সব
মাস খানেক পূর্বে কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারী এলাকায় উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ কর্তৃক জব্দকৃত পাথরবোঝাই প্রায় দেড় শতাধিক জাহাজ ও বলগেট নৌপথে পাচারকালে কোয়ারী এলাকায় আটক করে রাখা হয়। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে এমন কাগজপত্র দেখিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টার দিকে পাথর ব্যবসায়ীরা লোভা ও সুরমা নদীর নৌপথে প্রশাসন কর্তৃক আটকে রাখা প্রায় ৫ লক্ষ ঘনফুট পাথর বোঝাই বলগেট ও জাহাজ কোয়ারী এলাকা ছাড়ে।
এদিকে খবর পেয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম একদল পুলিশ নিয়ে কানাইঘাট পূর্ব বাজারের সুরমা নদীর খেয়াঘাট এলাকায় পাথর বোঝাই বাহনগুলি আটকের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ সময় পাথর ব্যবসায়ীদের পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট এম মঈনুল হক বুলবুল ও এড. মাহবুব হোসাইন উচ্চ আদালতের নির্দেশে পাথর পরিবহনে ৫টি রিটপিটিশনের কাগজপত্র থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএমকে দেখান এবং একপর্যায়ে বিনা বাধায় পাথর ব্যবসায়ীরা নৌপথে পাথর বোঝাই বাহনগুলি নিয়ে যান।
এরপর যাত্রাপথে সিলেটের আলমপুর এলাকায় সুরমা নদীতে ফের আটক হয় পাথর বোঝাই এসব নৌযান।
জানা গেছে- উচ্চ আদালতে রিটপিটিশনকারী পাথর ব্যবসায়ীরা তাদের পাথর পরিবহনের মালিকানার পর্যাপ্ত ডকুমেন্ট পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ে জমা প্রদান না করে শুধুমাত্র আদালতের নির্দেশের কপি প্রদান করায় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরাসরি উচ্চ আদালত থেকে কোন আদেশের কপি পাননি। ফলে কোয়ারী থেকে নৌপথে ছেড়ে যাওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক পাথর বোঝাই বলগেট ও জাহাজ সিলেট আলমপুরস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয়ের সামনে আটক করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পাথর বোঝাই বাহনগুলি পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের পাশে সুরমা নদীতে আটক করে রাখা হয়েছে জানা গেছে।
অপর একটি সূত্রে জানা গেছে- জব্দকৃত পাথরের নিলামের প্রথম দফায় সর্বোচ্চ দরদাতা সিলেটের গোটাটিকর এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম নৌপথে যাওয়া পাথরবোঝাই বাহন আটক করেন। তার দাবী উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন মামলা থাকা অবস্থায় পাথর পরিবহনের কোন সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের এমন আদেশ রয়েছে।
এ ব্যাপারে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক এমরান হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন- লোভাছড়া পাথর কোয়ারীর লীজের মেয়াদ গত ১৩ এপ্রিল শেষ হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাসহ খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর নির্দেশে কোয়ারী এলাকায় রাখা প্রায় ১ কোটি ঘনফুট অবৈধ পাথর আমরা জব্দ করে নিলামে দেই। আইনী জটিলতা থাকার কারণে চূড়ান্ত নিলাম এখনো করা সম্ভব হয়নি। ৫ জন পাথর ব্যবসায়ী জব্দকৃত পাথর অনেকাংশ তাদের বৈধ পাথর দাবী করে উচ্চ আদালতে রিটপিটিশন মামলার প্রেক্ষিতে তাদের পাথর পরিবহনে নির্দেশনা রয়েছে মর্মে রিটপিটিশনকারীরা উচ্চ আদালতের আদেশের হাতু কপি আমাদেরকে দিয়েছেন। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক রিটপিটিশনকারীরা তাদের পাথরের মালিকানার ডকুমেন্টের কাগজপত্র জমা দেওয়ার জন্য বলা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে কাগজপত্র জমা না দেওয়ার কারণে জব্দকৃত পাথর নৌপথে নিয়ে যাওয়ার সময় অনেক পাথরবোঝাই বাহন আটক করা হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।
এদিকে কোয়ারী থেকে পাথরবোঝাই বাহন ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘আমি অসুস্থ, উচ্চ আদালতে রিটপিটিশনকারী ব্যবসায়ীরা গত বুধবার আমার সাথে দেখা করে তাদের পাথর পরিবহনের নির্দেশনা রয়েছে মর্মে আদালতের আদেশের একটি ফটোকপি প্রদান করেন। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনার অফিসিয়াল আদেশ ব্যতিরেকে পাথর পরিবহন না করার জন্য ব্যবসায়ীদের আহ্বান করার পরও তারা নৌপথে আটককৃত পাথরবোঝাই বাহনগুলি সরিয়ে নিচ্ছেন জানতে পেরে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেটের কর্মকর্তাদের আমি জানিয়েছি। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে আমাকে বলেছেন।’
থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন- গত বুধবার বিকেলে পাথর ব্যবসায়ীরা আমার সাথে দেখা করে তাদের পাথর পরিবহনের অনুমতি উচ্চ আদালত দিয়েছে মর্মে কাগজপত্র দেখান এবং তাদের পাথর পরিবহন করবে বলে জানালে আমি তাৎক্ষনিক বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই। আজ যখন কোয়ারী থেকে পাথরবোঝাই বাহন ছেড়ে দেওয়া হয়, তাৎক্ষনিক আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও এ ব্যাপারে তারা কোন ধরনের ব্যবস্থা নেননি। পুলিশ ছেড়ে দেওয়া পাথরবোঝাই বাহনগুলি আমার উপস্থিতিতে আটকের সমস্ত চেষ্টা করলেও ব্যবসায়ীরা উচ্চ আদালতের কাগজাপত্র তাদের আইনজীবিদের মাধ্যমে আমাকে দেখিয়ে পাথরবোঝাই বাহন নিয়ে যান। এক্ষেত্রে আমার করার কিছুই ছিল না।
অপরদিকে রিটপিটিশনকারী ব্যবসায়ী ময়নুল হক, হাজী বিলাল, নুরুল আমিন, সাবেল আহমদ ও মদরিছ আলীসহ পাথর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- তাদের ৩৯ লক্ষ ঘনফুট বৈধ পাথর পরিবেশ অধিদপ্তর বেআইনীভাবে জব্দ করায় তাদের পাথর বিক্রি ও পরিবহনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট ডিভিশনে পৃথক ৫টি রিটপিটিশন মামলা দায়ের করলে মহামান্য আদালত তাদের পাথর পরিবহনের আদেশ দেন। উচ্চ আদালতের সেই আদেশের কপি তারা পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার অফিসার ইনচার্জকে বুঝিয়ে দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মোতাবেক কোয়ারী থেকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে তারা পাথর নৌপথে পরিবহন ও বিক্রি করবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি