সব
দলিত বলতে এমন কিছু জাতিগত গোষ্ঠী যারা সচরাচর নিপীড়িত এবং অনগ্রসর জাতিরূপে চিহ্নিত। বর্ণবৈষম্য আর নিজেদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত মূল জনবসতির থেকে ক্রোশ দুরে এদের বসবাস। সর্বক্ষেত্রে কাজের সুযোগ না পাওয়া এই জনগোষ্ঠীই যখন উপার্জনের শেষ আশ্রয়স্থল জুতার কারিগর। আর জীবন ধারনের সেই শেষ আশ্রয়টুকু যখন হারিয়ে যায়, তখন পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছেটুকুও ফুরিয়ে যায়।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমুহনা সংলগ্ন ড্রেনের উপরে কাঠের মাচায় বসে নিজেদের বেঁচে থাকার জীবনযুদ্ধে কাজ করা দলিত সম্প্রদায়ের ঋষি (মুচি) দের উচ্ছেদ করেছে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার ১ ডিসেম্বর সকালে শ্রীমঙ্গল পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এখানে থাকা দলিত সম্প্রদায়ের (মুচি ) দের উচ্ছেদ করে। এতে করে দীর্ঘদিন থেকে এই জায়গায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করা লোকজন পড়েছেন বিপাকে।
আধুনিক যুগে সমাজে যেখানে জুতা সেলাই করাতে অনিহা সেখানে সকাল থেকেই জুতা সেলাই করার সরঞ্চাম নিয়ে কাজের আশায় বসে থাকতে দেখা যেতো ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজনকে। কিন্তু এখানে আর কাজ করতে না পারায় বুধবার দুপুরে চৌমুহনা এলাকায় অবস্থান কর্মসূচী করে ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন।
উচ্ছেদের শিকার দলিত সম্প্রদায়ের ঋষি নগর বলেন, এই জায়গাটিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে জুতা সেলাইয়ের কাজ করছি এবং আমাদের পরিবারের বাপ দাদাও এখানে বসে জুতা সেলাই করেছেন। এখন পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের বিকল্প ব্যাবস্থা না করে আমাদের এখান থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। আমরা রাস্তার পাশে ড্রেনের উপরে মাচায় বসে কাজ করি। এখানে আমাদের কারনে কোন সমস্য তৈরী হয় বলে আমরা মনে করি না, বা কেউ কখনো অভিযোগ করেনি। এখন আমরা কোথায় যাবো কিভাবে পরিবার চালাবো সৃষ্টিকর্তা জানেন।
বুধবার শ্রীমঙ্গল শহরের আশপাশে ঘুরে দেখা যায় শহরের স্টেশন সড়ক, মৌলভীবাজার সড়ক, হবিগঞ্জ সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পুরো শহরের ফুতপাত দখল হয়ে আছে ভ্রাম্যমান বিক্রেতা ও বিভিন্ন দোকানের মালামাল দিয়ে। এ কারনে শহরের আসা লোকজন হাটাচলা করতে পারেন না। এসব দোকানপাট কয়েকবার উচ্ছেদ করেছিলো পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। তবে উচ্ছেদের কয়েকদিন পরই আবার তা দখল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে প্রভাষক জলি পাল বলেন: ঋষি বা দলিত জনগোষ্ঠী সব জায়গায় বৈষম্যের শিকার। তারা তাদের উপার্জন সমাজে সর্বক্ষেত্রে করতে পারে না। শেষমেষ জীবন ধারন করতে জুতা সেলাইয়ের কাজ করে পরিবার নিয়ে বেঁচে থাকে কিন্তু সেখানে তাদের বিকল্প ব্যাবস্থা না করে উচ্ছেদ একটি চরম অমানবিক ও মানবধিকার লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি।
বিষয়টি নিয়ে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এখানে ঋষিদের কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পথচারী লোকজন গাড়ি থামিয়ে এখানে জুতা সেলাই করান। ঋষিরা
এখানে অবৈধভাবে বসে ছিলো। তাই আমরা তাদের উচ্ছেদ করছি। পুরো শহরেই আমাদের উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে উচ্ছেদ করার পর তারা আবার আগের জায়গায় বসে পড়ে। আমাদের লোকবল কম থাকায় নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান করা সম্ভব হয় না। ঋষি সম্প্রদায়ের পূর্নবাসনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তারা তো এখানে ছিলোই অবৈধভাবে, এখানে তো তাদের বসার কথাই নেই।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন আমার কাছে এসেছিলো। বিষয়টি পৌরসভার দায়িত্ব। তবে এটি বলবো পৌরসভা যদি এই জায়গা থেকে এদের উচ্ছেদই করে তাহলে তাদেরকে নতুন একটি জায়গা দিক। এই দলিত সম্প্রদায়ের লোকজনকে এভাবে উচ্ছেদ করা ঠিক হবে না।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি