সব
দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে রেকর্ডময় বাজেট অধিবেশন শেষ হলো। সাধারণত বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ সময় ধরে চললেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে ২৮ দিন এবং মাত্র ৯ কার্যদিবসে শেষ হলো এই অধিবেশন। বাজেট অধিবেশনে বাজেটের ওপর ৬৫ ঘণ্টা পর্যন্ত আলোচনার রেকর্ড থাকলেও এবার বাজেট নিয়ে আলোচনা হয়েছে মাত্র সোয়া ৫ ঘণ্টা।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) ছিল বাজেট অধিবেশনের শেষ কর্মদিবস। অধিবেশন সমাপনী সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আদেশ পড়ে শোনানোর মধ্য দিয়ে সমাপ্তি টানেন ড. স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এর আগে গত ১০ জুন এই বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। পরদিন ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট সংসদে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, মাত্র ৯ কার্যদিবসের অধিবেশনে দু’টি কার্যদিবসে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জুন অধিবেশন শুরুর দিনে চলতি সংসদের সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা ও ১৪ জুন সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। অধিবেশনে একদিন বাজেট উত্থাপন হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর মাত্র দুই দিন আলোচনা হয়েছে। এছাড়া সম্পূরক বাজেটের ওপর একদিন আলোচনা হয়েছে।
এর আগে বাজেটের ওপর ৪০ থেকে ৬৫ ঘণ্টার মতো আলোচনার রেকর্ড থাকলেও এবার আলোচনা হয়েছে মাত্র ৫ ঘণ্টা ১৮ মিনিট। বাজেটের ওপর আলোচনার দিন ও ঘণ্টার হিসেবে এটি স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে কম সময়ের অধিবেশন।
সমাপনী বক্তব্যে স্পিকার বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিশেষ পরিস্থিতিতে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে এই অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং খুবই সতর্কতার সঙ্গে অধিবেশন চালানো হয়েছে। কার্যপ্রণালিবিধি অনুসরণ করে অধিবেশন পরিচালনা করা হয়েছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ও এই মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি।
মহামারিকালের বাজেট উপস্থাপনেও ছিল ভিন্নধর্মী আয়োজন। প্রতিবছর অর্থমন্ত্রীকে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে সংসদে বক্তব্য দিয়ে বাজেট উপস্থাপন করতে দেখা গেলেও এবার মাত্র ৫৭ মিনিটে বাজেট উপস্থাপন শেষ হয়। এর মধ্যে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল মাত্র ৬-৭ মিনিট। বাকি পুরো সময়টা ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাজেটের বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরা হয়। বাজেট ডক্যুমেন্ট বিতরণে প্রতিবছর পাটের ব্যাগে বেশ কয়েকটি পুস্তক সরবরাহ করা হলেও এবার কাগজের খামে কয়েকটি ছোট বই সরবরাহ করা হয়। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বইগুলো পিডিএফ আকারে আপলোড করা হয়।
প্রস্তাবিত বাজেটের উপর গত ২৩ জুন ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হয়। ওই দিন বাজেটের ওপর ১১ জন সংসদ সদস্য আড়াই ঘণ্টা আলোচনা করেন। এরপর আরও ছয় দিন বিরতি দিয়ে ২৯ জুন সংসদের বৈঠক বসে। পরদিন বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ চার জন এক ঘণ্টা ৫০ মিনিট আলোচনা করেন। এরপর পাস হয় অর্থবিল। পরদিন ৩০ জুন বাজেট পাস হয় সংসদে। প্রতিবছর বাজেট পাসের সময় অন্তত অর্ধ ডজন দাবির ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হলেও এবার মাত্র দু’টি মন্ত্রণালয়ের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়— স্বাস্থ্য ও আইন। এবার বাজেটে ৫৯টি দাবির বিপরীতে ৪২১টি ছাঁটাই প্রস্তাব এসেছিল। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির ৯ জন সদস্য এই ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো জমা দিয়েছিলেন।
সংসদ অধিবেশনের মাঝপথে মন্ত্রিসভার একজন সদস্যসহ সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন— এমন দু’জন সংসদ সদস্যের করোনাভাইরাস আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। এ খবরে অধিবেশনের শেষ দিকে তালিকাভুক্ত সব সংসদ সদস্যের করোনা পরীক্ষা করিয়ে বৈঠকে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এর আগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা পরীক্ষা করানো হয়। অধিবেশনে সামাজিক দূরত্ব মেনে সংসদ সদস্যদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। সেজন্য অধিবেশন কক্ষে উপস্থিতি ৮০ থেকে ৯০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়। অধিবেশন চলাকালে সংসদে গণমাধ্যমকর্মী ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ ছিল।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি