বৃদ্ধ পিতামাতার ঠাঁই হয়নি শামছুদ্দিন হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র নার্সের ঘরে

নিজস্ব প্রতিবেদক;
  • প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১:২৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ৪ বছর আগে

মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চাকুরী করেন সিলেট শহীদ শামছুদ্দিনহাসপাতালে সিনিয়র নার্স হিসেবে। তার গ্রামের বাড়ি গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকী (কামার গাঁও) গ্রামে। পিতা হাজী আব্দুল ওয়াহিদ ও মাতা হাজী আলিমা খাতুন অবসরপ্রাপ্ত পরিবার পরিকল্পনা সহকারী। হাজী আব্দুল ওয়াহিদ ও হাজী আলিমা খাতুন ২ ছেলে ও ২ কন্যা সন্তানের জনক। এই দম্পতির বড় ছেলে মোহাম্মদ লোকমান তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও তোয়াকুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। অত্যন্ত নম্র ভদ্র ও সামাজিক মানুষ হিসেবে গোয়াইনঘাট উপজেলায় মোহাম্মদ লোকমানের আলাদা পরিচিতি রয়েছে। সা ম্প্রতিক সময়ে হাজী আব্দুল ওয়াহিদ ও হাজী আলিমা দম্পতি তাদের মালিকানাধীন সিলেট মহানগরীর রাগীব – রাবেয়া মেডিকেল সংলগ্ন করের পাড়া বাসায় তাদের ছোট ছেলে মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়ার হাতে লাঞ্ছিত হন। ২৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) সকালে গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজারে আব্দুল ওয়াহিদ ও আলিমা দম্পতির বাসায় উপস্থিত হন সিলেট ভিউ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক। সরেজমিন পরিদর্শন কালে উপস্থিত ছিলেন, তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন, ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন, মাস্টার নুরুল হক,উপজেলা যুবলীগ নেতা তাহির আলী,তাজ উদ্দিন, উপজেলা ছাত্র লীগের সাবেক সভাপতি মিছবাহ উদ্দিনসহ তোয়াকুল ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক প্রবীন মুরব্বিয়ান ও যুবসমাজ। উপস্থিত লোকজনের সামনে হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করেন ওয়াহিদ – আলিমা দম্পতি।

কোন ভাবেই তাদের কান্না থামানো যাচ্ছিলনা। তাদের কান্নাকাটির কারণে উপস্থিত সকলের চোখেই পানি চলে আসে। সকলেই কিছুক্ষন ভীষণ নিরবতায় ছিলেন। এ সময়ে ঘটনাস্থলে অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সকলের অনুরোধে এ দম্পতি কান্না থামিয়ে বলেন, আমাদের ছেলে মোহাম্মদ লোকমান ফেরেস্তার মতো। আমরা বৃদ্ধ পিতামাতাকে আমাদের ছোট ছেলে গোলাম কিবরিয়া যতই লাঞ্ছিত ও অপমান করে আমাদের বাসা থেকে তাড়িয়ে দিলেও আমরা ছোট ছেলে হিসেবে গোলাম কিবরিয়া সম্পর্কে কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের বড় ছেলে ফেরেস্তার মতো মানুষ মোহাম্মদ লোকমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ, মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য বিভিন্ন স্থানে রটিয়ে বেড়াচ্ছে গোলাম কিবরিয়া। গোলাম কিবরিয়ার কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত বক্তব্য শোনে আমরা বরদাশত করতে না পেরে আজ গণমাধ্যম কর্মী ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের জড়ো করেছি ছোট ছেলে গোলাম কিবরিয়ার আসল চরিত্র উন্মোচনের জন্য। সম্মানীত সাংবাদিক বন্ধুগন ও এলাকার গন্যামান্য ব্যক্তিবর্গ ভাইয়েরা আপনারা জেনে আশ্চর্য হবেন যে, অনেক কষ্ট করে আমার বড় ছেলে মোহাম্মদ লোকমান সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছোট ছেলে গোলাম কিবরিয়াকে নার্স হিসেবে চাকুরি প্রদান করেছে। গোলাম কিবরিয়ার চাকুরী হওয়ার পর আমাদেরকে বুলিয়ে করের পাড়ায় আমাদের বর্তমান বাসাটি ক্রয় করার জন্য বড় ছেলে লোকমানে অগোচরে তোয়াকুল মৌজায় ৫ বিঘা জমি বিক্রি করতে বাধ্য করে। ছোট ছেলে কিবরিয়ার বিয়ের পান-চিনি অনুষ্ঠানে তার শশুর বাড়ি মৌলভীবাজার আমাদের যেতে বলে। ওইদিন সেখানে উপস্থিত হয়ে দেখতে পাই পান-চিনি অনুষ্ঠান নয় বিয়ে। কিবরিয়ার মা-বাবা আরো জানান,বিয়ের পর থেকে কিবরিয়া ঈদ বা ধর্মীয় নানা উৎসবসহ কোনদিনই বউকে নিয়ে পিতার বসতবাড়িতে আসেননি। এমনকি কিবরিয়া গরু কোরবানিও করেন অন্য গ্রামে। মা-বাবা ও ভাইবোনদের মধ্যে কেউ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসা ব্যয়তো দূরের কথা এক নজর দেখতেও আসেননি কিবরিয়া। পেনশনের টাকায় ওয়াহিদ ও আলিমা দম্পতি হজ্বে যাওয়ার কথা শোনে কৌশলে মা-বাবার নিকট থেকে ১ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন কিবরিয়া। বাবা-মা হজ্বে যাওয়া – আসার সময়ে কিবরিয়াকে এক নজর দেখার আকুতি করলেও দেখতে আসেনি তিনি। সর্বশেষ তোয়াকুল বাজারে হাজী আব্দুল ওয়াহিদের মালিকানাধীন ৬ শতক জমি তার দুই ছেলে মোহাম্মদ লোকমান ও মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়ার নিকট পৃথক দলিলের মাধ্যমে রেজিস্ট্রারি করেদেন আব্দুল ওয়াহিদ। দলিল সম্পাদনের সময় গোয়াইনঘাট সাবরেজিস্টার অফিসে বড় ছেলে মোহাম্মদ লোকমান উপস্থিত ছিলেননা কিন্তু কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন।

দলিল অনুযায়ী ওই ৬ শতক জমির পশ্চিমাংশে মোহাম্মদ লোকমান এবং পূর্বাংশে গোলাম কিবরিয়া মালিক রয়েছেন। উক্ত জমির পশ্চিমাংশ তুলনামূলক কিছুটা উন্নত হওয়ায় কিবরিয়া তার বাসায় যাওয়ার পর থেকে আমাদের বড় ছেলে মোহাম্মদ লোকমান সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত বক্তব্য প্রদান করছে। খবর পেয়ে আমরা পিতামাতা কিবরিয়ার বাসায় উপস্থিত হই এবং কিবরিয়াকে বলি সরকারি চাকরি পাবার পর থেকে আমাদের খাওয়া-দাওয়া বা চিকিৎসা বাবদ কোন দিন কি তুমি একটি টাকা দিয়েছ। তুমি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমাদের বাসায় আছো আমাদের ভরণপোষণ দূরের কথা কোন দিন কি ভাড়া বাবদ একটি টাকা দিয়েছ। আমাদের বড় ছেলে ভরণপোষণসহ যাবতীয় চিকিযাবতীয় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। তোয়াকুল বাজারের সবকটি দোকানের ভাড়া আমরা জীবিত থাকাবস্থায় আমরাই মালিক বলে তুমি ও লোকমান স্টাম্পে স্বাক্ষর করেছো। এখন আমার বড় ছেলে সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও বিতর্কিত মন্তব্য না করে আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে পড়। এসব কথা গুলো বলার পর আমরা পিতামাতাকে কিবরিয়া অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ গালিগালাজ করে আমাদের করের পাড়ার বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ লোকমান বলেন, আমার পিতামাতা কিবরিয়ার বিষয়ে যা বলেছেন তা সত্য। উনারা যে সিদ্ধান্ত নিবেন সে সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। এব্যপারে গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমার মা-বাবার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট উদ্দেশ্য প্রণোদীত। প্রকৃত পক্ষে আমি বাবা-মাকে সর্বোচ্চ সম্মান, ভরণপোষণ ও চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। মা-বাবা বড় ভাইকে ১০ বিঘা জমি অতিরিক্ত দিয়েছেন। মায়ের পেনশনের সমুদয় টাকা ও তোয়াকুল বাজারে উনাকে ৩.২০ শতক এবং আমাকে ২.৮০শক জমি দিয়েছেন। কিবরিয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এ তোয়াকুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ মানহানি মামলার হুমকি দিয়েছে।

শেয়ার করুন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি