রাতের আঁধারে গায়েব হচ্ছে মজুমদার টিলা

নিজস্ব প্রতিবেদক;
  • প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২:২৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় টিলা কাটার মহোৎসব। রাতের আঁধারে মজুমদার টিলার মাটি কেটে সরিয়ে ফেলছে দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যা থেকে টিলার মাটি চুরি শুরু হয়ে শেষ হয় ভোর বেলায়। কালিবাড়ি রাস্তায় পুলিশের টহল থাকার পরও থেমে নেই টিলা কাটা। মজুমদার টিলার অর্ধেকের বেশির ভাগ কেটে মাটি বিক্রি করা হয়ে গেছে। কাটা অংশে তোলা হয়েছে নতুন বাসাবাড়ি। টিনের বেড়া দিয়ে ভিতরে চলে মাটি কাটা। আবার কখন কখনও দেখা যায় বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে মাটি কেটে সাবাড় করছেন শ্রমিকেরা।

জানা গেছে‌‌‌‌‌‌, মজুমদার টিলাটি প্লট আকারে বিক্রি করা হয়েছে অনেক আগেই। তারপর থেকেই নীরবে চলছে টিলা ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ। টিলার চারপাশে গড়ে তোলা হয়েছে বাসাবাড়ি, ভাড়া দেওয়া হয়েছে দোকান কোটাও। মজুমদার টিলার মালিক সুব্রত মজমদার প্রবাসী হওয়ায় টিলার প্লট ক্রয়-বিক্রয়ের কাজটি করেছেন নগরের লামাবাজারের বাসিন্দা ও সিলেট জজ কোর্টের একজন আইনজীবী। টিলার অধিকাংশ প্লট কিনেছেন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়াও ব্যাংকার ও বেসরকারি চাকরিজীবীরা।

কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়ায়, ব্রাহ্মণশাসন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, টিলা কাটা ও মাটি পরিবহন কাজ রাতে চলে। সারারাত ধরে ট্রাক চলার শব্দ শোনা যায়। প্লট কেনা-বেচার পর টিলা কাটার বিষয়টি তদারক করছেন অজিত তালুকদার। তার নিজের নামেও রয়েছে একটি টিলা। সেটিও কেটে ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ।

স্থানীয়রা জানান, টিলার মাটি কিনতে হলে আগে থেকেই চুক্তি করতে হয়। এই মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে সিলেট নগর ও শহরতলির নতুন বাসা বাড়ি তৈরিতে। অভিযোগ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রভাবশালী চক্র টিলাটি ধ্বংস করছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের ৮নং ওয়ার্ডের কালিবাড়ি এলাকার মজুমদার টিলাটির অনেকাংশ ইতিমধ্যে কাটা হয়েছে। মজুমদার টিলার উত্তর ও দক্ষিণ দিকের মাটি কেটে ফেলা হয়েছে। মাটি কাটা শেষ হওয়ার পর দ্রুত চলছে ঘর তৈরির কাজ।

কালীবাড়ি, হাওলদারপাড়ার বাসিন্দারা জানান, যারা এ কাজটি করছেন তারা এলাকায় প্রভাবশালী। সন্ধ্যার পরপরই মাটি ভরাট ট্রাকের আনাগোনা বেড়ে যায় কালিবাড়ির রাস্তায়। এই ট্রাকগুলোর অনেকটি আবার নাম্বারপ্লেট বিহীন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট নগরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিলা কাটা হচ্ছে আখালিয়া এলাকায়। ওই এলাকার হালদারপাড়ার মজুমদার টিলা ও করেরপাড়ার একাধিক টিলা কাটছেন প্রভাবশালীরা। হালদারপাড়ার সুশান্ত মার্কেটের পেছনের প্রায় ১০ একরের ওই টিলা, পাশের আরেকটি টিলাসহ একই এলাকার ভুতু টিলাও কাটা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, টিলা কাটা বন্ধে কয়েক দিন আগেও রাতের বেলায় অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। টিলা কাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের জালালাবাদ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. শাহিন মিয়া বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি মাত্র কয়েক দিন হয়েছে। ওসি স্যার ছুটিতে রয়েছেন। টিলা কাটার বিষয়ে এখনও কিছু জানতে পারিনি। তবে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।’

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি