সব
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সিলেটের বিশ্বনাথের দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের ‘বড়বিলে’ ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব পালিত হয়েছে। প্রায় তিন’শ বছর আগে থেকে গ্রামের পূর্ব পুরুষের নির্ধারিত বাংলা বছরের পহেলা মাঘ এই পলো বাওয়া উৎসব উদযাপন করা হয়।
তবে এবারে পহেলা মাঘ শুক্রবার থাকার কারণে শনিবার ২রা মাঘ এ ‘পলো বাওয়া’ উৎসব উদযাপন করেন এলাকাবাসী। এ উৎসবে গ্রামের প্রবাসীরা অংশ গ্রহণ করেন। এবারে কোভিড-১৯ থাকার কারণে প্রবাসীরা এ উৎসবে অংশ নিতে পারেন নি। যে ১/২জন এসেছেন তা লকডাউন হওয়ার আগেই দেশে এসেছেন।
করোনা ভাইসরাসের আক্রমন উপেক্ষা করে মানুষ তাদের ঐতিহ্য রক্ষায় ‘পলো বাওয়া’ উৎসবে মেতে উঠেন তারা। স্থানীয় সাংবাদিক ছাড়াও এ ‘পলো বাওয়া’ উৎসব এক নজর দেখতে ঢাকা-সিলেট থেকে প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ফটো সাংবাদিকরা ড্রোন ও ক্যামেরা নিয়ে হাজির হন।
দেখা গেছে, উৎসবের দিন ভোর থেকে মাছ ধরতে পলো আর বিভিন্ন ধরণের জাল নিয়ে লোকজন বিলের পাড়ে সমবেত হতে থাকেন। ওই এলাকার মানুষের পাশাপাশি পলো বাওয়া উৎসব উদযাপনে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার থেকে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ সেখানে গিয়ে ভিড় জমান এবং পলো বাওয়া দেখে তাহা উপভোগ করেন। প্রতি বছর এ ঐতিহ্য পালনে প্রবাসীরাও দেশে আসলেও এবার করোনার কারণে তারা অংশ নিতে পারেন নি।
সময় যখন ঠিক দুপুর ১২টার সাথে সাথে ঘোষণা এলে একসাথে পলো আর জাল নিয়ে বিলে ঝাপিয়ে পড়েন আয়োজনকারী গ্রামবাসীর লোকজন। শনিবারও শুরু হয় ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ওই পলো বাওয়ার উৎসব। গোয়াহরীর দক্ষিণের ‘বড়বিলে’ পলো বাওয়া উদযাপনে মেতে ওঠেন এলাকাবাসী।
এসময় অনেকের পলো এবং জালে ধরা পড়ে বড় বড় মাছ। যেমন- রুই, কাতলা, মৃগেল, কার্পো, ঘনিয়া, গজার-শোল, বোয়াল, ব্রিগেড, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। মাছ ধরা দেখতে বিলের পাড়ে শিশু থেকে শুরু করে নারী পুরুষ’সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ সমবেত হতে দেখা যায়। তবে নতুনদের মধ্যে মাছ ধরেছেন বেশি।
এবার নতুন যারা মাছ ধরতে এসেছেন তাদের মধ্যে এনামুল হক সম্রাট (২৫) ও নাইম (১৮) জানান, জীবনর পয়লা পলো বাইয়া কার্পো-ব্রিগেড-গোয়াল মাছ দরছি। আমরা খুবই খুশি। তাছাড়াও গোয়াহরী গ্রামের আপ্তাব উদ্দিন (২৫), নাহিদ আহমদ (২৩), কাউছার (২০), রাকন মিয়া(২০)। প্রত্যেকে ২/৩ করে মাছ ধরেছেন।
পলো বাওয়া দেখতে আসা সিলেটেরর বিভিন্ন উপজেলার থেকে আগত উৎসুক লোকজনের মধ্যে আমজাদ আলী, মনাই মিয়া, তাহিদুর রহমান হাজেরা বেগম (২৭), ঢাকা সাভার থেকে আগত ফারজানা আক্তার হেনাসহ আরো অনেকে বলেন, হাজার ব্যবস্তার মাঝেও তারা প্রতিবছর এই উৎসব দেখতে আসেন। তাদের কাছে ওই মাছ ধরা আলাদা একটি আনন্দ উপহার দেয় বলে তারা জানান।
গোয়াহরী গ্রামের আব্দুল তাহিদ (৮০) জানান, তাদের বাপ-দাদার আমল থেকে এ পলো বাওয়া’ উৎসব পালন করেন। আরশ আলী (৬০) ও আমির আলী (৭০), সাজ্জাদ আলী (৬৫) তারা বলেন পঞ্চাশ বছর যাবৎ ‘বড়বিলে’ পলো দিয়ে মাছ ধরেন। আজ তারা কার্পো, মৃগেল, বোয়ালসহ বিভিন্ন জাতের মাছও শিকার করেন।
দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার গোলাম হোসেন জানান, আমাদের গ্রামের পূর্ব-পুরুষদের নির্ধারিত সময় পহেলা মাঘ ‘বড়বিলে’ পলো বাওয়া’ হয়। যদি ওই তারিখে শুক্রবার, কোন মামলার তারিখ অথবা কোন বিশেষ সমস্যা থাকে ২রা মাঘ পলো বাওয়া উৎসব পালন করা হবে। এবারে শুক্রবার থাকায় শনিবার পলো বাওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বিশ্বনাথের স্থানীয় সাংবাদিকদের পাশাপাশি ঢাকা ও সিলেটের অনেক সাংবাদিকরা সেখানে ড্রোন ক্যামেরা হাতে নিয়ে ছবি তুলতে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা থেকে আগত সাংবাদিকরা হলেন-কালের কন্ঠের ফটো সাংবাদিক শেখ হাসান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সাংবাদিক রোহেত রাজিব, নিউ এএইজ’র সাংবাদিক সনি রামানি, সারাবাংলা অনলাইনের হাবিবুর রহমান, ইউএনবি’র সাংবাদিক রামোন ও ডেইলি সান’র ফটো সাংবাদিক রিয়াদ সুমন, সিলেটের সমকালের ফটো সাংবাদিক ইউসুফ আলী, ডেইলি স্টারের ফটো সাংবাদিক শেখ নাসির, প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক আনিস মাহমুদ, বাংলা নিউজ ২৪.কমের মাহমুদ হোসেন, চ্যানেল আই’র সাদিকুর রহমান সাকি, ফটো সাংবাদিক শাহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম সবুজ, অসমিত অভি, মামুন হোসেন ও দীপু সিদ্দিকী।
পোর্টাল বাস্তবায়নে : বিডি আইটি ফ্যাক্টরি