সব
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনেক সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। তবে তাদের বিপক্ষে এর আগে কখনোই ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি টাইগাররা।
দীর্ঘদিনের সেই আক্ষেপ অবশেষে ঘুচে গেল। লঙ্কানদের বিপক্ষে নতুন ইতিহাস গড়লেন তামিম-মুশফিকরা।
মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে বৃষ্টি আইনে ১০৩ রানের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। বৃষ্টি বাধায় খেলার দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪০ ওভারে। লঙ্কানদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫ রান। কিন্তু সফরকারীরা ৯ উইকেট হারিয়ে থামে ১৪১ রানে।
প্রথম ম্যাচে তামিমবাহিনী জিতেছিল ৩৩ রানে। টানা দ্বিতীয় এই জয়ে ১ ম্যাচ হাতে রেখেই লঙ্কানদের বিপক্ষে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সিরিজ ঘরে তুললো টাইগাররা।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৮টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা জিতেছে ৬ সিরিজ। দুটি সিরিজ ১-১ এ অমীমাংসিত থেকে গেছে। অবশেষে নবম সিরিজে এসে উদযাপনের উপলক্ষ্য পেল বাংলাদেশ।
টসে জিতে এদিন শুরুতে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহমানের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ভর করে সব উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রানের মাঝারি সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে ১৪১ রানে থামে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ২৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরু থেকে মোটেই সুবিধা করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিক বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সামনে খাবি খেয়েছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। অধিকাংশ লঙ্কান ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছোঁয়ার পর বিদায় নিয়েছেন।
শুরুটা করেন অভিষেক ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নামা শরিফুল ইসলাম। তার প্রথম শিকার হন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুশল পেরেরা (১৪)। বাংলাদেশের তরুণ পেসারের তৃতীয় ওভারে তুলে মারতে গিয়ে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লঙ্কান ওপেনার।
শুরুর সেই ধাক্কা ধীরে ধীরে সামলে উঠছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ঠিক এমন সময় আঘাত হানেন মোস্তাফিজুর রহমান। ফিজের করা ইনিংসের ১৪তম ওভারের শেষ বলে স্কয়ার কাট করেছিলেন দানুশকা গুনাথিলাকা (২৪)। কিন্তু বল গিয়ে জমা হয় ডিপ পয়েন্টে থাকা সাকিবের তালুতে।
শরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজের পর বল হাতে আঘাত হানলেন সাকিব ও মিরাজ। সাকিবের কুইকারে পুল করেছিলেন পাথুম নিসাঙ্কা (২০)। বল বাতাসে ভাসা অবস্থায় পেছন দিকে কিছুটা দৌড়ে দারুণভাবে তালুবন্দি করেন মিড উইকেটে থাকা তামিম। এরপর মিরাজের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন কুশল মেন্ডিস (১৫)। মেন্ডিস অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
সফরকারীদের বিপদ বাড়িয়ে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে (১০) বিদায় করেন সাকিব এবং দাসুন শানাকাকে (১১) ফেরান মিরাজ। ১০৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কাকে আরও বিপদে ফেলে মিরাজের তৃতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেন ওয়ানিন্দু হারাঙ্গা। এরপর দ্রুত বান্দারা ও লক্ষণ সান্দাকানকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে ফেলেন মোস্তাফিজ।
মাঝে বৃষ্টি হানায় কিছুক্ষণ স্থগিত থাকার পর ফের খেলা শুরু হলেও লঙ্কানদের জন্য লক্ষ্য তখনও বহু দূরে। বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। মিরাজের ঝুলিতেও গেছে ৩ উইকেট। সাকিব ২ ও শরিফুল ১ উইকেট দখল করেছেন।
এর আগে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। ইনিংসের প্রথম ওভারে ৩টি চারে ১৩ রান করা আক্রমণাত্মক তামিম দ্বিতীয় ওভারে আসা দুশমন্থ চামিরার প্রথম বলেই এলবির ফাঁদে পড়েন। একই ওভারের চতুর্থ বলে ব্যক্তিগত শূন্য রানে লেগ বিফোর হয়ে ফেরেন সাকিবও।
তামিম-সাকিবের দ্রুত বিদায়ের পর মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব নেন লিটন দাস। তবে ১২তম ওভারে এসে ধৈর্য হারান এই ওপেনার। লক্ষণ সান্দাকানের সাধারণ মানের বলটি শর্টে ফিল্ডিং করা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার হাতে তুলে দেন। ৪২ বলে ২টি চারে ২৫ রান করেছেন লিটন।
লিটন বিদায় নেওয়ার পর মুশফিককে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন মোসাদ্দেক। সান্দাকানের বলে লেগ সাইডে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটরক্ষক কুশল পেরেরার তালুবন্দি হন মোসাদ্দেক (১০)। ৭৪ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
এরপর মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৮৭ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ৫৮ বলে ব্যক্তিগত ৪১ রানে স্কুপ করতে গিয়ে সান্দাকানের শিকার হন তিনি। ব্যাটিংয়ে থাকা মুশফিক অবশ্য ব্যাক টু ব্যাক হাফসেঞ্চুরির দেখা পান।
রিয়াদের বিদায়ের পর আরও একবার বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দুই ওভারের ব্যবধানে বিদায় নেন আফিফ হোসেন ধ্রুব (১০) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (০)। এমন চাপের মাঝে সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন মুশফিক। ধীরেসুস্থে ১১৪ বল খেলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও। সিরিজের প্রথম ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৮৪ রান।
ইনিংসের শেষদিকে বৃষ্টি হানায় বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ ছিল। ফের খেলা শুরুর পর মুশফিক সেঞ্চুরি পেলেও টেল এন্ডারদের কেউই তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি। এর মধ্যে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিলেও মেন্ডিসের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে বিদায় নেন। ৩০ বল খেলে তার ব্যাট থেকে আসে ১১ রান। সাইফউদ্দিন পরে আর বোলিংয়ে নামতে পারেননি। তার বদলে কনকাশন সাব হিসেবে নামেন মূল একাদশের বাইরে থাকা তাসকিন আহমেদ।
মুশফিক সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর কিছুটা আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। সেঞ্চুরির আগে তিনি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন ৬টি, পরে আরও ৪টি। ৪৮তম ওভারে শরিফুল (০) বিদায় নেন। এর পরের ওভারের প্রথম বলেই অফ সাইডে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বান্দারার হাতে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় মুশফিকের ১২৭ বলে ১২৫ রানের লড়াকু ইনিংস।
বল হাতে শ্রীলঙ্কার চামিরা ও সান্দাকান ৩টি করে, উদানা ২টি এবং হাসারাঙ্গা ১টি উইকেট নিয়েছেন।
ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন মুশফিকুর রহিম।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি