শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় মুক্তিযোদ্ধা পুরঞ্জয় চক্রবর্তী বাবলাকে চিরবিদায়

সিলেট ডায়রি ডেস্ক;
  • প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২০, ৪:২৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার, সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আজীবন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড পুরঞ্জয় চক্রবর্তী বাবলা মৃত্যুবরণ করেছেন। আজ সোমবার ভোর সাড়ে চারটায় নগরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকাল তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।

এদিকে আজ সোমবার সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়েছে।

পুরঞ্জয় চক্রবর্তী বাবলা দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিতঅসুস্থায় ভোগছিলেন। সোমবার ভোর সাড়ে চারটায় সিলেট ন্যাশনাল হার্ড ফাউন্ডেশনে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুকাল তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে, এক ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

এদিকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য প্রয়াতের মরদেহ সকাল সাড়ে এগারোটায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে নেয়া হয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা কমিটির সার্বিক তত্বাবধানে সেখানে শ্রদ্ধা জানান নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। মুক্তিযোদ্ধা পুরঞ্জয়চক্রবর্তী বাবলাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘গার্ড অফ অনার’ জানানো হয়। এরপর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিলেট জেলা, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি, বাসদ সিলেট জেলা, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলা, বাসদ মার্সকবাদী পাঠকচক্র ফোরাম, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সিলেট মহানগর ইউনিট কমান্ড, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটি, খেলাঘর সিলেট জেলা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র ইউনিয়ন, প্রগতী লেখক সংঘ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, নৃত্যশৈলী, সোপান, সিলেট সাহিত্য পরিষদ, আনন্দ খেলাঘর আসর, সোনালী ব্যাংক রিটায়ার্ড অফিসারস ফোরাম সিলেটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া সাধারণ মানুষও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরবর্তীতে ‘কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল’ গেয়ে তাকে শহিদমিনার থেকে বিদায় জানানো হয়।

১৯৫৩ সালের ১৮ মার্চ সিলেট নগরের আগপাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে পুরঞ্জয় চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম বিজয়ভূষণ চক্রবর্তী ও মাতার নাম সরজুবালা চক্রবর্তী। মিরাবাজারস্থ কিশোরী মোহন পাঠশালায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির মাধ্যমে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু। প্রাথমিক পর্ব শেষ করে তিনি রাজা জি সি হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে মদনমোহন কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পরীক্ষা পাশ করেন। অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে প্রগতিশীল বিভিন্নছাত্র-গণআন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে এসে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্রই্উনিয়ন এর বিশেষ গেরিলা বাহিনীতে যোগ দিয়ে ৪ নং সেক্টরে বীরত্বের সাথে সশস্ত্রযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৩ সালে সোনালী ব্যাংক সিলেট শাখায় কাজে যোগদানের মাধ্যমেতাঁর চাকরি জীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন এবং পার্টির সিলেট জেলা কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খেলাঘর সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এছাড়া উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সিলেট জেলা সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জীবনের শেষ দিকে তিনি সিপিবি শাহপরান থানা শাখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি