামে মাত্র ১৫৫ রানে।
বাংলাদেশ জয়ী হয় নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ১৮৩ রানে।
এর আগে টাইগারদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় ছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সিলেটের এই ভেন্যুতেই ২০২০ সালের ১ মার্চ জিম্বাবুয়েকে ১৬৯ রানে হারিয়েছিল টাইগাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩৮/৮ (সাকিব ৯৩, হৃদয় ৯২, মুশফিক ৪৪, লিটন ২৬; হিউম ৪/৬০, ম্যাকব্রাইন ১/৪৭)
আয়ারল্যান্ড: ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ (ডকরেল ৪৫, ডোহেনি ৩৪; ইবাদত ৪/৪২, নাসুম ৩/৪৩, তাসকিন ২/১৫)
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি