সব
কেউ মানসিক রোগী, কেউ ভারসাম্যহীন আবার কেউ বাকপ্রতিবন্ধী। যাদের ঠিকানা পথে-প্রান্তরে। কোথা থেকে এসেছে আবার কোথায় যাচ্ছে, তা ওরা নিজেরাই জানে না। বিরামহীনভাবে ছুটে চলেছে দিগ্বিদিক। দিনরাত যাদের কাছে সমান। কেউ কিছু দিলে হয়তো খাচ্ছে, আবার ক্ষুধার যন্ত্রণা কাকে বলে তা অনেকেই বোঝে না। পথেঘাটে নোংরা আবর্জনা যা পায় তা মুখে নিতেও দ্বিধাবোধ করে না। কতোটা নির্মমভাবে তাদের জীবনের একেকটি দিন চলে যাচ্ছে তা কেউ বোঝে না।
মানুষ তাদের ‘পাগল’ বলে। তাদের জন্য বিয়ানিবাজার মানবিকটিম প্রতি মাসে একদিন খাবার মেন্যুতে ভাত, মাংস,ডাল, মাছ, ডিম, বিরানি, খিচুড়িসহ হরেক রকমের আইটেম তৈরি করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে। ঠিকানাবিহীন অসহায় এসব মানুষকে দেখলে সমাজের বেশিরভাগ মানুষই তাচ্ছিল্য করে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু সিলেটের বিয়ানিবাজারের উদ্যমী এক মানবিক যুবক দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা ঠিকানাবিহীন মানসিক কিংবা ভারসাম্যহীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্নভাবে।
ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন মানুষের জন্য কিছু করার। তবে শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে যাননি, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য অবিরাম কাজ করেই চলেছেন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর ভবিষ্যৎকে বানিয়েছেন নিজের স্বপ্ন। আর সেই অধরা স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার বাসনা থেকেই নিজের একটি সংগঠন তৈরি করেছেন, নাম দিয়েছেন “বিয়ানীবাজার মানবিক টিম। নামের মাঝেই যেন কাজের উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। শুধু তাই নয়
জুয়েল র নেতৃত্বে এলাকার তরুণ যুবকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও সমাজ উন্নয়নে কাজ করছে কিছু উদ্যোমী যুবক।
বিষেশ করে সিলেটের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনে আমল পরিবর্তন এনেছে এই সংগঠনটি কাজ করছে অসহায় নারী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে। শিশুদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি নতুন নতুন পোষাক প্রদান, কোরআন শরীফ বিতরন, শীতবস্ত্র বিতরণ, অসহায়/এতিমদের ঈদের সময় ঈদ সামগ্রী বিতরণ, গৃহহীনদের ঘর করে দেয়া, বিভিন্ন এলাকায় মসজিদ নির্মাণ, মাদরাসা এতিমখানায় এতিমদের পোশাক দেয়া বিভিন্ন এলাকায় গভীর নলকূপ স্হাপন করা।
করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গায় খাদ্য ও অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার প্রদান, কর্মক্ষম মানুষের আয়ের পথ সৃষ্টির জন্য সাবলম্বি প্রজেক্ট ও তৈরি করেছে জুয়েল।
জুয়েলের এই “সংগঠন বিশেষ করে বিয়ানিবাজার উপজেলার আমেরিকার নিউইয়র্ক প্রবাসী মোহাম্মদ মিতু, আমেরিকার নিউইয়র্ক প্রবাসী সাফিয়া আক্তার, লন্ডন প্রবাসী খালেদ হোসাইন ডালিম, বিশ্বনাথ উপজেলার লন্ডন প্রবাসী আশরাফ মোহাম্মদ জামান সহ সিলেটের কিছু প্রবাসীরা সহযোগীতা করেন।
গেল বছর করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে কয়েক হাজার মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ, গরিব অসহায় রোগিদের অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রদান সহ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে অনন্য সৃষ্টি করেছেন জুয়েল আহমদ। অদম্য মেধাবী কাজপাগল এ তরুণের মাধ্যমে অনেক অসহায় গরিব মানুষগুলি আলোর পথে পেয়েছে।
মানবিক এই জুয়েল বলেন, এ পর্যন্ত ৫শটিরও বেশি ইভেন্ট আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি, আরও বেশ কিছু ইভেন্ট চলমান রয়েছে।
আমাদের এসব ভালো কাজে সমাজের বিত্তবানদের অনেকেই আমাদেরকে সহযোগিতা করে থাকেন। বিষেশ করে বিয়ানিবাজার উপজেলার প্রবাসীরা।
সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণির মানুষের স্বপ্ন পূরণই আমাদের কাজের লক্ষ্য। যখন কাউকে সহযোগিতা করতে পারি। যেমন অসহায় রোগীর চিকিৎসা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা, গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়া, মাঠের মাঝে কৃষকের জন্য পানির টিউবওয়েল এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কারও অর্থের ব্যবস্থা করা, কাউকে একটি একটি রিকশা বা দোকান করে দিলেই কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারে। এমন সব কাজগুলো করতে পারলে মনের ভেতরে একটা ভালো লাগা কাজ করে। এই অনুভূতি আসলে কাউকে বোঝানোর মতো নয়। তখন আমার কাছে মনে হয় এটিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, বড় সাফল্য। একটা মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারলে মনে হয় আমি পুরো বিশ্বকে জয় করে ফেলেছি। তবে খ্যাতি কিংবা নামের জন্য নয়, একমাত্র মানুষের জন্য কিছু করার প্রয়াস থেকেই এই কাজগুলো করে আসছি। ভবিষ্যতেও করে যেতে চাই যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি