ভয়ঙ্কর এক সন্ধ্যা লিডিং ইউনিভার্সিটির ছাত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক ;
  • প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২২, ১:৫৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৩ বছর আগে

হাসিখুশি এবং চঞ্চলপ্রাণ মেয়েটি বিকেল পর্যন্ত জানতোই না তার জন্য কী ভয়ঙ্কর এক সন্ধ্যা অপেক্ষা করছে। সর্বনাশা একটা ঝড় বয়ে গেছে তার উপর দিয়ে। একজন আমেরিকান প্রবাসী দলবল নিয়ে তাকে ‘অনাকাঙ্খিত’ পরিস্থিতিতে ফেলেন। এক পর্যায়ে চেতন এবং অবচেতন অবস্থার মাঝামাঝি থাকা মেয়েটি নিজেকে বাঁচাতে ‘যুদ্ধে’ জয়ী হন।

তার এই যুদ্ধ জয়ের গল্পটি নাটক-সিনেমাকেও হার মানায়। নগরীর রায়নগর দর্জিবন্দ এলাকায় বুধবার এই ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে এই মেয়েটিকে উদ্ধার এবং দু’জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। আর ওই মেয়েটিকে ওসমানী হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠায়। মেয়েটি লিডিং ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী।

ঘটনাস্থল থেকে মেয়েটির সহপাঠী এবং পুলিশের কাছ থেকে জানা গেছে, বান্ধবী সোনিয়ার সাথে নগরীর রায়নগর দর্জিবন্দ এলাকার এজি টাওয়ারের ৫ম তলার সি ইউনিটের বাসায় আসেন লিডিং ইউনিভার্সিটির ইংরেজী বিভাগের ওই শিক্ষার্থী (২১)। সোনিয়া নামের এক তরুণীর সাথে আগে একই মেসে থাকতেন ওই শিক্ষার্থী। সময় তখন বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টা। সোনিয়া ওই তরুণীকে জানান, ‘আমার চাচা-চাচী আমেরিকা থেকে এসেছেন। আমি রাতে চাচার বাসায় থাকব। তুইও চলে আয়।’

সরল বিশ্বাসে বান্ধবীর সাথে তার চাচার ফ্ল্যাট রায়নগরের দর্জিবন্দের এজি টাওয়ারে যান ওই শিক্ষার্থী। ফ্ল্যাটে তখন সোনিয়ার আমেরিকা ফেরত চাচাতো ভাই আব্দুল হাই (৩৮) ছাড়া কেউ ছিলেন না। আব্দুল হাই বাসায় ডেকে আনেন আবু আহমদ (৩৫) নামে আরেক যুবককে। আবু আহমদের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বরে।

তিনি সম্পর্কে আব্দুল হাইয়ের খালাতো ভাই। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোনিয়া এবং আবদুল হাই কৌশলে ওই তরুণীকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ান। তরুণীটি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তখন।

আব্দুল হাই ও আবু আহমদ এই সুযোগটিই কাজে লাগান। হঠাৎ কিছুটা চেতনা ফেরে ওই শিক্ষার্থীর। সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে এসেছে। এই অবস্থায় ফ্ল্যাটের একটি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন ওই শিক্ষার্থী। পেছন পেছন আসেন আব্দুল হাই, আবু আহমদ ও সোনিয়া। তারা ওই শিক্ষার্থকে দরজা খুলতে বলেন। তিনি আর দরজা খুলেননি। এই অবস্থায় তিনি ফোন করেন আদনান নামের এক সহপাঠীকে। কোনোভাবে নিজের অবস্থার কথা জানান তাকে। আদনান তাকে হোয়াটসঅ্যাপে লোকেশন শেয়ার করতে বলেন। ওই শিক্ষার্থী তখনো সংজ্ঞা হারাননি। হোয়াটসঅ্যাপে নিজের অবস্থান আদনানকে দেওয়ার পরপরই জ্ঞান হারান তিনি। অবস্থা বেগতিক দেখে সোনিয়া ও আবু আহমদকে বাসায় রেখেই পালিয়ে যান প্রবাসী আব্দুল হাই।
এদিকে, আদনান লিডিং ইউনিভার্সিটির প্রক্টর মো. রাশেদুল ইসলাম ও ইংরেজি বিভাগের প্রধান ডক্টর মো. রেজাউল করিমসহ অন্যান্য বন্ধুদেরকে বিষয়টি জানান। তারা একে একে দর্জিবন্দ এলাকায় এসে পৌঁছান। পুলিশও আসে ঘটনাস্থলে। একপর্যায়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুলে তারা ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন সোনিয়াকে তারা ওই রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। এক সময় ডাকাডাকি করলে ওই শিক্ষার্থী কোনোমতে দরজা খুলে দেন। এরপর ভেতরে প্রবেশ করেন ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠী, শিক্ষক এবং পুলিশ।নেশাজাতীয় দ্রব্যের প্রভাবে ঠিকমতো কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। সংক্ষেপে পুলিশকে জানান, পরিকল্পিতভাবে এই বাসায় এনে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন আব্দুল হাই ও আবু আহমদ। এতে সহযোগিতা করেছেন তারই বান্ধবী সোনিয়া। তখনও ভেতরেই ছিলেন সোনিয়া এবং আবু আহমদ। শিক্ষার্থীর কথামতো আটক করা হয় দুজনকে, নিয়ে আসা হয় কোতোয়ালি থানায়। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।

লিডিং ইউনিভার্সিটির প্রক্টরমো. রাশেদুল ইসলাম জানান, আমাদের শিক্ষার্থীটি বিধ্বস্ত। সে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে। মেয়েটির পরিবারের সাথে সমন্বয় করে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, মেয়েটির সাহসিকতার প্রশংসা করতেই হচ্ছে। সাধারণত এ ধরণের ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্মানের ভয়ে কোনো ধরণের প্রতিবাদ এবং আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়না। কিন্তু, মেয়েদের উচিৎ এ ধরণের ঘটনা ঘটলে আত্মরক্ষা এবং পুলিশকে জানানো। যেমনটা এই তরুণী করেছেন। আমরা তাকে ওসিসিতে পাঠিয়েছি। আব্দুল হাইকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি