সব
সিলেটের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের সামনে স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ ও হোস্টেল সুপার জীবন কৃষ্ণ আচার্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এই রায়ের পর বুধবার (২ জুন) সন্ধ্যায় এক প্রতিক্রিয়ায় কলেজ অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আমি ঘটনার পর থেকেই দায় নিয়েছি প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে। কিন্তু বাস্তবতা বুঝতে হবে ঘটনার সময় রাতের বেলা হওয়ায় আমি বাসায় ছিলাম। আমিতো আর জানতাম না। তবে ঘটনার পর তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর প্রত্যেকটি সুপারিশ আমি শতভাগ পূরণ করেছি। এখন রায়ের ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
রায়ের পর নিজে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে যোগাযোগ করছেন জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘অনেক মিডিয়া মহামান্য হাইকোর্টের রায়কে ভুলভাবে প্রচার করছে। আদালত আমাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কিছু মিডিয়া বলছে বরখাস্ত করা হয়েছে। যা আমাদের সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ক্ষতি করছে। আমি চাই প্রকৃত রায়টি প্রচারে আসুক। কিন্তু ভুল তথ্য যেন না আসে।’ এজন্য তিনি সব গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।
অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পর কলেজের উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা আনয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘কলেজের ও ছাত্রী নিবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমি বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। আমার প্রচেষ্টায় শিক্ষা প্রকৌশল শাখা প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে কাঁটাতারের বেড়ার বদলে উঁচু নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ করেছে। এখন শুধু কলেজের পূর্ব দিকে টিলার সাইটে দেয়াল দেয়া বাকি রয়েছে। এটিও ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন হওয়ার পর নির্মাণ করা হবে।’
বুধবার (২ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল বেঞ্চ সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নববধূকে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ ও হোস্টেল সুপার জীবন কৃষ্ণ আচার্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
রায় হাতে পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে ওই দুজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ও রেজিস্ট্রারের প্রতি এ নির্দেশ দেয়া হয়। আদালত তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা শুরু করতেও নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর আদালতের রায়ের নির্দেশনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল।
২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেটের টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজের গেটের সামনে থেকে ওই গৃহবধূকে তুলে নিয়ে যান ছাত্রলীগের কয়েকজন। ওই নারী তার স্বামীর সঙ্গে একটি গাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। পরে ওই নারীকে কলেজের ছাত্রাবাসে দলবেঁধে ধর্ষণ করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ও কলেজের ছাত্র।
সংঘব্ধ এই ধর্ষণের ঘটনায় একে একে গ্রেফতার হন ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিতি ছয়জন। ছাত্রাবাসের বাইরে থেকে সহযোগিতা করার অভিযোগে আরও দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করে র্যাব ও পুলিশ।
গ্রেফতার আটজন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি এখন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।
করোনার এই মহামারিকালে বন্ধ কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণী গৃহবধূকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ ঘটনার পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। কলেজ অধ্যক্ষ ও ছাত্রাবাসের হোস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠন দাবি তোলে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের দায় তদন্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি