সব
রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন রোডে সাইক্লিং করার সময় গাড়ির ধাক্কায় পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্নার মৃত্যুর ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও তাকে চাপা দেয়া সেই মাইক্রোবাস ও তার চালকের সন্ধান পায়নি পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ঢাকা থেকে বের হওয়ার প্রতিটি পথে গাড়িটির সম্পর্কে জানানো হয়েছে। গাড়িটি এখনো ঢাকাতেই আছে বলে ধারাণা করছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও ঘাতক ওই মাইক্রোবাস ও তার চালককে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
শেরে বাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মিরপুর থেকে রাজারবাগ পর্যন্ত অনেকগুলো ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ওইসব ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে কালো রঙের একটি গাড়িকে শনাক্ত করেছি। তবে কোনো ভিডিওতেই গাড়িটির নম্বর প্লেটটি স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। গাড়িটির নম্বর শনাক্তের জন্য বিআরটিএ-তে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি সিআইডির ফরেনসিক টিমকেও দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে বের হওয়ার সবগুলো চেকপোস্টে গাড়িটির বিষয়ে জানানো হয়েছে। শিগগিরই ঘাতক মাইক্রোবাসসহ এর চালকককে আটক করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নিহত রেশমার বোনের স্বামী মনিরুজ্জামান জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও রেশমা নাহার রত্না স্বপ্ন দেখেছিলেন একদিন হিমালয় জয় করবেন। এজন্য তিনি পর্বতারোহণের অভিযান শুরু করেন। দেশের কেওকারাডাং চূড়া, কেনিয়ার লেনানা চূড়া, ভারতের কাঙরি পর্বত ও কাং ইয়াতসে-২ সফলভাবে আরোহণ করেন। আগামী বছর তিনি হিমালয় জয়ের অভিযান শুরু করতেন। পর্বতারোহণের পাশাপাশি ম্যারাথন দৌড়ে তিনি অংশ নিতেন। তার স্বপ্ন ছিল একদিন তিনিও হিমালয় জয় করবেন। কিন্তু মাইক্রোবাসের চাকার নিচে তার সেই স্বপ্ন পিষ্ট হয়ে গেলো।
পারিবারিক সূত্র জানায়, কেনিয়া পর্বতের লেনানা চূড়া জয়ের পর ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের লাদাখে অবস্থিত স্টক কাঙরি পর্বত এবং ৩০ আগস্ট কাং ইয়াতসে-২ পর্বতে সফলভাবে আরোহণ করেন রেশমা। দুটি পর্বতই ছয় হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পাহাড় কেওক্রাডংয়ের চূড়া স্পর্শ করার মাধ্যমে শুরু হয় রেশমার পর্বতারোহণের অভিযান। ওই বছরই মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশিতে অবস্থিত পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিইনিয়ারিংয়ে যান তিনি। কিন্তু অ্যাডভ্যান্স বেজক্যাম্পে যাওয়ার পর তার পায়ে ফ্র্যাকচার হয়। দেশে ফেরার পর সুস্থ হতে লেগে যায় দীর্ঘদিন। পরবর্তী সময়ে নিজ উদ্যোগে সফলভাবে পর্বতারোহণের মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৭ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন রোডে সাইক্লিং করার সময় পেছন থেকে আসা একটি কালো রঙয়ের মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্নার (৩৩)। মাইক্রোবাসের ধাক্কায় রেশমার সাইকেলের পিছনের চাকা বেঁকে যায়। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা পুলিশ সদস্যরা রেশমাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পর ওই বিকালে নিহত রেশমার বোনের স্বামী মনিরুজ্জামান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। রেশমা ছিলেন ধানমণ্ডির আইয়ুব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মিরপুর টোলারবাগে পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন তিনি।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি