সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ভুয়া টিপ সইয়ে জমি রেজিস্ট্রি!

সিলেট ডায়রি ডেস্ক;
  • প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২০, ১২:৫৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৫ বছর আগে

মামার পরিবার থেকে জমি কিনে তাদেরকেই দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলেন কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের মির্জারগড় গ্রামের আব্দুর রহমান। মামার পরিবার কোনো নয়ছয় করবে, এমনটা কল্পনাতেই ছিল না তার। কিন্তু নিশ্চিন্ত মনে সৌদি আরবে প্রবাস জীবন পার করে দেশে এসে তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।

আব্দুর রহমানের অভিযোগ, মামার পরিবার তার ভুয়া টিপ সই ব্যবহার করে দেশের জমি সাফকাবালা রেজিস্ট্রি করিয়ে নিয়েছে। যে সময়ে এই রেজিস্ট্রি করা হয়, সেই সময়ে তিনি ছিলেন সৌদি আরবে। এ বিষয়ে তার কাছে যাবতীয় প্রমাণাদি আছে এবং তিনি আদালতে মামলা করেছেন। কিন্তু মামলার বিবাদী মামাতো ভাই মখলিছুর রহমান তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বেলা ২টায় সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন কানাইঘাটের মির্জারগড় গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে আব্দুর রহমান। ‘স্বজনদের অত্যাচারে নিরুপায়’ হয়ে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর প্রবাসে কাটিয়েছি। গরমের দেশ সৌদি আরবে কায়িক শ্রম দিয়ে যা উপার্জন করি, তা বৈধভাবে দেশ পাঠিয়েছি। আমার কায়িক শ্রমের টাকা দিয়ে যে সম্পদ অর্জন করেছি, সেই সম্পদ আমারই আপনজনেরা গ্রাস করার চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি ১৯৮৫ সালে সৌদি আরবে যাই। সেখানকার উপার্জন থেকে ১৯৯১ সালে মামার পরিবার থেকে ৫৮ শতক জমি কিনি। এর দলিল নাম্বার ৬৭২০ ও ৬৭২১। কেনার পর বাংলাদেশের ভূমি আইনের নিয়মকানুন মেনে আমি জমির খাজনা প্রদান করে আসছি। আমি প্রবাসে থাকায় জমি দেখভালের দায়িত্ব দিই একই গ্রামে বসবাসকারী আমার মামার পরিবারকে। তারা বর্গাচাষ করে আসছিলেন। কিন্তু আমার কাছে বিক্রি করেও জমি থেকে লোলুপ দৃষ্টি সরাতে পারেনি আমারই মামার পরিবার।’

আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমি প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার টিপ সই ও দস্তখত জালিয়াতি করে অন্য একজনকে আব্দুর রহমান সাজিয়ে দুটি সাফকাবালা রেজিস্টারি করে নেয় মামার পরিবার। যেগুলোর নাম্বার ৩৩৬৬/৯৫ ও ৩৯০৫/৯৫। তারা বর্তমান জরিপে আমার জমির বিএস রেকর্ড আমার মামী মৃত নছিবুন নেছার নামে করিয়ে নিয়েছে। এই সবকিছুর নাটের গুরু আমার মামা মনু ওরফে বড়াইয়ের ছেলে তথা মামাতো ভাই মখলিছুর রহমান।’

যে দুই তারিখে জমির সাফকাবালা রেজিস্ট্রি সম্পাদন করা হয়েছে, সে তারিখে আব্দুর রহমান সৌদি আরবে অবস্থান করছিলেন এবং এ সংক্রান্ত প্রমাণাদি তার কাছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে দেশে ফিরে তিনি নিজের জমি চাষের উদ্যোগ নেন। কিন্তু এরপর থেকে মামাতো ভাই মখলিছুর রহমানসহ তাদের পুরো পরিবার আব্দুর রহমানের সাথে শত্রুতা শুরু করে, চাষাবাদে বাধা দেয়। জমি তাদের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে নেওয়ার কথাও জানায় তারা।

সংবাদ সম্মেলনে আব্দুর রহমান বলেন, ‘সব শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আমি গ্রামের মুরব্বিদের বিষয়টি অবহিত করি। তারা সালিশে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চাইলে মামার পরিবার সাড়া দেয়নি। পরে মুরব্বি ও বিজ্ঞদের পরামর্শে আমি মামার পরিবারের জাল দুটি দলিল বাতিল করতে যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে মামলা করি (স্বত্ব মোকদ্দমা নং ৩৬/২০), যা বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু মামলার পর থেকে ওই জমির দাবি না ছাড়লে মামাতো ভাই মখলিছুর রহমান আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। বোনদের দিয়ে নারী নির্যাতন মামলা করাবেন বলেও হুমকি দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘সারাজীবন প্রবাসে কষ্ট করেছি। স্বপ্ন ছিল শেষ সময়ে দেশে আনন্দে সময় কাটাবো। কিন্তু আমার জীবনই এখন বিপন্ন হতে চলেছে। আমি নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। আমার মতো আর কোনো প্রবাসী যাতে এ ধরনের হয়রানিতে না পড়েন, সেটা যেন নিশ্চিত হয়।’

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি