সব
সিলেট নগরীর মানুষের চোখের সামনে ‘উন্নয়ন’ আর ‘কাজের’ কতো আয়োজন। ঝা চকচকে রাস্তায় প্রলেপ বুলিয়ে দেওয়া, এইতো সেদিনের গড়া ড্রেন ভেঙে নতুন ড্রেন নির্মাণ করা, মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার টেনে নেওয়া-আবার সেই তারের ভেসে উঠা, সড়ক বিভাজকের মতো ‘দৃষ্টিনন্দন’ প্রকল্প হাতে নেওয়া, তোড়জোড় করে ওয়াকওয়ে তৈরি করা-আরো কতো কী? মশা মারা, ভাসমান ফেরিওয়ালা উচ্ছেদে ক্যামেরার বহর ডেকে আনাও দৃষ্টি এড়ায়না নগরবাসীর। এগুলো দৃশ্যমান। চোখ দেখেছে-দেখছে। কিন্তু যা দেখা যাচ্ছেনা সেটা কাঁপিয়ে দিচ্ছে নগরভবনের চার দেয়াল। ‘ঘায়েল করা’ আর ‘দমিয়ে রাখা’র রাজনীতি প্রকট হয়ে উঠেছে ৫তলা ভবনটিতে। সাম্প্রতিক এক ঘটনা নগরভবনের সেই রাজনীতিকেই সামনে নিয়ে এসেছে। প্যানেল মেয়র-১ ও ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক বকস লিপন এই রাজনীতির ‘ভরদুপুরের বাঁশিওয়ালা’। তার সুরে চটেছেন মেয়র। আরিফুল হক চৌধুরী চাইছেন লিপনের ‘প্যানেল মেয়র’ পদ আস্তাকুঁড়ে চলে যাক-অপসারিত হোন। এজন্য আরিফ দল ভারি করছেন, কাছে টানছেন কাউন্সিলরদের। এই মিশন বাস্তবায়নে মাঠে তিনি। এবং সক্রিয়ভাবেই।
দশ/বারোদিন আগের কথা। একধরণের বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী ও প্যানেল মেয়র তৌফিক বকস লিপন। উষ্ণ কথাবার্তা হয় তাদের মাঝে। তাদের কথাবার্তার বিষয়বস্তু ছিলো নগরীর বিভিন্ন অবকাঠামোর ডিজাইন বাবদ একটি প্রতিষ্ঠানকে দুই কিস্তিতে দেওয়া প্রায় ২০/২৫ লাখ টাকা।লিপন প্রশ্ন তোলেন এতো টাকা এভাবে দেওয়া নিয়ে।প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরীর কাছে লিপন জানতে চান এতো টাকার এই বিল কীভাবে দেওয়া হলো। জবাবে বিধায়ক বলেন, এটা আমাকে নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং শাখাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন। তখন লিপন বলেন, আপনি সরকারের প্রতিনিধি। টাকা এভাবে যেতে পারে না। জবাব আপনাকে দিতে হবে। আর এতো টাকা দেওয়ার বিষয়টি পরিষদও অবগত নয়।
জানা গেছে, নগরীর কুমারপাড়া ও ধোপাদিঘীর পারে সিটি কর্পোরেশনের দু’টি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। এই দুই কাজের নক্শা তৈরি করছে ফয়েজ বিল্ডিং কনসালট্যান্ট। জিন্দাবাজারের রাজা ম্যানশনে এই প্রতিষ্ঠানের অফিস। আর্কিটেক্ট রাজি উদ্দিন খান প্রতিষ্ঠানটির স্বত্তাধিকারি। নকশা তৈরিসহ এই দুই প্রকল্পের জন্য ২৪ লাখ টাকার চুক্তি আছে সিটি কর্পোরেশন ও ফয়েজ বিল্ডিং কনসালট্যান্ট এর মাঝে। কিন্তু এই চুক্তির বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের পরিষদ অবগত নয়। আর এই বিষয়টিই বিধায়কের কাছে তুলে ধরেছিলেন কাউন্সিলর লিপন বকস। তিনি বলছিলেন, শাহাদাৎ হোসেন সায়েম ও উম্মে ফেরদৌস নামের নিজস্ব দু’জন আর্কিটেক্ট রয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের। তারা বেতনভোগী। এই দু’জনকে দিয়ে কাজ না করিয়ে বাইরের প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করানো কতোটা যৌক্তিক। এতে করে টাকাটা বাইরে চলে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের নির্ভরশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজি উদ্দিনের প্রতিষ্ঠানকে চলতি বিল হিসেবে ৫ লাখ টাকা দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
এদিকে, বিধায়ক-লিপনের কথোপকথনের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আর তারা দু’জনের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আরিফুল হকের কানেও যায়। বাড়তি যোগ হয় মেয়ে সাইকা তাবাসসুম চৌধুরী প্রসঙ্গ। মেয়েকে না-কি ওই কাজ দিতে চেয়েছিলেন আরিফ। এ কথা শোনে তিনি ক্ষিপ্ত হন। ঘনিষ্ঠজনদের সাথে পরামর্শ করেন করণীয় নিয়ে। এক পর্যায়ে মাঠে নামেন। তাকে প্যানেল মেয়র পদ থেকে সরাতে কাউন্সিলদের অনেককে কাছেও টেনে নেন মেয়র। সন্ধি হয় তাদের মাঝে। আবার কারো কপালে ভাঁজও পড়ে। তারা এমনটি চান না। ‘সরিয়ে’ দেওয়ার প্রস্তাবকে সরাসরি নাকচ করে দেন। এই অবস্থায় সিটি কর্পোরেশন অভ্যন্তরে নানা কথা উড়ে বেড়াচ্ছে।
ইতিপূর্বে মেয়র আরিফ নিজের মেয়ে সাইকা তাবাসসুম চৌধুরীকেও সিটি কর্পোরেশনে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। সাইকা আর্কিটেকচার ফার্ম-ট্রপো’র স্বত্তাধিকারি। কিন্তু বাধ সাধে বিধি। মেয়রের পোষ্য বা পরিবারের কেউ সিটি’র কাজে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না। এজন্যই মেয়েকে আর সিটির কোনো কাজ দেওয়া হয়নি-মনোকষ্ট পুষে রেখেছেন। কিন্তু সুযোগ খুঁজছিলেন এই কষ্ট কমানোর। উপলক্ষ হয়ে উঠলেন লিপন। একাত্তরের কথাকে তিনি বলছিলেন, আমাকে চাপে রাখতেই ‘সরানো’র বিষয়টি আনা হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার বলেই এমনটি হচ্ছে। নিজেদের লোক থাকা সত্তেও বাইরের প্রতিষ্ঠানকে কাজ এবং টাকা দেওয়া মেনে নেওয়া যায় না। লিপন বলেন, আমি বিশ^াস করি কেউ আমাকে সরাতে পারবেনা। তবে তিনি যোগ করেন, মেয়রের মেয়ে সাইকা প্রসঙ্গে তিনি কোনো কথা বলেননি।
সূত্র- একাত্তরের কথা
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি