মাঠ নেই, লিগ নেই: জাতীয় দলে তবু সিলেটি মুখ!

মান্না চৌধুরী;
  • প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২০, ৩:৪৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৫ বছর আগে

কী এক জাদুর কাঠি পেয়েছে সিলেট! যত্ন ছাড়াই বাগান থেকে ফুটছে ফুটবলের ফুল। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও সৌরভ ছড়াচ্ছে অযত্ন, অবহেলায় বেড়ে ওঠা এসব ফুল। যেখানে ফুটবলের কোন ভিত নেই, সেখান থেকে ফুটবলার বেরিয়ে আসা আশ্চর্যজনক চিহৃকেও হার মানায়। জেলা ক্রীড়া সংস্থা আর জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন আছে, তবু সিলেটের ফুটবলে নেই এর হাহাকার! মাঠ নেই, একাডেমি নেই, লিগও যেখানে সোনার হরিণ, সেখান থেকে জাতীয় পর্যায়ের একাধিক তারকা বেরিয়ে আসছেন।

বিপলু আহমদ, মতিন মিয়া, সাদ উদ্দিন জাতীয় দলের মুখ। জেলা থেকে দৃষ্টি প্রসারিত করে বিভাগে তাকালে সংখ্যাটা বড় হয়। মতিন, বিপলু, সাদের সাথে যোগ হন মাশুক মিয়া জনি আর সুফিল আহমদ। কাতার বিশ্বকাপ, এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশের প্রাথমিক দলে আছেন এই পাঁচ ফুটবলার। ৩৬ সদস্যের প্রাথমিক দল থেকে জেমি ডে চূড়ান্ত স্কোয়াড বেছে নেবেন। বেশি এদিক সেদিক না হলে পাঁচজনেরই থাকার কথা আফগানিস্তান, ভারত আর ওমানের বিপক্ষে মাঠে নামার অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ দলে।

বিপলু, মতিনদের পেছনে সম্ভাবনার লম্বা লাইন। আরো কয়েকজন জাতীয় দলের রাস্তা খুঁজছেন। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন অনেকে। এ আসলে জাদুর কাঠি নয়তো কি? সিলেট জেলা দলের সাবেক ডিফেন্ডার আজাদুর রহমান চঞ্চল মজা করেই বললেন, ‘লিগ না হলেই ভালো, আমাদের তো ফুটবলার বের হচ্ছে!’

দেশের ফুটবলে সিলেট সবসময়ই উর্বর ভূমি। রনজিত দাস, রামা লুসাই, দিলিপ দাস, রেহান সময়ে সময়ে আলো ছড়িয়েছেন। সবশেষ ইয়ামিন মুন্না, ওয়াহেদ আহমদ, তকলিছ আহমদ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়েছেন। ওয়াহেদ পেশাদার ফুটবল ছেড়ে ইংল্যান্ডে স্থায়ী হয়েছেন। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলা মুন্না আর মোহামেডানের ফরোয়ার্ড তকলিছের জাতীয় দলে ফেরার আশা নেই বললেই চলে।

সিলেটের আসনটা খালি হওয়ার আগেই অবশ্য দেশের ফুটবলের চূড়ায় সাদ উদ্দিন, মতিন মিয়াদের জায়গা করে নেয়া। শ্রীমঙ্গলের একাডেমি থেকে উঠে আসা মাশুক মিয়া জনি এই পাঁচজনের মধ্যে সিনিয়র। তাঁর পথ ধরেই সুফিল, বিপলু, সাদ, মতিনের স্বপ্নের সীমানা ছোঁয়া। অন্য সবার থেকে মতিনের জাতীয় দলে খেলাটা বিস্ময় জাগায়। হঠাৎ করে উড়ে এসেই যেন সবকিছু নিজের করে নিলেন।

চারশ-পাঁচশ টাকায় ‘খ্যাপ খেলা’ ওসমানীনগর উপজেলার মতিন এখন দেশের ফুটবলে সুপার স্টার! বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের গেল আসরে শ্রীলংকার বিপক্ষে করা গোল তাঁকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতি। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমিতে ইনজুরিতে পড়ে ফুটবল থেকে দূরে ছিলেন প্রায় চার মাস। বসুন্ধরা কিংসের এই স্ট্রাইকার এখন পুরোপুরি ফিট।

সুরমা নদীর দক্ষিণ পারের ছেলে সাদ উদ্দিনের জীবন বদলে গেছে এক আন্তর্জাতিক ম্যাচে। গত বছরের ১৫ অক্টোবর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে কলকাতার বিখ্যাত সল্ট লেক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় ভারত-বাংলাদেশ। হাউজফুল সল্টলেকের গ্যালারিকে স্তব্ধ বানিয়ে দুর্দান্ত এক হেডে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন ২০১৬ সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের হিরো সাদ উদ্দিন। এরপর থেকেই আবাহনীর ফরোয়ার্ডকে নিয়ে দেশের ফুটবলে ইতিবাচক আলোচনা।

শেখ রাসেল থেকে বসুন্ধরা কিংসে যোগ দেয়া বিপলু আহমদ লাল-সবুজের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা। উইং ধরে প্রতিপক্ষের সীমানায় প্রায়ই আতংক ছড়ান সিলেট নগরীর বনকলাপাড়া এলাকার ছেলে বিপলু। নিজে গোল করার পাশাপাশি দারুণ সব অ্যাসিস্টে ব্যবধান গড়ে দেন তরুণ এই ফরোয়ার্ড।

সাবেক জাতীয় ফুটবলার ইকরাম রানার ছোঁয়ায় মাশুক মিয়া জনি দেশের ফুটবলের প্রিয় নাম। ইনজুরি অবশ্য প্রায়ই কেড়ে নেয় তাঁর মাঠের সঙ্গে মিতালী। তবু বারবার ইনজুরি থেকে উঠে নিজের জাত চেনান শ্রীমঙ্গলের জনি। ইকরাম রানার আরেক আবিষ্কার সুফিল আহমদও জাতীয় দল আর বসুন্ধরা কিংসের অন্যতম ভরসা। মূল একাদশে নিয়মিত জায়গা না পেলেও বদলি নেমে প্রায়ই নিজের কাজ ঠিকমতো করে নেন সুফিল।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি